আমরা কারা?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ডেভিড রেইখ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ডেভিড রেইখ।

অনন্য দাঁড়িয়ে আছে আবছা আলোতে। দূরবর্তী আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তার মনে প্রশ্ন এল, ‘আমি কে?’ প্রশ্নের পিছু ধাওয়া করে উত্তরও এল। অনন্য। কিন্তু এইটুকু উত্তরে মন ভরল না তার। প্রশ্নের শাখা-প্রশাখা তৈরি হলো, যেনবা গ্রিক পুরাণের হাইড্রা। একটার মীমাংসা হয় তো আরেকটা গজায়। অনন্যরও তাই হলো। কোথা থেকে এলাম? কার উত্তরাধিকার আমি? কতটা অনন্য? এমন হাজারটা প্রশ্ন মাথার দখল নিতে শুরু করল। অনন্যর এই প্রশ্নগুলো নতুন নয়। সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এই প্রশ্ন করে আসছে। একই সঙ্গে উত্তর খুঁজছে। এই উত্তর খোঁজার পথ ধরেই জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিকশিত হয়েছে।

আমরা কারা; এই আপাতসহজ ও সাধারণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই মানুষ হাজির হয়েছে প্রত্নের পাহাড়ের সামনে। মাটি খুঁড়ে বের করেছে হাজার-লাখ বছরের পুরোনো ইতিহাস। একের পর এক প্রাচীন সভ্যতার দরজা খুলে গিয়েছে মানুষের সামনে। উঠে এসেছে অজস্র তথ্য। জ্ঞানের রাজ্যে মানুষের এই ভ্রমণ একমুখী নয়। রয়েছে হাজারটা দরজা। এরই এক দরজায় বাস জিনবিজ্ঞানের। অনন্যর প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন আমাদের সেই দরজায় টোকা দিতে হবে। দরজাটা খোলাই আছে। আর সেই খোলা দরজায় আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ডেভিড রেইখ। এই সময়ের একজন বিখ্যাত জিনবিজ্ঞানী। প্যালিওজেনেটিসিস্ট। বেশ খটমটে শুনতে। সোজা বাংলায় বললে বিভিন্ন প্রাচীন নমুনায় পাওয়া প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে মানুষের ইতিহাস খোঁজাটাই রেইখের কাজ। এই ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসিদ্ধিও রয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের।

সম্প্রতি ‘হু উই আর অ্যান্ড হাউ উই গট হেয়ার: এনশায়েন্ট ডিএনএ অ্যান্ড দ্য নিউ সায়েন্স অব দ্য হিউম্যান পাস্ট’ নামের একটি বই প্রকাশ করেছেন ডেভিড রেইখ। নতুন এই বই এরই মধ্যে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে এমন নয় যে তিনি এখানে খুব নতুন কিছু বলেছেন। বরং তিনি এখন পর্যন্ত জিনবিজ্ঞানের হাত ধরে আবিষ্কৃত মানুষের অতীতকে সুসংবদ্ধভাবে হাজির করেছেন। আমরা কারা, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই রেইখ অগ্রসর হয়েছেন।

ডেভিড রেইখের হাত ধরে একটু জেনে আসা যাক। অনন্যও চলুক সঙ্গে। ডেভিড রেইখ কাজ করেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজির পরিচালক সাঁতে পাবোর সঙ্গে। এর আগেই পাবোর নেতৃত্বে নিয়েনডার্থেলদের (বিবর্তনের পথে আধুনিক মানুষের সবচেয়ে কাছের আত্মীয়) জিন সিকোয়েন্স করা হয়ে গেছে। সেই গবেষণায় এক দারুণ তথ্য সামনে আসে। আর তা হলো, নিয়েনডার্থেলদের সঙ্গে আফ্রিকা থেকে আসা মানুষদের মিশ্রণ ঘটেছিল। এই আবিষ্কারে নড়েচড়ে বসেন রেইখ। তাঁরা বিষয়টি গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন অনুভব করেন। এই নিয়ে বিশ্লেষণের পর্যায়েই তাঁর হাতে ধরা পড়ল আরেক নতুন মানবগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। ডেনিসোভানস। আজ থেকে পাঁচ লাখ বছর আগে নিয়েনডার্থেলদের সময়েই এদের অস্তিত্ব ছিল। নিয়েনডার্থেলদের নিকটাত্মীয় এই ডেনিসোভানরা বাস করত ইউরেশিয়া অঞ্চলে। বর্তমানে নিউগিনি অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে আবার এই ডেনিসোভানদের সংযোগ ঘটেছিল। আর এই সংযোগের মধ্য দিয়ে ডেনিসোভানরা নিজেদের জিনের চিহ্ন রেখে যায় এই আধুনিক মানুষদের শরীরে, যা পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তার পেয়ে পৌঁছায় আজকের এশিয়ায়। অর্থাৎ আজকের এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মানুষদের মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র রয়েছে। একই উৎস থেকে তারা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে। এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে এই সাধারণ সূত্রটি আবার বেশ জোরালো। অর্থাৎ অনন্য পৃথক কেউ নয়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা শতকোটি মানুষের সঙ্গে তার একটি গভীর সংযোগ রয়েছে, যা লেখা রয়েছে তার ডিএনএতে।

