নতুন আইফোনে নতুন কী কী থাকছে?
‘ওয়ান মোর থিং’। হ্যাট থেকে নতুন কিছু বের করে আনার আগে যেন মন্ত্র পড়ছেন জাদুকর। স্টিভ জবস এই বাক্যটিকে কিংবদন্তির জায়গায় নিয়ে গেছেন। যেন হুট করে মনে পড়ল এমন ভঙ্গিতে বলা, ‘ওয়ান মোর থিং’। অ্যাপলের নতুন উদ্ভাবন ঘোষণার এটাই ট্যাগ লাইন। কাল টিম কুক ঠিক এই বাক্য ব্যবহার করে জানিয়ে দিলেন, কী কী নতুন উদ্ভাবন থাকছে নতুন আইফোনে। পরে অ্যাপলের বিপণন বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিল শিলারও নতুন আইফোনের কিছু ফিচার নিয়ে কথা বলেন।
ফেস আইডি
এখনকার আইফোনে আনলক করার সুবিধা থাকে আঙুলের ছাপ দিয়ে। গোপন পাসকোড ছাড়াও আঙুলের ছাপ দিয়ে ফোন খোলা যায়। যেটি বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন ব্যবহারকারীরা। এবার আইফোনে আসছে ফেস আইডি। আঙুলের ছাপ দিতে হবে না, আইফোন ক্যামেরা দিয়ে ব্যবহারকারীকে চিনে নেবে। খুলে যাবে ফোন। ফলে ফোন হারালে বা ছিনতাই হলেও গোপনীয়তা রক্ষা করা যাবে।
আঙুলের ছাপ বদলায় না, চেহারা তো বদলায়। তাহলে? অসুবিধা নেই। আইফোন প্রতিদিন তার ব্যবহারকারীর চেহারার পরিবর্তন খেয়াল রাখবে। ফলে আপনার দাঁড়ি গজাল, চেহারায় কোনো পরিবর্ত এল, সমস্যা নেই। আইফোন ঠিক চিনে নেবে। দিনের পাশাপাশি রাতেও সে ব্যবহারকারীকে চিনতে পারবে। মুখের সামনে ফোন ধরলেই আনলক হয়ে যাবে।
অ্যাপল জানিয়েছে, আঙুলের ছাপ সুরক্ষাব্যবস্থা একেবারেই নিখুঁত নয়। দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে আঙুলের ছাপ দিতে থাকলে প্রতি ৫০ হাজার জনের মধ্যে একজনের ছাপ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফেস আইডিতে যেটি প্রতি ১০ লাখে একজন।
হোম বাটন থাকছে না
আইফোনের আরেকটি আইকনিক পরিবর্তন আসছে। তার গোলাকার হোমবাটন। স্বপ্নদ্রষ্টা স্টিভ জবস আইফোনকে বাটনমুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। টাচ মোবাইলের ধারণা জনপ্রিয় হয় সেখান থেকেই। মোবাইল ফোনে কিপ্যাড হয়ে যায় গ্রাফিক্যাল। তবু হোম বাটনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। সর্বশেষ আইফোনেও আছে। কিন্তু এবার হোম বাটন তুলে দিচ্ছে অ্যাপল। এখন থেকে ফোনের নিজের অংশ থেকে ওপরের দিকে আঙুল নিয়ে গেলে ফোন হোমে চলে আসবে। অবশ্যই তা করতে হবে আনলক অবস্থায়। যেকোনো মেন্যু থেকে আবার হোমে ফিরতে নিচ থেকে সোয়াইপ করার পদ্ধতিটি ব্যবহার করলেই হবে।
প্রান্তজুড়ে পর্দা
হোম বাটন সরিয়ে ফেলার ফলে আইফোন এখন প্রান্ত থেকে প্রান্ত পর্যন্ত ডিসপ্লে রাখতে পারছে। আইফোনের পর্দা পুরো মোবাইলজুড়ে থাকছে। আইফোন হবে পানি নিরোধক। বড় পর্দার কারণে এখন ফোনে ভিডিও দেখা আরও উপভোগ্য হবে ব্যবহারকারীদের জন্য।
ওলেড প্রযুক্তি
