৫ লাখ বার নেমেছে এই বাংলা অ্যাপটি

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: সূর্যমুখী
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: সূর্যমুখী

বাংলাদেশের বাংলা ভাষার অ্যাপ। সেটিও শিশুদের বাংলা পড়া ও লেখা শেখার। সূর্যমুখী লিমিটেডের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ হাতেখড়ি গুগল প্লে-স্টোর থেকে নামানো হয়েছে ৫ লাখের বেশিবার। এ উপলক্ষে আজ ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এক ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, লেখক ও সাংবাদিক রাজীব হাসান।

২০১৪ সালে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে হাতেখড়ি অ্যাপটি যাত্রা শুরু করে। ২০১৭ সালের রোজার ঈদে আরও দুটি সহযোগী অ্যাপ গুগল প্লে–স্টোরে ছাড়ার মাধ্যমে ‘হাতেখড়ি’ একটি অ্যাপ-গুচ্ছে পরিণত হয়: হাতেখড়ি ক্ল্যাসিক, হাতেখড়ি যুক্তাক্ষর এবং হাতেখড়ি সংখ্যা। হাতেখড়ি সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারবার এবং হাতেখড়ি যুক্তাক্ষর প্রায় ১৫ হাজারবার ডাউনলোড হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও দেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষীরা এই অ্যাপ নামাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘আমার কাছে হাতেখড়িকে শিক্ষার একটি আনন্দময় মনোরম প্রক্রিয়া মনে হয়েছে। এটি যেকোনো শিশুকে বাংলা শিখতে উদ্বুদ্ধ করবে। ভাষা শেখা এত সহজ নয়, কিন্তু হাতেখড়ি সেই বিষয়টাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।’

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘হাতেখড়ি অ্যাপটি যেভাবে বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে, ঠিক সেভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকেই স্বল্পমূল্যে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস পৌঁছে দিতে পারে সাধারণ মানুষের দ্বারপ্রান্তে। একই সঙ্গে হাতেখড়ির পরবর্তী সংস্করণগুলোর জন্য যে গবেষণা প্রয়োজন, সেটিকেও সম্ভব করে দিতে পারে।’

ক্যাম্পির নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী এক ভিডিও বার্তায় জানান, ‘হাতেখড়ি মোবাইল অ্যাপটি থেকে আমাদের শিশুরা কত কিছু যে শিখতে পারছে, তার কোনো তুলনা নেই। নতুন নতুন মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিকে আগামী প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য সূর্যমুখীর তৈরি হাতেখড়িকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাফল্য কামনা করছি।’

রাজীব হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রযুক্তির মঞ্চটা আছে কিন্তু ভালো কনটেন্ট নেই। আমাদের ভালো নাটক হলেই না আমরা হিন্দি সিরিয়াল থেকে বের হতে পারব, ভালো কার্টুন হলেই না আমার মেয়ে ডোরেমন, হিন্দি কার্টুন চ্যানেলগুলো আর দেখবে না। আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, হাতেখড়ি হলো ঠিক তেমনই একটি অ্যাপ, যেটা দিয়ে আমার মেয়ে খুব সহজেই বাংলা শিখতে শুরু করেছিল।’

অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে উপস্থাপক ফিদা হকের সঙ্গী ছিল দুই পাপেট চরিত্র পরী ও দুখু। ছবি: সূর্যমুখী
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে উপস্থাপক ফিদা হকের সঙ্গী ছিল দুই পাপেট চরিত্র পরী ও দুখু। ছবি: সূর্যমুখী

সূর্যমুখী লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিদা হক জানান, ‘হাতেখড়ি অ্যাপ সিরিজের মাধ্যমে বাংলা বর্ণমালা শেখা এখন একই সঙ্গে অনেক সহজ আর মজাদার। স্মার্টফোনে খেলাচ্ছলে শিশুদের বাংলা শেখার এক অভূতপূর্ব প্ল্যাটফর্ম হাতেখড়ি। হাতেখড়ির মাধ্যমে এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও সঠিক উচ্চারণসহ বাংলা বর্ণমালা শিখতে পারে। শব্দ এবং বানান শিখতে পারে। বাক্য তৈরিও করতে পারে। এবং হাতের আঙুল কলম হিসেবে ব্যবহার করে হস্তাক্ষরও অনুশীলন করতে পারে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ফিদা হক জানিয়েছেন, ‘ছোটদের জন্য আরও মজাদার করার জন্য কার্টুন চরিত্র হিসেবে হাতেখড়ি ক্ল্যাসিকে এবার রয়েছে কাঠবিড়ালি কুটকুট, হাতেখড়ি যুক্তাক্ষরে স্কুলছাত্রী পরী এবং হাতেখড়ি সংখ্যায় আছে ব্যাঙ মামা ঘ্যাঙরঘ্যাঙ। আর ভবিষ্যৎ ভার্সনগুলোতে ছোট্ট ছেলে দুখুও থাকবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।’

অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিল ঢাকা উদ্যান, বেড়িবাঁধ এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল সুইচ বিদ্যানিকেতনের প্রাথমিক পর্বের ছাত্রছাত্রীরা। তাদের এবং উপস্থিত অতিথিদের আনন্দদায়ক এক সঞ্চালন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় পুতুলনাচ গ্রুপের পাপেটিয়াররা।

ফিদা হক আরও জানান, ‘অ্যাপটি তৈরির পেছনে কাজ করেছে সূর্যমুখীর একঝাঁক উদ্যমী তরুণের মেধা, বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং কঠোর পরিশ্রম। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য একটি গেম বানানো, যে গেম খেলার মাধ্যমে বাংলা শেখার প্রতিটি ধাপ পেরোলেই থাকবে পুরস্কার। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমান যুগের শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহী করার জন্য কাজ করছি। আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ এবং দেশ গড়ার কারিগর। আর তাই সূর্যমুখী স্বপ্ন দেখে একটি সোনার বাংলার, যেখানে একটিও নিরক্ষর মানুষ থাকবে না।’

গুগল প্লে–স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে: