স্টার্টআপ কেন ব্যর্থ?

চাকরি করার পরিবর্তে এখন স্টার্টআপ বা নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন তরুণেরা। ছবি: সংগৃহীত
চাকরি করার পরিবর্তে এখন স্টার্টআপ বা নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন তরুণেরা। ছবি: সংগৃহীত

মাথার মধ্যে দারুণ সব উদ্যোগ বা স্টার্টআপ তৈরির ধারণা ঘুরপাক খাচ্ছে? ধারণা নিয়েই তড়িঘড়ি করে অনেকেই নেমে পড়েন ব্যবসায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে মুখ থুবড়ে পড়ে তাঁদের সেই স্টার্টআপ বা উদ্যোগ। উদ্যোক্তা আগ্রহ হারিয়ে বসেন বা ফুরিয়ে যায় তাঁর বিনিয়োগ করা অর্থ। এভাবে অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোগ শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপগুলোর ব্যর্থতার কারণগুলো অনুসন্ধান করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিবিআই ইনসাইটস স্টার্টআপগুলোর ব্যর্থতার কয়েকটি কারণ প্রকাশ করেছে। দেখে নিন স্টার্টআপের ব্যর্থতার কিছু কারণ :

বাজারে অপ্রয়োজনীয় : কোনো ব্যবসা উদ্যোগ বা স্টার্টআপ তৈরির আগে তা বাজারে চলবে কি না, তা অবশ্যই যাচাই করা উচিত। কোনো সমস্যার চটকদার সমাধান তৈরির বদলে বাজারে তার চাহিদা কেমন, তা বিবেচনা করে ব্যবসায় উদ্যোগ নিতে হবে। অনেকেই বাজারের চাহিদা না রেখে আকর্ষণীয় সমাধান হিসেবে নিজেকে জাহির করে। সাধারণত এ কারণে ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্টার্টআপগুলো বাজারে ব্যর্থ হয়।

অর্থ শেষ তো সব শেষ : অনেকের হাতে নগদ অর্থ থাকার সময় স্টার্টআপ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু যখনই নগদ অর্থে টান পড়তে শুরু করে, তখনই উদ্যোগ নুয়ে পড়তে থাকে। কোনো স্টার্টআপের ব্যর্থতার দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে নগদ অর্থের যথাযথ ব্যবহার না করাকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। ২৯ শতাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপের ব্যর্থতার জন্য অর্থ ঠিকমতো খরচ না করার বিষয়টিকে দায়ী করা হয়।

সঠিক দল না থাকা : স্টার্টআপের ব্যর্থতার আরেকটি কারণ হচ্ছে, সঠিকভাবে দল তৈরি করতে না পারা। ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপের ব্যর্থতার কারণ সঠিক দলের সমন্বয় না হওয়া। দক্ষ ও বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ দল না থাকলে স্টার্টআপ সফল হয় না। একটি উদ্যোগ নেওয়ার সময় যদি দলের সদস্যের যথাযথ সমন্বয় না থাকে, তবে সে স্টার্টআপ বেশি দূর নেওয়া যায় না।

প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা : স্টার্টআপ ব্যর্থ হওয়ার চতুর্থ কারণ হচ্ছে প্রতিযোগিতার টিকতে না পারা। প্রতিযোগীদের হালকাভাবে নিলে তা দ্রুত আপনার স্টার্টআপকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যদের হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ১৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এ কারণে স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়।

দামের বিষয় : সিবিআই ইনসাইটসের তথ্য অনুযায়ী, স্টার্টআপ ব্যর্থ হওয়ার পঞ্চম কারণ দামের বিষয়টি। কোনো স্টার্টআপের তৈরি পণ্য বা সেবার জন্য সঠিক দাম নির্ধারণ করা জরুরি। খুব বেশি বা খুব কম দাম স্টার্টআপের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। ১৮ শতাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপ ব্যর্থতার কারণ এটি।

ব্যবহারবান্ধব পণ্য না থাকা : স্টার্টআপের তৈরি পণ্য বা সেবা অবশ্যই ব্যবহারবান্ধব হতে হবে। তা না হলে সে স্টার্টআপ চালানো কঠিন। ১৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহারবান্ধব পণ্য না হওয়ায় স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়। পণ্য তৈরির সময় ব্যবহারকারীর চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্রেতাই রাজা।

