দুনিয়া বদলে গুগলের সাত প্রকল্প

মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাবে উড়ুক্কু সাইকেল, রাস্তায় চলবে চালকবিহীন গাড়ি, মানুষের চোখে থাকবে বিশেষ চশমা; এগুলো এখন আর কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বিষয় নয়। এসব নিয়েই কাজ করছে গুগল।

মার্কিন প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, গুগল যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে তা আর কেউ করছে না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ ধারণা করছেন, দুনিয়া বদলে দেওয়ার মতো পরিবর্তন আনবে গুগল। সার্চ দিয়ে যেমন তথ্য পাওয়ার বিষয়টিকে বদলে দিয়েছে গুগল তেমনি চশমা কিংবা অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়েও দুনিয়াতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে গুগল।
অনেকেই গুগলের গোপন পরীক্ষাগার ‘এক্স ল্যাব’ এর কথা শুনেছেন। গুগলের এ পরীক্ষাগারে অদ্ভুত সব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলে। যার কোনোটি বাস্তবে আলোর মুখ দেখে আবার কোনো কোনোটি পরীক্ষাগারেই সুপ্ত থেকে যায়। প্রচলিত যে, যত অদ্ভুত ধারণাই হোক না কেনো গুগলের প্রকৌশলীরা তা গুগলের এ পরীক্ষাগারে বাস্তবায়ন করে দেখার সুযোগ পান। সম্প্রতি ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারে দুনিয়া বদলে দিতে পারে গুগলের এমন ৭টি প্রকল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

চালকবিহীন গাড়ি
চালকবিহীন গাড়ি

চালকবিহীন গাড়ি
দীর্ঘদিন ধরেই চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে গুগল। গুগলের গাড়ি ইতিমধ্যে হাইওয়েতে নিরাপদভাবে চলাচলও করেছে৷ ভিডিও ক্যামেরা, রাডার সেন্সর ও লেজারের ব্যবহার এবং আশেপাশের গাড়ি ও পরিবেশ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সামনে চলতে পারে গুগলের ‘বুদ্ধিমান’ গাড়ি। ২০১৭ সালের মধ্যে চালকবিহীন গাড়ি ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে গুগল আশা করছে। এরপর সেটাকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকীকরণ করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরও কয়েক বছর লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গাড়ির পাশাপাশি চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি তৈরির পরিকল্পনাও করেছে গুগল। গুগলের এই গাড়িতে নির্দিষ্ট রাস্তায় যাত্রী ওঠা-নামার সুবিধা থাকবে। গুগলের এ গাড়ির নাম হবে রোবো ট্যাক্সি। গুগলের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, চালকবিহীন ট্যাক্সি সুবিধা চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ধরন পাল্টে যাবে। চালক ছাড়াই নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রীকে পৌঁছে দেবে গুগলের গাড়ি। গাড়ির উন্নত প্রযুক্তি দুর্ঘটনা কমাবে এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না।

গুগলের সাইকেল
গুগলের সাইকেল

উড়ুক্কু সাইকেল
যানজটে আটকে থাকা আর নয়। মাথার ওপর দিয়ে উড়বে পরিবেশ বান্ধব উড়ুক্কু সাইকেল। গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ উড়ুক্কু বাইক তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। এটা এখনও নিছক কল্পনা হলেও মানুষ আরও বেশি পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে সাইকেল ব্যবহার করবে এটাই তাঁর চাওয়া। তবে গুগলের উড়ুক্কু যান সাইকেল যে একেবারেই অসম্ভব নয় তা গুগলের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো দেখলেই বোঝা যায়। বিশ্লেষকেরা বলেন, গুগলের যে প্রযুক্তি সক্ষমতা ও দক্ষ প্রকৌশলী রয়েছে তা দিয়ে সহজেই ড্রোন বা চালকবিহীন বিমান তৈরি করা সম্ভব। আর এই প্রযুক্তিতে একদিন উড়ুক্কু সাইকেলও তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। এ ছাড়াও গুগল এরমধ্যেই রোবট গবেষণায় জোর দিয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন প্রজন্মের রোবট তৈরি করতে পারে এমন সাতটি প্রতিষ্ঠানও কিনেছে গুগল। অবশ্য, গুগল তাঁদের রোবট নিয়ে পরিকল্পনার কথা কঠোরভাবে গোপন রেখেছে। এ বিষয়ে একেবারেই মুখ খুলতে নারাজ তাঁরা। গুগলের বিনিয়োগ দেখে ধারণা করছেন আগামী এক দশকের মধ্যে নতুন কিছু উপহার দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।