এই গবেষণা চলার সময়ই রেইখ ও তাঁর দল আফ্রিকায় পাওয়া বিভিন্ন ফসিল বিশ্লেষণ করে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের সন্ধানে নামেন। এই গবেষণা নিয়ে এল আরেক যুগান্তকারী তথ্য। ১০ বছর আগেও যেখানে প্রতিষ্ঠিত ভাষ্য ছিল, আধুনিক মানুষের উৎপত্তি আনুমানিক ৫০ হাজার বছর আগে। রেইখ ও তাঁর দলের গবেষণায় দেখা গেল, আধুনিক মানুষের যাত্রা তারও বহু আগে। কত আগে? রেইখ বলছেন, অন্তত ২ লাখ বছর আগে।

‘হু উই আর অ্যান্ড হাউ উই গট হেয়ার’ বইয়ের কভার।
‘হু উই আর অ্যান্ড হাউ উই গট হেয়ার’ বইয়ের কভার।

পাঁচ বছর ধরে করা আরেক গবেষণায় রেইখ দেখেন, গত ১০ হাজার বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। এই সময়ের মধ্যেই আধুনিক মানবসমাজের সর্বশেষ বড় জনস্থানান্তরের ঘটনাগুলো ঘটে। বর্তমান ইউরোপের কথাই ধরা যাক। এই অঞ্চলের বর্তমান জনগোষ্ঠীটি গড়ে উঠেছে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে ইউরেশিয়ার তৃণভূমি থেকে জনস্থানান্তরের মধ্য দিয়ে। রেইখের হাতে থাকা ফসিলের ডিএনএ বলছে, ভারতের ক্ষেত্রেও এই একই সত্যই খাটে। অর্থাৎ যে জনস্থানান্তর ইউরোপ গড়েছিল, সেই জনস্থানান্তরই আজকের ভারতবর্ষের মানবগোষ্ঠীর আদি উৎস। দুই অঞ্চলেই ইউরোশিয়ার পশুপালক, পশ্চিম এশিয়ার কৃষক ও আদি শিকারি সমাজের মানুষেরা এসে ভিড় করেছিল। আর কয়েক হাজার বছর ধরে একটি অঞ্চলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিশ্রণ ও অব্যাহত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এসব জনগোষ্ঠী একটু একটু করে আকার পেয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শব্দটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রেইখ বলছেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা মানবগোষ্ঠীগুলো সত্যিই কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যা আগের এ-সম্পর্কিত ধারণাটিকে খারিজ করে দেয়।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে ঠিক কী? উদাহরণ দেওয়া যাক। আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে ইউরোপীয়-আমেরিকানদের চেয়ে প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি। রেইখ ও তাঁর দল প্রোস্টেট ক্যানসার রয়েছে এমন ১ হাজার ৫৯৭ জন আফ্রিকান-আমেরিকানের ওপর গবেষণা করেন। দেখা যায়, এই সব ব্যক্তির জিনে পশ্চিম আফ্রিকার বংশগতির চিহ্নবাহী জিনের উপস্থিতি গড়পড়তা মানের চেয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। পরে এই বিশেষ জিনে প্রোস্টেট ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট সাতটি ঝুঁকি শনাক্ত হয়। আবার উত্তর ইউরোপীয়রা দক্ষিণ ইউরোপীয়দের চেয়ে লম্বা। আফ্রিকান-আমেরিকানদের তুলনায় ইউরোপীয়-আমেরিকানদের মধ্যে স্ক্লেরোসিস রোগ বেশি দেখা যায়। এমন বহু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যাবে, যা বিশেষ কোনো একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যেই তুলনামূলক বেশি। আর এটি ঘটে বিবর্তনের ধারায় কোনো একটি অঞ্চলের বা গোষ্ঠীর মানুষের জিন মানচিত্রে সূচিত হওয়া কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশেষ এসব বৈশিষ্ট্য বা প্রবণতার জন্য ইউরোপীয়-আমেরিকান, আফ্রিকান-আমেরিকান কিংবা পশ্চিম আফ্রিকান এই বিভাজন টানা কি সংগত? নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা নিবন্ধে রেইখ বলছেন, হ্যাঁ, সংগত, এমনকি প্রয়োজনও। বিশেষত কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি কী মাত্রায় রয়েছে, তা জানার জন্যই এটা জরুরি।

