জবাব দিলেন জাকারবার্গ

মার্ক জাকারবার্গ
মার্ক জাকারবার্গ

ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় কয়েক দিন চুপ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। সাম্প্রতিক ঘটনার বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়েছেন তিনি। জবাব দিয়েছেন সব সমালোচনার।

অভিযোগ উঠেছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। ওই অ্যাপের মাধ্যমেই কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। এসব তথ্য পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হয়।

তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় কয়েক দিন ধরেই জাকারবার্গকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসব সমালোচনার জবাবে জাকারবার্গের বক্তব্যের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ এসব তথ্য:

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার
মার্কিন নির্বাচনে ফেসবুকের ডেটা নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব ফেলা হয়েছে—এ অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার তথ্য তাদের কাছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জাকারবার্গ। উইয়ার্ড ম্যাগাজিন বলেছে, জাকারবার্গ বলেছেন যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ডেটার সঙ্গে রাশিয়ার ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সির কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি ফেসবুক।

শুনানির জন্য রাজি
তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় জাকারবার্গকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শুনানির জন্য হাজির হতে হবে। এ প্রসঙ্গে জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুকের তথ্যের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্রের বিষয়টি তদন্ত করতে সরকার এখন উপযুক্ত অবস্থায় আছে। যদি সঠিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়, তবে তিনি সানন্দে শুনানিতে রাজি হবেন।

ব্যবসা মডেল ঠিক আছে
ফেসবুকের ব্যবসার মডেল নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে ব্যাপক। ফেসবুককে ব্যবসার জন্য ব্যবহারকারীদের পণ্য বানাতে হয়। তাদের তথ্যের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে অর্থ নিতে হয়। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, জাকারবার্গ ব্যবসা মডেলের সমালোচনার জবাবে বলেছেন, বিনা মূল্যে বা কম খরচে ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হলে এ রকম ব্যবসা মডেল উপযুক্ত। ফেসবুককে বিনা মূল্যে ও সাশ্রয়ী থাকতে হবে। তাই এ ব্যবসা মডেলটিই থাকবে।

ব্যবহারকারী কমছে না
ফেসবুকের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিউজফিডে পরিবর্তনের কারণে অনেকেই ফেসবুকে আকর্ষণ হারাচ্ছেন। এমনকি ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তথ্য চুরির ঘটনায় টুইটারে ডিলিট টুইটার নামের হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচার চলছে। জাকারবার্গ এ নিয়ে বলেছেন, যাঁরা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলছেন, তাঁদের সংখ্যা নগণ্য। তিনি খুব বেশি মানুষকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে দেখেননি।

কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে
রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে ফেসবুকের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবিও উঠছে। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। তবে নিয়মতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ হলে তা রাখার পক্ষে তিনি।

ভোটে হস্তক্ষেপ করা হবে না
বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভোটের সময় ফেসবুকের প্রভাব খাটানোর বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিবিদেরা নাখোশ। তাঁরা ফেসবুকের সমালোচনা করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাকারবার্গ বলেছেন, ভারত বা ব্রাজিলের মতো দেশগুলোয় নির্বাচনে নাক গলানোর বিষয়টি ঠেকাতে ফেসবুক অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে তিনি নিশ্চিত যে ফেসবুক ব্যবহার করে কেউ না কেউ নির্বাচনের সময় ঘোঁট পাকানোর চেষ্টায় থাকেন।

দুঃখ প্রকাশ
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের ভুল স্বীকার করে জাকারবার্গ বলেছেন, ২০১৫ সালে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সব তথ্য মুছে ফেলার যে অঙ্গীকার করেছিল, তা বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। ২০১৪ সালের পর থেকে হাজারো থার্ড পার্টির অ্যাপ্লিকেশনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখার কথা জানান তিনি। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনায় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট রিকোডকে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সামনে পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত।

যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ
ফেসবুক ইনকরপোরেশনের পরিচালক সু ডেসমন্ড-হেলম্যান বলেছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ তাঁদের এই তথ্য ফাঁস বা কেলেঙ্কারি কতটা মারাত্মক, সেটি বুঝতে পেরেছেন। শেরিল ও জাকারবার্গ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

তদন্ত হবে
এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে ব্যবস্থা কয়েক বছর আগেই নেওয়া হয়েছে বলে জানান জাকারবার্গ। তবে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিস্থিতিতে ফেসবুক একটি ভুল করে ফেলেছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। ২০১৪ সালে ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে নিয়মনীতির পরিবর্তন আসার আগে যে অ্যাপগুলো ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে ফেসবুক।

নিয়ন্ত্রণ থাকবে ব্যবহারকারীদের হাতে
এখন থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিউজফিডের ওপরে একটি টুল দেখানো হবে। এ টুল থেকে সহজেই থার্ড পার্টির বিভিন্ন অ্যাপ মুছে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যাতে ব্যবহারকারীর তথ্য ডেভেলপাররা নিতে না পারেন, তাতে বাধ্যবাধকতা আসবে। যেসব ডেভেলপার ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার করবে, তাদের বাতিল করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবহারকারীকে তা জানানো হবে।

উইয়ার্ড, নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন