মাঠেঘাটে এক ঘণ্টার প্রোগ্রামিং

প্রোগ্রামিং ভাবনার গভীরে যেন ডুব দিয়েছে এই শিশু। ছবিটি দিনাজপুরের ‘এক ঘণ্টার প্রোগ্রামিং’ আয়োজন থেকে তোলা l সংগৃহীত
প্রোগ্রামিং ভাবনার গভীরে যেন ডুব দিয়েছে এই শিশু। ছবিটি দিনাজপুরের ‘এক ঘণ্টার প্রোগ্রামিং’ আয়োজন থেকে তোলা l সংগৃহীত

কেমন করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতে হয় তা সব মানুষেরই জানা দরকার—স্টিভ জবস

ডিজিটাল জগৎ আর প্রোগ্রামিং এখন অজানা কোনো শব্দ নয়। কমবেশি সবাই এখন প্রোগ্রামিং আর প্রোগ্রামারদের কথা জানেন। একটা কারণ হলো সব জায়গায় কম্পিউটারের ব্যবহার। মাটিকাটা থেকে হাঁটাহাঁটি—সবখানেই ডিজিটাল যন্ত্র এবং সেই যন্ত্রের পেছনে থাকা মানুষের কথা লোকে জেনে ফেলে। দ্বিতীয় কারণ হলো এই মুহূর্তে বিশ্বের সম্পদশালী পাঁচটি কোম্পানিই ডিজিটাল প্রযুক্তির। অর্থাৎ তাবৎ কাজকর্মের চালক হয়ে উঠছে কম্পিউটার, আর কম্পিউটারের চালক হলেন  প্রোগ্রামার। এখানেই যত বিপত্তি। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা হলো প্রোগ্রামিং একটি জটিল বিষয়। সবাইকে দিয়ে হবে না। কিন্তু যাঁরা খুব ভালো প্রোগ্রামার, প্রোগ্রামিং করে মাইক্রোসফট বা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, তাঁদের মত কিন্তু ভিন্ন।

খুলনা
খুলনা

বিল গেটস বা মার্ক জাকারবার্গ দুজনই তাঁদের কৈশোরে প্রোগ্রামিং শুরু করেছেন। ফলে তাঁরা জানেন প্রোগ্রামিং জানার সুবিধা। স্টিভ জবসের ভাষায়, প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য নয় বরং সমস্যা সমাধানে পটু হতে দরকার প্রোগ্রামিং শেখা। আর ছোটবেলা থেকে যাতে আনন্দের সঙ্গে ও খেলাচ্ছলে প্রোগ্রামিং শেখা যায়, তারই উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। হাদি পার্বর্তী নামের একজন প্রোগ্রামারের নেতৃত্বে এবং বিল, স্টিভ আর জাকারবার্গের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কোড ডট অর্গ (code.org)। আর সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক বছর ধরে শুরু করা হয়েছে এক ঘণ্টার প্রোগ্রামিং (আওয়ার অব কোড) নামে একটি আয়োজন। বিশ্বজুড়ে এই আয়োজনটি হয় ডিসেম্বর মাসে কিন্তু সে সময় বাংলাদেশে থাকে বার্ষিক পরীক্ষার তোড়জোড়। আর তাই বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিএএসএন) বড় এই আয়োজনটি দেশব্যাপী করে থাকে জানুয়ারি মাসজুড়ে। যেমনটি চলছে এখন।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ

‘আওয়ার অব কোড’-এর মজার ব্যাপার হচ্ছে, এর জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের দরকার হয় না। নিজের ঘরে বসে নিজে নিজেও কাজটা করা যায়। আবার অন্যদের জন্যও আয়োজন করা যায়। আওয়ার কোডে অনেক মজার মজার গেম আছে, যা প্রথম থেকে যে কেউ ধাপে ধাপে বানাতে পারে। এমন একটি মজার গেম হলো অ্যাংরি বার্ড। মূল গেমটিতে রাগী পাখিটি শূকর খুঁজে খুঁজে ধ্বংস করে। এখানে তাই। তবে পাখিটি চালানোর কাজটি করতে হয় গেম খেলোয়াড়কে। এই পাখিটি প্রতিবার এক ঘর সামনে যেতে পারে এবং বাঁ দিকে বা ডান দিকে ঘুরতে পারে। একটি দাবার ঘরের মতো সাজানো বাগানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে সামনে বা এদিক-ওদিক গিয়ে শূকরটিকে মারতে হয়। এক ঘণ্টায় প্রায় ২০টি ধাপ খেলা যায়। আর এই খেলার মাধ্যমে খেলোয়াড় প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণাগুলো যেমন স্টেটমেন্ট, লুপ (একই কাজ বারবার করা), লজিক্যাল কন্ডিশন (কোনো একটি বিষয় যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া) ইত্যাদি বুঝে ফেলে। আর পুরোটা করা হয় ছোট ছোট ব্লককে একের পর এক সাজিয়ে। কাজেই কখনো মনে হয় না যে একটি জটিল প্রোগ্রাম করা হচ্ছে। আর এভাবে মাত্র এক ঘণ্টার চেষ্টায় প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি হয়ে যায়।

বরিশাল
বরিশাল

বিডিএএসএনের এবারের আয়োজনে সারা দেশে প্রায় ১০০ জায়গায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বরিশাল সদর গার্লস স্কুলের এক ছাত্রী এক ঘণ্টা পর বলেছে, আমি তো ভাবতাম প্রোগ্রামিং একটি কঠিন বিষয়, কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, এটি মোটেই কঠিন নয়। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজের মাঠে প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি নেওয়া নিরব হোসেন ও হৃদয় আলীর বক্তব্য হলো, এটি তো খুবই সোজা!

বিডিওএসএনের কর্মসূচি সমন্বয়ক মোশাররফ হোসেন জানান, দেশের প্রায় ২০ জেলায় এই আয়োজন হচ্ছে। যারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এই আয়োজন করতে চায়, তাদের নানানভাবে সহায়তা করছে বিডিওএসএন। বিভিন্ন জেলায় বিডিওএসএনের কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিম পরিবহন, ময়মনসিংহের লোকাল গুগল গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এডিসন গ্রুপ, শিওরক্যাশ ও দোহাটেক নিউ মিডিয়া।

শুধু জানুয়ারি মাসে নয়, সারা বছর ধরে এ আয়োজনটি করা যায়। জন্মদিনের অনুষ্ঠান কিংবা যেকোনো জমায়েতে ছোট-বড় যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য এই আয়োজন যেমন মজার, তেমনি তা আগামী দিনের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনে এগিয়ে রাখে।

ইন্টারনেট থেকে সরাসরি নিজেরাও প্রোগ্রামিং চর্চা করা অথবা [email protected] ঠিকানায় ই-মেইল করে বিডিওএসএনের সহায়তা নেওয়া যাবে।