জিনবিজ্ঞানী ডেনিয়েল পোসথুমার নেতৃত্বে ৭০ হাজার ব্যক্তির ওপর পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে কমবেশি ২০টি জিনে পার্থক্য রয়েছে। আর এই পার্থক্যের কারণে তাদের শারীরিক গড়ন, আচরণগত বিকাশের ধারাও আলাদা হয়। কেন এমনটা হয়? কারণ, মহাজনস্থানান্তরের একটি পর্যায়ের পর বিভিন্ন জনগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় ধরে পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিল। দীর্ঘ সময় বলতে ঠিক কতটা? রেইখ বলছেন, কমপক্ষে ৪০ হাজার বছর। এই সময়টি যেকোনো প্রজাতির ডিএনএর গঠনে তথা জিন মানচিত্রে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খোদাই হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর এটিই হয়েছে।

অর্থাৎ একই উৎস থেকে বিকাশ লাভ করে মানুষ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। বিভিন্ন প্রয়োজনে তারা ছড়িয়ে পড়েছে। কখনো কখনো দলে দলে পাড়ি জমিয়েছে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্যাভাব-এসব নানা কারণেই এটি ঘটেছে। এই দলে দলে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে পাড়ি জমানোটাই জনস্থানান্তর। আর এটি যখন ব্যাপক পরিসরে ঘটেছে তখন তাকে বলা হচ্ছে মহাজনস্থানান্তর। এই স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে আবার মানুষ এক থেকে আরেক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বেড়ে উঠেছে ভিন্ন জলোহাওয়ায়। আর এই ভিন্ন আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য তাদের লড়াইয়ের পথও আলাদা হয়ে গিয়েছে। সূর্যের আলো বেশি তীব্রভাবে পড়ে এমন অঞ্চলে হাজার বছর ধরে বাস করতে থাকা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মেলানিনের কথা বলা যায় এখানে। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষের ত্বকে এই উপাদান বেশি থাকে, যা ত্বক কালো হওয়ার মূলে রয়েছে। আবার ঠিক উল্টোভাবে শীতপ্রধান অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়া মানুষের মধ্যে বিকশিত হয়েছে অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য। এভাবে একেক অঞ্চলের মানুষ একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। এটাই রেইখের আবিষ্কারের মোদ্দা কথা।

অনন্য এবার ভাবনায় পড়ে। তাহলে কী দাঁড়াল? ‘আমি একই সঙ্গে অনন্য এবং অনন্য নই?’ অনন্যর ভ্রু কুঁচকে যায়। এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। রেইখের কথায় এমনটা অনেকেরই হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসে ডেভিড রেইখের নিবন্ধ প্রকাশের পর নানা ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির হয়েছে। এখনো হচ্ছে। কেউ বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা মানবগোষ্ঠীগুলো কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী; এমন কথায় বর্ণবাদের মতো বিষয় মাথাচাড়া দিতে পারে আবার। এমনকি ইউজেনিক্সের মতো প্রকল্পের ভূতও সামনে হাজির হতে পারে নতুন রূপে। বিশেষত আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নয়া নাৎসিবাদী তৎপরতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে শঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে।

