গেম খেলতে খেলতে অন্ধ জিয়াওজিন!

স্মার্টফোনে টানা গেম খেলার খেসারত গুনলেন চীনের এক নারী। ছবি: সংগৃহীত
স্মার্টফোনে টানা গেম খেলার খেসারত গুনলেন চীনের এক নারী। ছবি: সংগৃহীত

রাত পোহালেই পরীক্ষা। কিংবা সকাল-সকাল ধরতে হবে অফিস। ওদিকে স্মার্টফোনে পড়ে আছে আনকোরা নতুন কোনো ‘গেম’। পরীক্ষা কিংবা অফিসের চিন্তা শিকেয় তুলে মন চাইছে ‘গেম’টা একটু পরখ করে দেখতে; একটু খেললে কী-ই বা এমন ক্ষতি! সেই ‘একটু খেলা’—যখন শেষ হলো, তখন পুবাকাশে আলো ফোটার অপেক্ষা। হায় রে! আজও অফিসে দেরি কিংবা পরীক্ষার কী হবে!

ইন্টারনেট ও মোবাইলে সহজলভ্য হওয়ার সবচেয়ে খারাপ দিকটা বোঝা যাচ্ছে এখন। অনেককেই পেয়ে বসে গেম খেলার নেশা। যেকোনো নেশাই যে খারাপ, সেটা বোঝা গেল। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শানজি প্রদেশের উ জিয়াওজিন (গোপনীয়তার স্বার্থে সংবাদমাধ্যম আসল নাম প্রকাশ করেনি) নামের এক তরুণী স্মার্টফোনে ‘গেম’ খেলার মাশুল গুনছেন। ২১ বছর বয়সী উ স্মার্টফোনে টানা ২৪ ঘণ্টা ‘অনার অব কিংস’ গেম খেলে এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন!

চীনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অ্যাকাউনট্যান্ট হওয়ার ট্রেনিং করছেন উ জিয়াওজিন। ১ অক্টোবর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্মার্টফোনে গেম খেলা ছাড়া তিনি আর কোনো কিছুই করেননি। শুধু গেম খেলেছেন। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই ডান চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না। হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানান, জিয়াওজিনের ডান চোখে রেটিনার ধমনিতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না; মানে অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন জিয়াওজিন।

চিকিৎসকদের মতে, চোখের এ সমস্যায় সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি ভুগে থাকেন। তুলনামূলক কম বয়সীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বিরল। কিন্তু জিয়াওজিন টানা গেম খেলায় দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়েছে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। এতে তাঁর চোখে রেটিনার ধমনি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে শতকরা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তবে জিয়াওজিনের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকেরা ঠিক নিশ্চিত নন।

জিয়াওজিন জানান, স্মার্টফোনে গেম খেলার প্রতি আকৃষ্ট হন চলতি বছরের শুরুতে। এরপর থেকে তাঁর প্রাত্যহিক রুটিন ছিল, প্রতিদিন সকাল ছয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে গেম খেলা এবং সেটা চলত দুপুরে খাবারের আগ পর্যন্ত! এরপর আবারও গেম খেলা শুরু করতেন এবং সেটা চলত প্রায় রাত দুইটা পর্যন্ত। জিয়াওজিনের ভাষ্য, ‘ভোরে ওঠার পর খাওয়াদাওয়া বাদে প্রতিদিন রাত দুইটা পর্যন্ত গেম খেলেছি। এতটাই আসক্ত ছিলাম যে খেতে ভুলে যেতাম। মা-বাবা মানা করেছে, বলত অন্ধ হয়ে যেতে পারি। কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে বোঝাতাম, এটাই শেষ রাউন্ড। শেষ পর্যন্ত ছাড়তে পারিনি।’ জিয়াওজিনকে চিকিৎসকেরা এখনো হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাঁর চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

চীনের টেক-জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ‘টেনসেন্ট’-এর বানানো গেম ‘অনার অব কিংস’। এটা দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন গেমগুলোর একটি, খেলে থাকে ২০ কোটির বেশি মানুষ। আর তাই চীনের জাতীয় দৈনিকগুলো এর আগে গেমটিকে অভিযুক্ত করেছিল ‘বিষ’ হিসেবে। তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, গ্যাজেটস নাউ