পানির মধ্যে চলে যে ৫ স্মার্টফোন

বৃষ্টির দিনে বাইরে যেতে নিশ্চয়ই পানিরোধী স্মার্টফোনের কথা মনে হয়। কারণ, অনেক দামী স্মার্টফোন ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজারে এখন পানিরোধী (ওয়াটারপ্রুফ) ও পানি প্রতিরোধী (ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট) পাওয়া যায়। এসব অ্যান্ড্রয়েড ফোন পানিতে নামালে বা পানিতে পড়ে গেলে নষ্ট হয় না। এখনকার অনেক স্মার্টফোনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ছবি তোলার সুবিধাও আছে।

এখনকার অনেক স্মার্টফোন নির্মাতাই আইপি ৬৭ ও ৬৮ রেটিংয়ের ফোন তৈরি করছেন। এসব রেটিংপ্রাপ্ত ফোন পানির স্পর্শে নষ্ট হয় না। তবে অনেক ফোনের ক্ষেত্রে পানি প্রতিরোধী দাবি করা হলেও তা পানিতে নষ্ট হতে পারে। তাই ফোন কেনার আগে এ সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।

আইপি ৬৭ ও ৬৮ কী? এ প্রসঙ্গে স্যামসাং বাংলাদেশর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার হোসেন জানান, আইপি মানে ইনগ্রেস প্রটেকশন। ফোনের মধ্যে যেকোনো প্রটেকশন বা সুরক্ষার মাত্রা বোঝাতে এটি ব্যবহার করা হয়। প্রথম ডিজিট ৬ মানে সলিড অবজেক্ট বা ধুলোবালু বা সূক্ষ্ম পার্টকেল ঢোকার ক্ষেত্রে সুরক্ষার মাত্রা। এর সর্বোচ্চ মাত্রা ৬ পর্যন্ত। কোনো আইপি ৬ দেখালে তা ‘ডাস্ট টাইট’ বা ধুলোবালু সুরক্ষিত। এতে ডাস্ট ঢুকে তা নষ্ট করতে পারবে বা তাতে সুরক্ষা মাত্রা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়েছে। পরের ডিজিট পানি বা অ্যাসিড বাদে অন্য লিকুইড বা তরলের বিপরীতে প্রটেকশন বা সুরক্ষার মাত্রা কতটা শক্তিশালী তা বোঝায়। এটার সর্বোচ্চ মাত্রা ৯। আইপি ৬৯ হলে তাকে বলা হয় স্প্ল্যাশপ্রুফ। আর আইপিড ৬৮ মানে হচ্ছে দেড় মিটার পানির নিচে এ ফোন আধা ঘণ্টা টিকতে পারবে। হালকা ওয়েভ বা ঢেউ এটা সুরক্ষা দিতে পারে। ৬৭ সুরক্ষার মাত্রা হলে তা এক মিটার পানির নিচে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা টিকতে পারে। এটি হালকা মৃদু ঢেউ নিতে পারবে। ৬৯ পুরো ঢেউ বা ওয়াশিং মেশিনেও কোনো ক্ষতি হয় না।

বাংলাদেশের বাজারে পানিরোধী কয়েকটি স্মার্টফোন:

গ্যালাক্সি নোট ৮
গ্যালাক্সি নোট ৮


গ্যালাক্সি নোট ৮

সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে এসেছে স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ নোট ৮। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমচালিত ফোনটি আইপি ৬৮ রেটিংয়ের। স্যামসাংয়ের তৈরি বড় মাপের ফোন ‘ফ্যাবলেট’ নোট ৮। ৬ দশমিক ৩ ইঞ্চি মাপের কোয়াড এইচডি প্লাস (২৯৬০ বাই ১৪৪০ পিক্সেল) সুপার অ্যামোলেড ইনফিনিটি ডিসপ্লেযুক্ত স্মার্টফোনটি গ্যালাক্সি এস ৮ প্লাসের চেয়ে আকারে বড়। ফোনটিতে রয়েছে ৬ জিবি এলপিডিডিআর ৪ র‍্যাম। স্মার্টফোনটিতে স্যামসাংয়ের নিজস্ব এক্সিনোস সিরিজের প্রসেসর ব্যবহৃত হয়েছে। এবারে নোট ৮ স্মার্টফোনটির বিশেষ ফিচার হিসেবে ডুয়াল ক্যামেরা সেটআপ ফিচারটিকে তুলে ধরছে স্যামসাং। প্রথমবারের মতো পেছনের দিকে দুটি ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে একটি এফ/ ১.৭ অ্যাপারচারের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ও আরেকটি এফ/ ২.৪ অ্যাপারচারের টেলিফটো জুম লেন্স। এর সামনে রয়েছে এফ/ ১.৮ অ্যাপারচারের ৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর। পেছনের দুটি ক্যামেরাতেই অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার (ওআইএস) থাকছে। নোট ৮ স্মার্টফোনটির ব্যাটারি ৩ হাজার ৩০০ মিলি-অ্যাম্পিয়ার। এ স্মার্টফোনের দাম হবে ৯৪ হাজার ৯০০ টাকা।