সচেতন আধুনিক মানুষমাত্রই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ কারণে অভিন্ন উৎস থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া মানবসমাজে সাম্যের ধারণাটিকেই তাঁরা প্রসার করতে চান। তাঁরা বলেন, জীববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেক গোষ্ঠীর কোনো ফারাক নেই। আফ্রিকা ও আমেরিকার মতো দাস ব্যবসার ক্ষত বয়ে চলা অঞ্চলগুলোয় ‘সব মানুষ সমান’ এই তত্ত্ব থিতু হয়েছিল বিজ্ঞানেরই পৃষ্ঠপোষকতায়। ফলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি পাল্টে গেলে সেই ভিতটি কিছুটা টলে উঠবে, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই।

আর ভুল ব্যাখ্যা হাজির হলে সংকটের আশঙ্কা আরও বাড়ে। এমটা হচ্ছেও। একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে। নিউইয়র্ক টাইমসের বিজ্ঞান লেখক নিকোলাস ওয়েড একজন বুদ্ধিদীপ্ত সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত। ২০১৪ সালে ‘আ ট্রাবলসাম ইনহেরিট্যান্স: জিনস, রেস অ্যান্ড হিউম্যান হিস্টরি’ নামে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়। এতে তিনি বলেছেন, ‘আধুনিক গবেষণা মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের বিদ্যমান ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করছে। মানবগোষ্ঠী সম্পর্কিত এখনকার গবেষণায় মধ্যযুগীয় বিভাজনের ধারণাটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।’

আজকের এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মানুষদের মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র রয়েছে। একই উৎস থেকে তারা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে।
আজকের এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মানুষদের মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র রয়েছে। একই উৎস থেকে তারা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে।

ডেভিড রেইখের মতে, ‘ওয়েডের প্রথম কথাটি নিঃসন্দেহে সত্য। তবে সংকট হচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় মতটিতে। এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য। কারণ, জিনবিজ্ঞানের গবেষণায় মানবগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যের বিষয়টি উঠে এলেও তা বর্ণবাদী অতীতের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কারণ, জিনবিজ্ঞান এ-ও বলছে যে প্রত্যেক মানুষ আলাদা। অর্থাৎ একজন ইউরোপীয় আরেকজন ইউরোপীয় থেকে আলাদা। ঠিক একইভাবে একজন আফ্রিকান আরেকজন আফ্রিকান থেকে আলাদা। আবার ইউরোপীয়দের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, ঠিক যেমনটা আফ্রিকানদের মধ্যে। একে প্রাচীন বর্ণবাদী দৃষ্টিতে দেখবার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের শঙ্কা রয়েছে। এটা সত্য। আর এই শঙ্কার মূলে রয়েছে কিছু মানুষের অশুভ তৎপরতা। কিন্তু সত্য তো সত্যই। তা আজ হোক, কাল হোক বেরিয়ে আসবে। বিজ্ঞান জিন মানচিত্র খুঁড়ে মানুষের পরিচয়, বিবর্তন-এই সবই বাইরে নিয়ে আসছে। এটি স্বীকার করে বিজ্ঞানীদের উচিত সাহসের সঙ্গে কথা বলা। একই সঙ্গে স্বল্প ধারণা নিয়ে কোনো প্রমাণ ছাড়া কিছু বলা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা উচিত, ইউরোপীয়, এশীয়, আমেরিকান কিংবা আফ্রিকান-যেকোনো অঞ্চলের মানুষের মধ্যে মোটা দাগে দুটি অংশ রয়েছে-একটি নারী, অন্যটি পুরুষ। এই দুই অংশের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। শারীরিক গড়ন থেকে শুরু করে মনোজগৎ-সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। এই দুই অংশের জিন মানচিত্রেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। এর মানে এই নয় যে কোনো একটি অংশ অন্যটির থেকে সেরা। বৈচিত্র্যের ভিতেই সমতার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অঞ্চলভেদে বিকাশ হওয়া মানবগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গিটিই রাখতে হবে।’