ব্যাটারির স্থায়িত্বের কথা ভেবে ফোন ব্যবহার না করা অবস্থায় সেটি স্লিপ মুডে থাকে বা ঘুমিয়ে থাকে। আইফোনকে এখন জাগাতে হলে হোম বাটন বা পাশের লক বাটন চাপতে হয়। কিন্তু এখন আইফোন স্লিপ মুডে থাকা অবস্থায় অন্ধকার ডিসপ্লেতে আঙুল রাখলেই তা জেগে উঠবে। ডেস্কে, বিছানায় পড়ে থাকা অবস্থায় ফোন স্লিপ মুডে থাকবে। আপনি যে-ই না সেটি হাতে তুলে নেবেন, জেগে উঠবে। ডিসপ্লেতে আলো জ্বলে উঠবে। অর্থাৎ ফোনকে ঘুম থেকে জাগানো আর আনলক করার কাজটি এখন পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।
তারহীন প্রযুক্তি
ইয়ারফোন আর চার্জারের তার দুটিই ব্যবহারকারীদের জন্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে যায়। ইয়ারফোনের তারের প্যাঁচ তো রীতিমতো বিরক্তিকর। আবার কখনো কখনো চার্জারের কেব্ল খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলছে এবার। তার লাগিয়ে চার্জ দিতে হবে না, গানও শুনতে জ্যাকপিন ঢোকাতে হবে না। দুটিই এখন তারহীন প্রযুক্তিতে চলবে। চার্জারের প্যাডে ফোন রেখে দিলে চার্জ হতে শুরু করবে। কানে শুধু ইয়ারফোনের মাথা দুটি ঢোকালেই হবে।
প্রাণবন্ত ইমোজি
ইমোজিকে প্রাণ দিচ্ছে আইফোন। আপনি যেভাবে কথা বলবেন, আপনার নির্দিষ্ট করা ইমোজিও একই ভঙ্গিতে কথা বলবে। শুধু তা-ই নয়, আপনি রাগ হলে, ইমোজিও রাগ হবে। খুশি হলে খুশি। ইমোজি এখন শুধু স্থির আইকন থাকছে না। বেশ মজার হয়ে উঠছে।
ক্যামেরা ও ফটোগ্রাফি
আইফোন বিশেষভাবে জনপ্রিয় এর ক্যামেরা ও আলোকচিত্র প্রযুক্তির কারণে। এখন এটি আরও উন্নত ও আধুনিক হয়ে উঠছে। বিশেষ সুবিধার মধ্যে থাকছে আলো নিয়ন্ত্রণ। একদম স্টুডিও লাইটিংয়ের সব সুবিধা থাকবে আইফোনে। ফ্রন্ট ও ব্যাক ক্যামেরা দুটিতেই থাকছে পোর্ট্রেট সুবিধা। পেছনের ডুয়াল ক্যামেরা হয়ে উঠছে অনেক বেশি আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয়। ছবি তোলার আগে অবজেক্টের মোশন ও অবস্থা বুঝে আইফোন ছবি তুলবে। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা পেশাদার আলোকচিত্রীদের মতো ছবি তুলতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, ক্যামেরায় ব্যবহার করা হচ্ছে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি। বন্ধুদের আড্ডার ছবি বা ভিডিও তোলার সময় ওর মধ্যেই আপনি নামিয়ে দিতে পারবেন ধম ধম শব্দ করে হেঁটে চলা ডাইনোসর! এসব প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের নির্মাতা করে তুলতেও সাহায্য করবে।
শেষ কথা
মূলত এগুলোই হলো আইফোনের নতুন প্রধান সুবিধা। বিতর্ক হচ্ছে, এর অনেক সুবিধাই এর আগে আইফোনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীরা দিয়ে থাকছে। আগে সবাই আইফোনকে অনুসরণ করত। আইফোন মানেই নতুন চমকে দেওয়া কিছু, সেই ওয়ান মোর থিং। এবার সেটি কোথায়? তবে সব মিলিয়ে আইফোন-ভক্তদের জন্য অপেক্ষাটা একেবারেই বৃথা যাবে না।