এস ৮, এস ৮ প্লাস
এস ৮, এস ৮ প্লাস


এস ৮, এস ৮ প্লাস

স্যামসাংয়ের আইপি ৬৮ রেটিংয়ের আরও দুটি স্মার্টফোন হচ্ছে গ্যালাক্সি এস ৮ ও এস ৮ প্লাস। এ বছরের এপ্রিল মাসে এ ফোন দুটি বাজারে আসে। গ্যালাক্সি এস ৮-এর দাম ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা। গ্যালাক্সি এস ৮ প্লাসের দাম ৮৩ হাজার ৯০০। গ্যালাক্সি এস ৮ সম্পর্কে স্যামসাংয়ের ভাষ্য, দারুণ হার্ডওয়্যার নকশার ফোনটিতে অত্যাধুনিক অনেক প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। এতে আছে বেজেল-লেস ইনফিনিটি ডিসপ্লে, ইন্টেলিজেন্ট ইন্টারফেস বিক্সবি। এতে উন্নত ক্যামেরা, কাটিং-এজ প্রযুক্তি, বাড়তি কার্যক্ষমতা, আইরিশ স্ক্যানার, ফেশিয়াল রিকগনিশনসহ বাড়তি মোবাইল নিরাপত্তাব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে।

এ-৭ (২০১৭)
এ-৭ (২০১৭)


এ-৭ (২০১৭)

স্যামসাংয়ের তৈরি আরেকটি স্মার্টফোনে আইপি ৬৮ মান ব্যবহার করা হয়েছে। এ-৭ (২০১৭) সংস্করণটিতে ৫.৭ ইঞ্চি পর্দার নিচের দিকে রয়েছে হোম বাটন। সেখানে যুক্ত করা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। ডিসপ্লে সুপার অ্যামোলেড। স্যামসাংয়ের নিজস্ব এক্সিনয়েস ৭৮৭০ অক্টা–কোর প্রসেসর ব্যবহৃত হয়েছে এতে। ৩২ জিবি অভ্যন্তরীণ স্টোরেজের র‍্যাম দেওয়া হয়েছে ৩ জিবি। মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে স্টোরেজ ২৫৬ জিবি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে।

হুয়াওয়ে পি ১০
হুয়াওয়ে পি ১০


হুয়াওয়ে পি১০

চলতি বছরে দেশের বাজারে হুয়াওয়ের ফ্লাগশিপ ফোন পি১০ এবং পি১০ প্লাস উন্মুক্ত করে। এ ফোন দুটি আইপি ৬৭ মানের। অর্থাৎ, এ দুটি ফোন পানি প্রতিরোধী। দুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে জার্মানির লাইকার ডুয়েল লেন্সসমৃদ্ধ ক্যামেরা। ফোন দুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুততম সময়ে চার্জিং প্রযুক্তি হুয়াওয়ের সুপারচার্জ। এ ছাড়া ওএস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ সংস্করণ নুগাট ৭.১ এবং হুয়াওয়ের নিজস্ব ইন্টারফেস ইএমইউআই ৫.১। দ্রুতগতিতে কর্ম সম্পাদনের জন্য হ্যান্ডসেটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে হাইসিলিকন কিরিন ৯৬০ চিপসেট, ২.৪ গিগাহার্টজ কর্টেক্স এ৭৩ ও ১.৮ গিগাহার্টজ প্রসেসর ও ৪ জিবি র‍্যাম। চোখধাঁধানো গ্রাফিক্স উপভোগ করতে যুক্ত করা হয়েছে মালি-জি ৭১ এমপি-৮ জিপিউ। ৬৪ জিবি ইন্টারনাল মেমোরি বা রমের পাশাপাশি মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে হ্যান্ডসেটটির ধারণ ক্ষমতা ২৫৬ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। আছে ফোরজি প্রযুক্তির ডুয়েল সিম ব্যবহারের সুবিধা। পি১০ ও পি১০ প্লাসের মূল্য যথাক্রমে ৫৬ হাজার ৯০০ টাকা ও ৬৬ হাজার ৯০০ টাকা।