হকিংয়ের দুর্লভ হাসি

মৃদু হাসছেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। ১২ আগস্ট ২০০৯, হোয়াইট হাউসে।  ছবি: লেখক
মৃদু হাসছেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। ১২ আগস্ট ২০০৯, হোয়াইট হাউসে। ছবি: লেখক

স্টিফেন হকিংকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ এসেছিল ২০০৯ সালের ১২ আগস্টে। আসর বসেছে হোয়াইট হাউসে। কৃতী কিছু মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ দেবেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পাবেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও। সেই সূত্রেই যাওয়া। কীর্তিমানদের মধ্যে আছেন স্টিফেন হকিংও। হুইলচেয়ারে শরীর এঁকেবেঁকে বসা। ক্লান্ত শরীরে চোখ দুটিই শুধু জীবিত। তারার মতো ঝকমকে নীল চোখ। বিশেষ হুইলচেয়ারের সামনে বসানো কম্পিউটার।

হোয়াইট হাউসের ইস্টরুমে চলছে অনুষ্ঠান। একে একে বিশ্বের ১৬ জন কৃতী মানুষকে পদক পরানো হলো। ওবামা প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবদান সম্পর্কে বললেন। হকিং সম্পর্কে বলার সময় বিজ্ঞানী উচ্ছল হয়ে উঠলেন সাধারণ মানুষের মতো।

এ দৃশ্য শুধু চোখে দেখার নয়, ধরে রাখলাম ক্যামেরায়। আমি বসেছি দ্বিতীয় সারিতে। ঠিক সামনে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। তাঁর কানের পাশে গর্জে উঠছে শাটারের শব্দ। বিরক্ত হচ্ছিলেন নিশ্চয়, কিন্তু পেছনে ফিরে তাকাননি। দেখলাম, বিজ্ঞানীর মুখ থেকে লালা ঝরে গড়াচ্ছে। বিরল এ দৃশ্য তো ভিডিওতে বন্দী করতেই হবে। অবাক হয়ে ভাবলাম, প্রায় মৃত শরীরের এই মানুষটির মস্তিষ্ক কীভাবে দূর নক্ষত্রজগতের রহস্য উন্মোচন করছে। বারাক ওবামা নাম ঘোষণা করলেন, ‘স্টিফেন হকিং।’ টিস্যু পেপার দিয়ে লালা মুছে এগিয়ে আনা হলো তাঁকে। খুশিতে নড়ে উঠল মুখের বলিরেখা। এক পরিচারিকা তাঁর মাথা উঁচু করে ধরলেন। ওবামা একটু কাত হয়ে পরিয়ে দিলেন সোনার পদক। হাসি ছড়িয়ে পড়ল মুখে। যেন এই মুহূর্তটিরই অপেক্ষা করছিলেন বহুদিন ধরে।

অনুষ্ঠান শেষে সবাই গেলাম বড় আরেকটি কক্ষে। আমরা হাজির হলাম স্টিফেন হকিংয়ের ঠিক সামনে। তাঁর খেতাবের অভিজ্ঞানপত্রে কী লেখা হয়েছে, সেটা দেখতে তিনি ব্যগ্র হয়ে উঠেছিলেন। বাঁধাই করা লেখাটি বাবার চোখের সামনে তুলে ধরলেন তাঁর মেয়ে লুসি হকিং। কিছুক্ষণ দেখে হাসলেন। তাঁর বহু আলোকচিত্র দেখেছি, গম্ভীর মুখচ্ছবি। হাসির সেই দুর্লভ মুহূর্তটি ক্যামেরায় চিরদিনের জন্য ধরে রাখলাম।