তিন অঙ্কের সংখ্যাটি কত?

প্রথমে আসুন গণিতের দু–একটি মজার সমস্যা দেখি।

দুই অঙ্কের একটি সংখ্যার অঙ্ক দুটির যোগফল ৯। অঙ্ক দুটি উল্টিয়ে লিখলে যে সংখ্যাটি পাব, তার সঙ্গে আগের সংখ্যার মানের পার্থক্য ২৭, যার অঙ্ক দুটির যোগফলও ৯। সংখ্যাটি কত?
অনেক কঠিন ফর্মুলা দিয়ে এর সমাধান বের করা যায়। তবে আমাদের মধ্যে যাঁরা গণিতে খুব বেশি অভ্যস্ত নন, তাঁদের জন্য একটি সহজ উপায় আছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা প্রথমে দেখব, কোন সংখ্যাগুলোর দুই অঙ্কের যোগফল ৯। যেমন ১৮, ২৭, ৩৬, ৪৫...ইত্যাদি। প্রথমে দেখা যাক ১৮। একে উল্টিয়ে লিখলে হবে ৮১। পার্থক্য = (৮১ - ১৮) = ৬৩। কিন্তু আমরা পার্থক্য চাই ২৭। সুতরাং, ১৮ হবে না। ২৭ ধরলে দেখা যাবে, (৭২ - ২৭) = ৪৫। এটাও হলো না। কিন্তু (৬৩ - ৩৬) = ২৭। উত্তর মিলে গেছে। অবশিষ্ট সংখ্যার ক্ষেত্রে (৫৪ - ৪৫) = ৯। এটাও নয়। তাই আমরা চট করে বের করে ফেললাম, সংখ্যাটি ৩৬। এখানে বলা দরকার, যেহেতু বলেছি সংখ্যা দুটির মানের পার্থক্য ২৭, তাই সংখ্যাটি ৬৩–ও হতে পারে। কারণ, একে উল্টিয়ে লিখলেও সংখ্যা দুটির মানের পার্থক্য সেই ২৭-ই হবে।
আরেকটি বৈশিষ্ট্য আমরা লক্ষ করছি। অঙ্ক দুটির যোগফল ৯ হলে, সেই সংখ্যার অঙ্ক দুটি উল্টিয়ে লিখলে মানের যে পার্থক্য পাই, তার অঙ্ক দুটির যোগফলও সেই একই, ৯।
আরেকটি মজার গণিত দেখুন। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল কত? এর উত্তর আমরা অনেকেই জানি। স্কুলে পাটিগণিতে আমরা শিখেছি। এ ধরনের সিরিজের যোগফল বের করার সূত্রটি হলো: যোগফল = (প্রথম সংখ্যা + শেষ সংখ্যা)* পদসংখ্যা / ২।
সুতরাং (১ + ২ + ৩ + ... ১০০) = (১ + ১০০)*১০০ / ২ = ১০১*৫০ = ৫০৫০।
এটা আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু এর পেছনের মজার গল্পটি অনেকে জানি না। প্রায় আড়াই শ বছর আগের কথা। একজন শিক্ষক বাচ্চাদের ক্লাসে এই অঙ্কটি দিয়ে একটু সুখনিদ্রায় মগ্ন হতে যাচ্ছেন। তিনি তো ধরেই নিয়েছেন এই সমস্যার সমাধানে অন্তত ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে। কিন্তু এরই মধ্যে সাত–আট বছরের এক শিশু বলল, উত্তর ৫০৫০। শিক্ষক তো অবাক। এটা কীভাবে সম্ভব?
কথিত আছে, সেই শিশু ছিলেন বিশ্বখ্যাত জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডরিখ গ্যস (১৭৭৭-১৮৫৫)। তিনি সমাধানের একটি সহজ উপায় বের করেছিলেন। সেটি হলো:
(১ + ২ + ৩ + ... ১০০) = (১ + ১০০) + (২ + ৯৯) + (৩ + ৯৮) + .... + (৪৯ + ৫২) + (৫০ + ৫১)।
গ্যস লক্ষ করেন, এ রকম মোট ৫০টি সংখ্যা আছে, যার প্রতিটির যোগফল ১০১।
অর্থাৎ তাঁর সূত্র অনুযায়ী যোগফল = (১০১ + ১০১ + ১০১ + ..., ৫০টি ১০১–এর সমষ্টি)।
সুতরাং তিনি উত্তর বের করলেন এভাবে: ১০১*৫০ = ৫০৫০।
পাটিগণিতের যে সূত্র আমরা শিখেছি, সেটা আসলে এই ধারারই সহজ বিবরণ মাত্র।

