ফেসবুক তৈরি ভুল ছিল?

ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট শন পার্কার
ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট শন পার্কার

ফেসবুকের বিরুদ্ধে মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগ তুলেছেন ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট শন পার্কার। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা আমাদের শিশুদের মস্তিষ্কে কী ঘটাচ্ছে, ঈশ্বরই জানেন। 


ফেসবুক তৈরির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন—এমন অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বর্তমানে ফেসবুকের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

মার্কিন নিউজ ওয়েবসাইট এক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা শন পার্কার সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোর বিপদ সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। তিনি এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

২০০৪ সালে ফেসবুকে বিনিয়োগ করেন শন পার্কার এবং ফেসবুক গড়ে তুলতে জাকারবার্গকে সহায়তা করেন। সেসময় তিনি ফেসবুকের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবশ্য ২০০৫ সালেই তিনি ফেসবুক ছেড়ে দেন। ২০১০ সালে ফেসবুক তৈরির কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ চলচ্চিত্রটিতে শন পার্কারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জাস্টিন টিম্বারলেক। তবে এ চলচ্চিত্রটিতে শন পার্কারকে যে ভূমিকায় দেখানো হয়েছে তা পুরোপুরি কাল্পনিক বলেই জানিয়ে আসছেন শন।

ফেসবুক ছাড়াও ১৯৯৯ সালে মিউজিক শেয়ারিং ওয়েবসাইট ন্যাপস্টারের যৌথ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শন। এসময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। ২০০১ সালে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের দায়ে ন্যাপস্টার বন্ধ হয়ে যায়।

এক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পার্কার বলেন, এসব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির প্রাথমিক চিন্তা ছিল মানুষের সময় ও মনোযোগ যতটা সম্ভব দখল করা। এর অর্থ হচ্ছে-সময় সময় সামান্য ডোপামিন দেওয়ার মতো। কারণ, ছবি, পোস্ট বা কোনো কিছুতে কেউ লাইক বা মন্তব্য করার সুযোগ পায়। এর ফলে আরও বেশি কনটেন্ট বাড়ে এবং আরও বেশি লাইক, মন্তব্য বাড়তে থাকে।

পার্কারের ভাষ্য, এটা সামাজিক-বৈধ প্রতিক্রিয়ার একটা ফাঁস। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া এটি।

শন পার্কার বলেন, এসব অ্যাপ বা সাইটের আমার উদ্ভাবক নির্মাতা মার্ক জাকারবার্গ, ইনস্টাগ্রামের কেভিন সিসট্রোমসহ সবাই এটা ভালোভাবেই জানেন।
শন পার্কারের মন্তব্য নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

শন পার্কার ছাড়াও সম্প্রতি প্রযুক্তি উদ্যোগ নিয়ে নিজের হতাশার কথা বলেছেন গুগলের সাবেক কর্মী ট্রিস্টান হ্যারিস। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের মন ছিনতাই করে নিচ্ছেন বলে সমালোচনা করেন তিনি।

জাস্টিন রোজেনসটিন নামের মার্কিন প্রকৌশলী ২০০৭ সালে ফেসবুকে কাজ করার সময় অসাধারণ ফিচার ‘লাইক’ তৈরি করেছিলেন। তিনিও এখন ফেসবুকের এ ফিচারটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোজেনসটিন মনে করছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষের ওপর বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন নানাভাবে মানসিক প্রভাব ফেলছে। এই ভয় তাঁর মনে বাসা বেঁধেছে। তাই সতর্কতা হিসেবে রেডিট, স্ন্যাপচ্যাটের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহার থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী।

রোজেনসটিন তাঁর উদ্ভাবিত ‘লাইক’ সম্পর্কে বলছেন, এটি নকল আনন্দের এক চকমকে ঘণ্টি। সিলিকন ভ্যালির সমালোচকেরা লাইক বাটনকে অ্যাটেনশন ইকোনমি বা মনোযোগ কাড়ার অর্থনীতি বলে থাকেন।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারে মানুষের মধ্যে আসক্তি বাড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। মানুষ দিনকে দিন আরও বোকা হচ্ছে। এই প্রবণতাকে বলা হচ্ছে, কন্টিনিউয়াস পারশিয়াল অ্যাটেনশন। সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ ব্যবহারের ফলে লক্ষ্যে স্থির থাকার ক্ষমতা সীমিত হওয়ার পাশাপাশি মেধা কমার ভয় রয়েছে। তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার।