তাদের চোখে কেমন দেখায় এই পৃথিবী?

বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর রূপ-রং-রস পুনরায় উপভোগ করতে মৃত্যুর পর শঙ্খচিল কিংবা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশ। কবি এই পৃথিবীকে ফিরে দেখতে চেয়েছিলেন ঘুঘুর চোখে, কিংবা নিতান্তই সাদাসিধে ভোরের কাক হয়ে।

আচ্ছা, কখনো ভেবেছেন, আমরা যেভাবে পৃথিবীটাকে দেখতে পাই, যে রঙে, যে ধরনে, প্রাণিজগতের বাকিরাও কি একইভাবে দেখে? না, তাদের দেখার চোখ মানুষের থেকে একেবারেই আলাদা!

কে জানে হয়তো কবি এ কারণেই পৃথিবীর স্বাদ নিতে চেয়েছিলেন অন্য চোখে। সুজলা-সুফলা এই পৃথিবী প্রাণিজগতের চোখে কেমন, আসুন তা জেনে নিই—

মাছির চোখে পৃথিবী খানিকটা শ্লথগতিতে ঘোরে। ছবি: ব্রাইট সাইড
মাছির চোখে পৃথিবী খানিকটা শ্লথগতিতে ঘোরে। ছবি: ব্রাইট সাইড


মাছির চোখে
বহুমুখী দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন প্রাণী হলো মাছি। হাজারের ওপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখ একই সময়ে একসঙ্গে কাজ করে একটা দৃশ্যপট তৈরি করে, আর মাছি সেটাই দেখতে পায়। তারা অতি বেগুনি রশ্মিও দেখতে পায়, যদিও মানুষের তুলনায় মাছির চোখে পৃথিবী খানিকটা শ্লথগতিতে ঘোরে।

কুকুরের দৃষ্টিশক্তি বেশ ক্ষীণ। এ কারণে পৃথিবী তাদের চোখে ধূসর। ছবি: ব্রাইট সাইড
কুকুরের দৃষ্টিশক্তি বেশ ক্ষীণ। এ কারণে পৃথিবী তাদের চোখে ধূসর। ছবি: ব্রাইট সাইড


কুকুরের চোখে
দিনের আলোয় কুকুরের দৃষ্টি ক্ষমতা অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা অনেক রঙের কাছেই অসহায়, সেসব রং তাদের চোখে ধরা দেয় না। পৃথিবী তাদের চোখে দৃশ্যমান হয় খানিকটা কুয়াশায় মুড়িয়ে কিছুটা ধূসর হয়ে! অন্যদিকে, কুকুর কিন্তু রাতে বেশ ভালো দেখতে পায়। এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ানো আর আশপাশের পরিবেশ বোঝার ক্ষমতা তখন কিন্তু বেশ প্রবল।

মাছেদের চোখের রং বেশি। তারা সবকিছুই অবাক দৃষ্টিতে দেখে থাকে। ছবি: ব্রাইট সাইড
মাছেদের চোখের রং বেশি। তারা সবকিছুই অবাক দৃষ্টিতে দেখে থাকে। ছবি: ব্রাইট সাইড


মাছের চোখে
মাছেদের চোখে রং আবার একটু বেশি। যেখানে মানুষই অতিবেগুনি রশ্মিতে দেখতে পায় না, সেখানে কিছু কিছু মাছ তাও দেখতে পায়! মাছেদের চোখে পৃথিবী একটু কাছাকাছি এসে প্রসারিত হয়ে ধরা দেয়, যেমনটা আতশি কাচের মধ্য দিয়ে আমরা দেখি! আর এ কারণেই বোধ হয় মাছ সারাক্ষণ অবাক চোখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটোছুটি করে।

পাখিদের দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ। তারা রঙের ছায়াও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড
পাখিদের দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ। তারা রঙের ছায়াও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড


পাখির চোখ
জীবনানন্দ পাখি হতে চেয়েছেন বারবার। তিনি হয়তো জানতেন, পাখিদের দৃষ্টি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ! অতিবেগুনি রশ্মিতে পাখিরা দেখতে পায়, আর দিনের আলোয় দেখতে পায় রঙের ছায়াও! নিশাচর পাখিরা রাতের অন্ধকারে বেশ স্পষ্ট দেখতে পায়, যেটা আমরা পারি না।

সাপের দৃষ্টিশক্তি কুকুরে চেয়েও নিম্নমানের হলেও তারাও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড
সাপের দৃষ্টিশক্তি কুকুরে চেয়েও নিম্নমানের হলেও তারাও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড


সাপের চোখে
অনেকের ধারণা, সাপ চোখে দেখে না। ধারণাটি ভুল, হ্যাঁ, এটা সত্যি যে সাধারণত সাপের দৃষ্টিশক্তি কুকুরের চেয়েও নিম্নমানের, তবে তারা দেখতে পায় অবশ্যই। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, রাতের বেলা তারা যেকোনো আধুনিক অবলোহিত রশ্মির প্রযুক্তির চেয়েও ১০ গুণ বেশি প্রখরতা দিয়ে তাপীয় বিকিরণ দেখতে পায়। সাপকে যন্ত্রণা না করলে সাপও কাউকে যন্ত্রণা করে না। তবে তার চোখে যখনই আশপাশে কোনো কিছুর চলাফেরা শুরু হয়, তাতে সে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়। তখন কপাল মন্দ থাকলে কামড় খাওয়াই স্বাভাবিক!

