শনির বুকে ঝাঁপ

শনির উত্তর গোলার্ধে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য তৈরি মহাকাশযান ক্যাসিনি। ছবি: নাসা
শনির উত্তর গোলার্ধে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য তৈরি মহাকাশযান ক্যাসিনি। ছবি: নাসা

শনির বায়ুমণ্ডলে ঝাঁপ দিয়ে গ্রহাণুর মতো টুকরো হয়ে হারিয়ে গেল মহাকাশযান ক্যাসিনি। আজ শুক্রবার একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৃথিবীতে পাঠিয়ে গেছে এটি। ক্যাসিনি মহাকাশযান ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানেভেরাল থেকে উড়ে গিয়েছিল। ২০০৪ সালে এটি শনি গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। এরপর সফলভাবে ১৩ বছর শনি ও এর প্রাকৃতিক উপগ্রহ তথা চাঁদগুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছে ক্যাসিনি।

বিবিসি অনলাইনের এক খবরে জানানো হয়, শনি গ্রহে মহাকাশ অভিযানের দুর্দান্ত পরিসমাপ্তি ঘটেছে মহাকাশযান ক্যাসিনির। একে গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ঝাঁপ দেওয়ার ও স্বয়ংক্রিয় ধ্বংস হওয়ার নির্দেশ (কমান্ড) দেন এর নিয়ন্ত্রকেরা। ভেঙে পড়ার আগে এটি প্রায় এক মিনিট পর্যন্ত টিকে ছিল। ক্যাসিনির জ্বালানি শেষ হওয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার গবেষকেরা একে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে শনি ও এর চাঁদের মধ্য ছাড়তে রাজি ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্যাসাডেনাতে নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষকেরা ক্যাসিনির মিশন শেষ করার এ কমান্ড দেন।

ঝাঁপ দেওয়ার আগে দুর্দান্ত ছবি পাঠিয়েছে ক্যাসিনি। ঝাঁপ দেওয়ার সময় ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। ছবি: নাসা
ঝাঁপ দেওয়ার আগে দুর্দান্ত ছবি পাঠিয়েছে ক্যাসিনি। ঝাঁপ দেওয়ার সময় ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। ছবি: নাসা

নাসার গবেষক আর্ল মেইজ সহকর্মী নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবাইকে অভিনন্দন। এটি অবিশ্বাস্য এক মিশন, অবিশ্বাস্য মহাকাশযান আর অবিশ্বাস্য একটি টিম। আমি মিশনের সমাপ্তি ঘোষণা করছি।’ তাঁর বিবৃতির পর করতালি আর আলিঙ্গনের মাধ্যমে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন মিশনের সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা।

শনির বলয়গুলোকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ এর আগে পায়নি কোনো মহাকাশযান। এতে কোনো মহাকাশযানই এর আগে এত কাছ থেকে শনির বলয়গুলোর ছবি তোলার সুযোগ পায়নি। তাই শনির বলয়ে ক্যাসিনির ঐতিহাসিক মরণ-ঝাঁপ দেখার জন্য নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গবেষকেরা অপেক্ষায় ছিলেন। শনির বলয় সম্পর্কে নতুন নতুন ছবি আর চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পাওয়ার আশা করছেন গবেষকেরা।
নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনাথান লুনাইন বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগছে, কিন্তু আমরা জানতাম এটি ঘটবে। তার যা কাজ সে তা করেছে। আমি বাজি ধরতে পারি, শনির বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে দারুণ তথ্য সে পাঠিয়েছে।’

শনির ওপরে মেঘ। ক্যাসিনির তোলা। ছবি: নাসা
শনির ওপরে মেঘ। ক্যাসিনির তোলা। ছবি: নাসা

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) বানানো ‘ল্যান্ডার’ মহাকাশযান ‘হাইগেন্স’-এর হাত ধরে নাসার ‘অরবিটার’ মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি’ শনির বহু দূরের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছিল ১৩ বছর আগে। ২০০৫ সালের ১৪ জানুয়ারি নিজের শরীরের অংশ ছিঁড়ে ‘ল্যান্ডার’ মহাকাশযান ‘হাইগেন্স’কে শনির চাঁদ ‘টাইটান’-এ নামিয়ে দিয়েছিল ‘ক্যাসিনি’। ২০০৪ সালের পয়লা জুলাই। ‘ক্যাসিনি-হাইগেন্স’-এর আগে আরও তিন-তিনটি মহাকাশযান শনির পাশ কাটিয়ে ঘুরে ও বেরিয়ে গিয়েছিল। পৃথিবী থেকে ‘ক্যাসিনি-হাইগেন্স’ রওনা দিয়েছিল সেই ১৯৯৭ সালে। শুক্র আর বৃহস্পতির পাশ কাটিয়ে সাত বছর সময় নিয়ে শনির কক্ষপথে ‘ক্যাসিনি-হাইগেন্স’ পৌঁছেছিল ২০০৪ সালে। করেছে অনেক নতুন নতুন আবিষ্কার। হদিস পেয়েছে শনির চাঁদ ‘এনসেলাডাস’-এর অন্তরে-অন্দরে গভীর সমুদ্রের। খুঁজে পেয়েছে শনির অন্য চাঁদ ‘টাইটান’-এর অন্দরে লুকিয়ে থাকা তরল মিথেনে ভরা সমুদ্রেরও। অভিযাত্রায় শনির অন্তত ছয়টি চাঁদ আবিষ্কার করে ক্যাসিনি।

ক্যাসিনির তোলা শনির শেষ দৃশ্য। ছবি: নাসা
ক্যাসিনির তোলা শনির শেষ দৃশ্য। ছবি: নাসা

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইসা এবং ইতালির মহাকাশ সংস্থার বিজ্ঞানীরা একযোগে শনি গ্রহের রহস্য উন্মোচন করার জন্য ক্যাসিনি মিশন পরিচালনা করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সালের জুলাই মাসে শনি ও এর ৬২টি চাঁদ পর্যবেক্ষণ শুরু করার পর থেকে এটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ছবি, ৬৩৫ গিগাবাইট তথ্য পাঠিয়েছে।