এ সপ্তাহের নতুন সমস্যা
তিন অঙ্কের একটি সংখ্যার অঙ্ক তিনটির যোগফল ৬। সংখ্যাটিকে উল্টিয়ে লিখলে বিয়োগফল ১৯৮। সংখ্যাটির শতকের ঘরের ও দশকের ঘরের অঙ্ক দুটির স্থান পরিবর্তন করে লিখলে বিয়োগফল ৯০। সংখ্যাটি কত?


গত সপ্তাহের (২৮-১০-১৭) প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্নটি ছিল এ রকম : আমার কাছে কিছুসংখ্যক আপেল আছে। কিন্তু সরাসরি বলব না কয়টি। তিনভাবে বলব। প্রথমত, আমার আপেলের সংখ্যা ৭ বা তারও বেশি। দ্বিতীয়ত, আপেলের সংখ্যা ৭-এর কম। তৃতীয়ত, আমার কাছে অন্তত একটি আপেল আছে। এই তিনটি উক্তির মধ্যে যদি শুধু একটি সত্য হয়, তাহলে আমার আপেলের সংখ্যা কত?


উত্তর
আমার আপেলের সংখ্যা ০ (শূন্য)। কোনো আপেল নেই। মূল প্রশ্নের শুরুতেই বলেছি, আমার কাছে ‘কিছুসংখ্যক’ আপেল আছে। যেহেতু ০ (শূন্য) একটি সংখ্যা, আপেলের সংখ্যা শূন্য হতে বাধা নেই।
সঠিক উত্তর খুব কমই এসেছে। সবাইকে ধন্যবাদ। কেউ কেউ বলেছেন প্রশ্নটিই ভুল। আসলে প্রশ্নে ভুল নেই। উত্তর বের করার কৌশলটি দেখুন।


কীভাবে উত্তরটি বের করলাম
শর্ত হলো, আমার তিনটি উক্তির মধ্যে শুধু একটি সত্য। ধরা যাক প্রথম উক্তিটি সত্য, আমার আপেলের সংখ্যা ৭ বা তারও বেশি। কিন্তু আবার তৃতীয় উক্তিতে বলেছি, আপেলের সংখ্যা অন্তত ১টি। তাহলে তো ৭ বা তারও বেশি থাকতে পারে। সুতরাং প্রথম উক্তি সত্য হলে তৃতীয় উক্তিও সত্য হয়ে যায়। কিন্তু আমরা তো চাই শুধু একটি উক্তি সত্য হতে হবে।
যদি তৃতীয় উক্তিটি সত্য হয়, মানে আমার আপেলের সংখ্যা অন্তত ১টি, তাহলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় উক্তির যেকোনো একটি সত্য হয়ে যাবে। কারণ, অন্তত ১টি, মানে ৪, ৭ বা তারও বেশি থাকতে পারে। সুতরাং তৃতীয় উক্তি, অন্তত ১টি আপেল—এটাও সঠিক নয়।
তাহলে দেখা যাক দ্বিতীয় উক্তিটি খাটে কি না। হ্যাঁ, এই উক্তিটিই সঠিক। কারণ, সেখানে আমি বলছি আপেলের সংখ্যা ৭টির কম। এই উক্তিটি সঠিক উত্তর হতে হলে প্রথম ও তৃতীয় উক্তি সঠিক হতে পারবে না। মানে আমার আপেলের সংখ্যা ৭টির বেশি বা অন্তত ১টি হতে পারবে না। তাই আপেলের সংখ্যা যদি ০ (শূন্য) হয়, তাহলে উত্তর সঠিক হতে বাধা নেই, কারণ শূন্য তো ৭-এর কম বটেই, ১-এরও কম। সুতরাং উত্তর হলো আপেলের সংখ্যা শূন্য। আমার কাছে আসলে কোনো আপেল নেই।
আব্দুল কাইয়ুম : সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা
[email protected]