কন্টাক্ট লেন্স
কন্টাক্ট লেন্স

বিশেষ কন্টাক্ট লেন্স
একটি বিশেষ কন্টাক্ট লেন্স নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে গুগল। এই কন্টাক্ট লেন্সের মাধ্যমে চোখের পানিতে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হবে।গুগলের দাবি, তাদের তৈরি বিশেষ এই কন্টাক্ট লেন্স ডায়াবেটিস রোগীদের কাজে লাগবে। তাদের তৈরি কন্টাক্ট লেন্সে দুটি স্তর থাকবে। এই স্তরের মধ্যে ক্ষুদ্র ওয়্যারলেস চিপ ও গ্লুকোজ সেন্সর বসানো থাকবে। এই লেন্সের সঙ্গে বসানো ক্ষুদ্রাকার এলইডি লাইট চোখের পানিতে গ্লুকোজের পরিমাণ জানাবে। গুগল একজোড়া স্মার্ট কন্টাক্ট লেন্স তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ এই কন্টাক্ট লেন্সটিকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে এখনও অনেক কাজের প্রয়োজন হবে। তাই এটি হাতের নাগালে পেতে আরও কিছুদিন দেরি হবে।

ইন্টারনেট বেলুন
ইন্টারনেট বেলুন

ইন্টারনেট বেলুন
‘প্রজেক্ট লুন’ নামের একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে গুগল। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ইন্টারনেট বেলুনের সাহায্যে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। মাটির নিচে বা প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে অভিনব এক পদ্ধতি গুগলের লুন প্রকল্পটি। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে প্রায় ৩০টি সুপারপ্রেসার বেলুন আকাশে উড়িয়ে এই প্রকল্পটি পরীক্ষা করে দেখে গুগল। এ বেলুনগুলো নিয়ন্ত্রিত পথে উড়তে সক্ষম হবে। এর নেটওয়ার্ক তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেটের (থ্রিজি) মতো গতি দেবে। গুগলের দাবি, সংযোগ বিচ্ছিন্ন বিপর্যয়গ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ততপরতায় সহায়তা করার ক্ষেত্রে একসময় ব্যবহার করা হবে ইন্টারনেট সরবরাহকারী এ বেলুন। এ প্রকল্পের আওতায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা এ ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা পাবে।

মডুলার স্মার্টফোন
মডুলার স্মার্টফোন

মডুলার স্মার্টফোন

নিজের সুবিধা অনুযায়ী কম্পিউটার আপডেট করার মতো যন্ত্রাংশ বদল করে স্মার্টফোনও আপডেট করে নেওয়া যাবে। এমন একটি প্রকল্প ‘আরা’। এ প্রকল্প নিয়ে অনেকদূর এগিয়েছে গুগল। গুগল জানিয়েছে, ‘আরা’ নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকরা তাঁদের স্মার্টফোনের জন্য প্রয়োজনমতো হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করে নিতে পারবেন। কাস্টোমাইজ করার সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন তৈরির ক্ষেত্রে ‘ফোনব্লকস’ নামের একটি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুগল। বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ‘আরা’ প্রকল্পটি সফল হলে প্রতি বছর নতুন ফোন কিনতে হবে না। এর পরিবর্তে নতুন প্রসেসর, কিংবা উন্নত ক্যামেরা মডিউলের মতো যন্ত্র কিনে নিয়মিত মোবাইল ফোন সর্বশেষ প্রযুক্তি দিয়ে হালনাগাদ করার সুবিধা থাকবে।

গুগল গ্লাস
গুগল গ্লাস

গুগল গ্লাস
গুগল গ্লাস বা গুগলের প্রযুক্তি চশমা এরমধ্যে প্রযুক্তি বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। এই চশমা মানুষকে প্রযুক্তির আরও কাছাকাছি আনছে। এ বছর ভার্জিন আটলান্টিক গুগল গ্লাস ব্যবহার করে বিমানবন্দরে যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। গুগল গ্লাসের উন্নত কয়েকটি সংস্করণ তৈরিতে কাজ করছে গুগল। ভিডিও দেখা, ছবি তোলা ও ওয়েবসাইট দেখার পাশাপাশি স্মার্টফোনের মতো বিভিন্ন কাজ করা যাবে এই গ্লাসের সাহায্যে। স্মার্টফোনের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য কমান্ড দেওয়ার পদ্ধতিতে। কণ্ঠস্বর প্রযুক্তি চশমাটির ডান কাচের ওপর একটি ছোট ডিসপ্লে স্ক্রিন আছে। এটি গুগলের অ্যান্ড্রয়েডে চলে। গুগলের এ চশমাকে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং পণ্য হিসেবে দেখছেন। ভবিষ্যতে পরিধেয় কম্পিউটার পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হবে মানুষ।

গুগল ফাইবার
গুগল ফাইবার

গুগল ফাইবার
গিগাবিট গতিতে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে ফাইবার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে গুগল। সেকেন্ডে ১০ গিগাবিট গতিতে তথ্য স্থানান্তর করা যাবে গুগলের ফাইবার প্রকল্পের মাধ্যমে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরির লক্ষে গুগলের নেওয়া এই পদ্ধতিটিকে বলা হচ্ছে ‘পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রে চালু করা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গুগল ফাইবার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে এক গিগাবিট তথ্য স্থানান্তর করে গুগল। এবার গুগল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যাতে তথ্য স্থানান্তরের এই গতি আরও দ্রুততর হবে। ২০১৭ সাল নাগাদ দ্রুতগতির এই ইন্টারনেট সেবা চালু করতে সক্ষম হবে গুগল।