ইঁদুরের চোখে সমস্ত পৃথিবী ঘোলাটে। ছবি: ব্রাইট সাইড
ইঁদুরের চোখে সমস্ত পৃথিবী ঘোলাটে। ছবি: ব্রাইট সাইড


ইঁদুরের চোখে
‘টম অ্যান্ড জেরি’ কার্টুনের ইঁদুরটি যতই স্পষ্ট দেখতে পাক না কেন, বাস্তবতায় কিন্তু কোনো ইঁদুরই স্পষ্ট দেখতে পায় না। তাদের চোখে সমস্ত বিশ্ব একটা ঘোলাটে পর্দার আড়ালে, নীলচে সবুজ হয়ে ধরা দেয় তাদের চোখে। পৃথিবী তাদের কাছে খুব শ্লথ। এতেই তারা অস্থির হয়ে দ্রুতগতিতে দৌড়ায়। আর যদি আমাদের মতো স্বাভাবিক পৃথিবী দেখতে পেত, তবে ভাবুন! আর একটা অদ্ভুত কাণ্ড, তাদের দুটি চোখের মাঝে কোনো সখ্য নেই, দুটি আলাদা চোখে তারা একই দৃশ্যের আলাদা দুটি চিত্র পাশাপাশি দেখতে পায়।

গরুদের চোখে ঘাসের রং লাল কিংবা কমলা। ছবি: ব্রাইট সাইড
গরুদের চোখে ঘাসের রং লাল কিংবা কমলা। ছবি: ব্রাইট সাইড


গরুর চোখে
আমরা যেমন মাঠে সবুজ ঘাস দেখি, গরুরা তা দেখতে পায় না। তারা তাদের চারণভূমিতে দেখে কমলা বা লাল রঙের ঘাস। আর মাছের মতো তারা খানিকটা বিবর্ধিত দৃশ্য দেখে।

ঘোড়া আশপাশ দেখতে পেলেও নাকের ঠিক সামনে কী আছে তা দেখতে পায় না। ছবি: ব্রাইট সাইড
ঘোড়া আশপাশ দেখতে পেলেও নাকের ঠিক সামনে কী আছে তা দেখতে পায় না। ছবি: ব্রাইট সাইড


ঘোড়ার চোখে
ঘোড়ার চোখের অবস্থান তাদের মাথার দুপাশে। এতে করে যেমন সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে। পেছনে বা পাশে কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা সামনে আসার আগেই ঘোড়া দেখে ফেলতে পারে, সে অনুযায়ী সতর্ক হয়ে যায়। কিন্তু আফসোস, তাদের ঠিক নাকের সামনে কী আছে, চোখের অবস্থানের কারণে তা কখনোই দেখতে পায় না।

মৌমাছি অতি বেগুনি রশ্মিও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড
মৌমাছি অতি বেগুনি রশ্মিও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড


মৌমাছির চোখে
মৌমাছির দৃষ্টিক্ষমতা অত্যন্ত প্রখর। মানুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি দ্রুততায় বুঝতে পারে তারা পৃথিবীকে। তারা অতি বেগুনি রশ্মিতে দেখতে পায়।

হাঙরের চোখে পৃথিবী সাদা-কালো। ছবি: ব্রাইট সাইড
হাঙরের চোখে পৃথিবী সাদা-কালো। ছবি: ব্রাইট সাইড


হাঙরের চোখে
হাঙরের চোখে পৃথিবী সাদা-কালো। তাতে অবশ্য শিকারে কোনো সমস্যা হয় না, কেননা পানির নিচে তাদের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ, আমাদের দৃষ্টিক্ষমতা যার ধারেকাছেও নেই!

গিরগিটি ৩৬০ ডিগ্রি কোণেও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড
গিরগিটি ৩৬০ ডিগ্রি কোণেও দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড


গিরগিটির চোখে
গিরগিটি বেশ আজব এক সৃষ্টি। মজার ব্যাপার হলো, তাদের চোখের মণি দুটোই একসঙ্গে সম্পূর্ণ গোলাকার আবর্তে ঘুরে ঘুরে চারপাশ ইচ্ছেমতো দেখে নিতে পারে। এই ক্ষমতাবলেই তারা দেখতে পারে ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য!

রাতে টিকটিকি আমাদের তুলনায় ৩৫০ গুণ বেশি পরিষ্কার দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড
রাতে টিকটিকি আমাদের তুলনায় ৩৫০ গুণ বেশি পরিষ্কার দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড


নিশাচর টিকটিকির চোখে
মানুষের আজন্ম সাধ একটা রূপকথার গল্পের মতো রাতের ছবি দেখার, যেখানে তারা খসে পড়ছে, উল্কা ছুটোছুটি করছে, নক্ষত্রদের মেলায় মেলায় পুরো আকাশ ছেয়ে রেখেছে এক আলোকিত রাত! এই দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আছে নিশাচর টিকটিকিদের। আমাদের তুলনায় ৩৫০ গুণ বেশি পরিষ্কার রাত দেখতে পায় টিকটিকি!

প্রজাপ্রতি মানুষের তুলনায় অনেক বেশি রং আর রঙের ছায়া দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড
প্রজাপ্রতি মানুষের তুলনায় অনেক বেশি রং আর রঙের ছায়া দেখতে পায়। ছবি: ব্রাইট সাইড


প্রজাপতির চোখে
প্রজাপতিও এক বিশেষ ধরনের কীট! তাদের দৃষ্টিশক্তি অতটা প্রখর নয়, তবে মানুষের তুলনায় অনেক বেশি রং আর রঙের বিভিন্ন ছায়া দেখতে পায়। সেই সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মি তো আছেই!