ব্যবসা মডেল না থাকা : স্টার্টআপের ব্যর্থতার জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী করা হয় সঠিক ব্যবসার মডেল না থাকাকে। শুধু ব্যবসার একটি মডেল থাকলেই হবে না, তা টেকসই ও ঠিকভাবে চলবে কি না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্বল বিপণন : বলা হয়, শুধু পণ্য বা সেবা তৈরি করা যথেষ্ট নয়, তা যথাযথ বিপণন করার কৌশলও জানা থাকতে হবে। সঠিক বিপণনের অভাবে অনেক স্টার্টআপ ব্যর্থ হতে দেখা গেছে। ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগের ব্যর্থতার পেছনে দুর্বল বিপণনকে দায়ী করা হয়। কোনো ব্যবসার গ্রাহককে বোঝা ও তাদের আকর্ষণের কৌশল সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রাহকের প্রতিক্রিয়াকে মূল্যায়ন না করা : ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রতিক্রিয়াকে মূল্যায়ন না করার বিষয়টি ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ধরা হয়। পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহক কী বলছেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবার মান বাড়াতে হবে। গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সফলতা আসবে। তা না হলে উদ্যোগ শুরুতেই ব্যর্থ হবে।

অসময়ে পণ্য : যে পণ্যের যখন চাহিদা বাজারে, তখন সেটি ছাড়তে হবে। সঠিক পণ্য সময় বুঝে ছাড়তে পারলে ব্যবসায় লাভ আসবে। খুব তাড়াতাড়ি বা খুব দেরিতে পণ্য বাজারে ছাড়ছে গ্রাহকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। স্টার্টআপের ব্যর্থতার দশম কারণ মনে করা হয় ভুল সময়ে পণ্য বাজারে ছাড়ার বিষয়টিকে।

উদ্দেশ্য না থাকা : স্টার্টআপ বা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এর কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা ফোকাস না থাকা। ব্যবসা শুরুর সময়ে মূল লক্ষ্য বিচ্যুত হয়ে অন্য বিষয় নিয়ে বেশি ঝুঁকে পড়লে ব্যবসার ক্ষতি হয়। ১৩ শতাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপের ব্যর্থতার জন্য লক্ষ্য না থাকাকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা।

সহপ্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে বিবাদ : অনেক সময় বিনিয়োগকারী বা সহপ্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে স্টার্টআপ। ১৩ শতাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপের ব্যর্থতার জন্য সহপ্রতিষ্ঠাতা বা বিনিয়োগকারীদের মধ্য বিবাদ দায়ী। স্টার্টআপ সফল করতে হলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হতে হবে। স্বচ্ছ থাকতে হবে।

নেতৃত্ব ঠিক না করা : অনেক ক্ষেত্রে ভুল নেতৃত্বের কারণে উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে। ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে উদ্যোগের ব্যর্থতার জন্য ভুল নেতৃত্ব দায়ী। উদ্যোগ সফল করার প্রয়োজনে পরিবর্তন আনার বিষয়টি ভাবতে হবে।

আবেগ ও দক্ষতার অভাব : সিবিআই ইনসাইটসের সমীক্ষা অনুযায়ী, স্টার্টআপের ব্যর্থতার ১৪তম কারণ ধরা হয় উদ্যোগ বিষয়ে উদ্যোক্তার আবেগ ও দক্ষতা না থাকা। ৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এটিকে স্টার্টআপের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

অবস্থান : স্টার্টআপ বা উদ্যোগটি কোথায় নেওয়া হচ্ছে, সে স্থানটিও সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য বা সেবা দেওয়ার সঙ্গে স্টার্টআপের অবস্থানের বিষয়টি বড় প্রভাব ফেলে। অনেক সময় সঠিক জায়গায় উদ্যোগটির অবস্থান না হলে সেটি ব্যর্থ হয়। ৯ শতাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপের ব্যর্থতার জন্য বাজে অবস্থান দায়ী বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তথ্যসূত্র : গ্যাজেটস নাউ।