কী করবেন, কী করবেন না

তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিংয়ে এখন যুক্ত উল্লেখযোগ্য অনেক মুক্ত পেশাজীবী। সফলতা পেতে ফ্রিল্যান্সারদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তা জেনে নেওয়া যাক।

পরিচিতি বাড়াতে হবে
অনলাইন বাজারে (মার্কেটপ্লেস) প্রতিদিন নতুন কাজ আসছে। সেগুলোতে আবেদন করে কাজ পাওয়া যায়। পাশাপাশি আপনার নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে, পরিচিতি বাড়াতে হবে। একজন গ্রাহককে ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে পারলে তিনি তাঁর পরিচিতদের কাছে আপনার কাজের প্রশংসা করবেন, যা ভবিষ্যতে আরও কাজ পেতে সাহায্য করবে। গ্রাহক বা ক্লায়েন্টদের মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তাঁদের কাছে নতুন কোনো কাজ আছে কি না কিংবা তিনি এমন কাউকে চেনেন কিনা যাঁর কাছে আপনার জন্য কাজ থাকতে পারে।
বিনা মূল্যে কাজ নয়
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটা ‘মরণফাঁদ’। নিজের পাশাপাশি অন্য কর্মীদের পেশার ক্ষতি করছেন আপনি, যা কখনো করা যাবে না। মেধা খুবই মূল্যবান, সৃজনশীল শিল্পীদের কাছে তো বটেই। এটা মনে রাখতে হবে, কাজটি গ্রাহক নিজে করতে পারবেন না বলেই আপনাকে তাঁর প্রয়োজন। আপনার সময় এবং কাজ দুটোই মূল্যবান, এ বোধ যাঁদের নেই তাঁদের কাজ কখনো করতে যাবেন না।

সংগঠিত হতে হবে
আপনার নিজের বা প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাড তৈরি করে নিন। যদি ক্লায়েন্ট ঠিক সময়ে মূল্য পরিশোধ না করেন, তাহলে চালানপত্র পাঠিয়ে দিয়ে মনে করিয়ে দিন। লজ্জা বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো নতুন কাজ শুরুর আগে গ্রাহককে সেই কাজের পূর্ণ বিবরণ ও কোনো নির্দিষ্ট মূল্যের মধ্যে আপনি ঠিক কী কী ও কতটুকু কাজ করবেন, তা জানিয়ে দিন। আপনার করা সৃজনশীল কোনো কাজ গ্রাহকের পছন্দ না-ও হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি সংশোধন চাইবেন। কাজ শুরুর আগে জানিয়ে দিতে হবে যে নির্দিষ্ট মূল্যের ভেতরে আপনি ঠিক কতবার কাজটি সংশোধন বা পরিবর্তন করে দেবেন। এর পরও কোনো পরিবর্তন চাইলে সে ক্ষেত্রে আপনার প্রতি ঘণ্টার কাজের জন্য নির্দিষ্ট অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে দিন। গ্রাহক যেমন আপনার কাজ এবং অভিজ্ঞতা যাচাই করে দেখবেন, আপনিও তাঁর ব্যাপারে কিছুটা খোঁজ নিয়ে দেখুন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। মনে কোনো সন্দেহ থাকলে অবস্থা বুঝে কিছু টাকা অগ্রিম চাইতে পারেন।
সব কাজ করতে যাবেন না
দক্ষ হয়ে উঠলে সাধারণত কাজের অভাব হয় না। তাই বলে কি আপনি সব কাজ একসঙ্গে করতে পারবেন? ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত কাজের সুযোগ পেলে না বলতে চান না। কিন্তু এমন কাজে হাত দিলেন, যা ঠিক সময়ে ঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন না, এতে আপনার সুনাম নষ্ট হবে। তবে কোন কাজটি করবেন কোনটি ছেড়ে দেবেন, তা ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। অর্থের পরিমাণ অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শুধু তা দেখেই কোনো কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত নয়। ভেবে দেখতে হবে কাজটি করতে কত সময় লাগতে পারে, সে সময় আমার হাতে আছে কি না, যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে তা সেই সময়ের জন্য উপযুক্ত কিনা, অন্য কোনো শর্ত জুড়ে দিয়েছে কি না, ইত্যাদি। যদি কোনো কাজই উপযুক্ত মনে না হয়? কী করবেন? ভালো একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করুন, আনন্দও পাবেন, জ্ঞানও বাড়বে! কাজের জন্য ঘন ঘন আবেদন করুন ‘ঘরে বসে আয়’ কথাটা শুনে অনেকে ভেবে বসবেন না আয় বোধ হয় দরজায় এসে কড়া নাড়বে! নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা থাকতে হবে, নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে, পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে, সবই ঠিক আছে। এর পরও আপনাকে কাজের জন্য আবেদন করে যেতে হবে। একের পর এক, বারবার। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স কাজের অনেক ওয়েবসাইট আছে, সেগুলোতে পর্যাপ্ত কাজও আছে। দরকার শুধু খুঁজে বের করা। এখানে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন। যেমন, আরএসএস ফিড তৈরি করতে পারেন, যেখানে আপনার জন্য উপযুক্ত কাজগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে জমা হতে থাকবে। গুগল অ্যালার্ট (www.google.com/alerts) এ ক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে।

নিজের ওপর অসন্তুষ্ট হবেন না
সৃজনশীল মানুষদের ‘সমস্যা’ হলো তাঁরা নিজের মনের মতো করে সবকিছু তৈরি করেন, কিছুটা আবেগি হয়ে থাকেন। নিজের মেধা, চিন্তাশক্তি, সৃজনশীলতা তাঁর কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। কিন্তু এটা তো জরুরি না যে সবাই আপনার কাজ পছন্দ করবে। কিছু খারাপ মন্তব্য, কিছু সমালোচনা আসতেই পারে। মন খারাপ করা যাবে না, কিংবা গ্রাহককে গালিও দেওয়া যাবে না। এতে গ্রাহকের পাশাপাশি নিজের কাছেও আপনি ছোট হয়ে যাবেন। বরং তাঁদের মন্তব্য মেনে নিয়ে আরও ভালো কাজ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করুন, যা আপনার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তুলবে। সবার কাছে, নিজের কাছেও।

কাজে আন্তরিক হতে হবে
কাজে অবশ্যই পেশাদারির পরিচয় থাকতে হবে। কিন্তু নিজের ব্যক্তিসত্তা ভুলে গেলে চলবে না। সব সময় ক্লায়েন্টের হ্যাঁ–র সঙ্গে হ্যাঁ না মিলিয়ে নিজের বক্তব্য সুন্দরভাবে তুেল করতে হবে। কারণ, গ্রাহক নিজে কাজটি পারেন না বলেই একজন বিশেষজ্ঞকে ওই কাজে নিয়োগ দিতে চান। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে।
সূত্র: ননসেন্স সোসাইটি ওয়েবসাইট