অদল বদল

আহ! শেষ অবধি ঈদের কাপড় কিনে ফেলেছি। এখন পোশাক তৈরির অপেক্ষা। ভাবতেই ভালো লাগছে, আর মাত্র ১ মাস ১৫ দিন। ঈদের পোশাক বলে কথা। পোশাক কেমন হবে, ডিজাইন কেমন হবে, ডিজাইনের সঙ্গে কাপড় মানাবে কিনা সেই সংশয়েই এত দেরি। দু’রাত নির্ঘুম কেটেছে, ইচ্ছে করছে বারবার আলমারি থেকে কাপড় দেখি। আম্মুতো বকাবকি, ”বারবার দেখার কি আছে? সকাল থেকে কমতো দেখলিনা, আর কত দেখতে হবে? . . ”

কাল সকালেই দরজি কাকির কাছে যাব। এবার ঈদে খুব মজা হবে, কোথায় কোথায় যাব মনে মনে লিস্ট করে নিয়েছি। সবাইকে জামা দেখানো চাই।

কাকি ক’দিন আগে আমাকে তার বাড়ি যেতে বারণ করেছে। জামা তৈরি করতে দেওয়ার পর সকাল দুপুর বিকেল অন্তত পাঁচ পাঁচ বার তার কাছে যাই। সে আগেই বলে দিয়েছে জামা দিতে দেরি হবে, ডিজাইন তৈরি সময়ের ব্যাপার।

চাঁদের রাতেও একবার ঢু’মারলাম। কাল পোশাক দেবে শুনে মন খারাপ হয়ে যায়। ” ঈদের পোশাক, ভালো ডিজাইন, দেরিতো হবেই. . ” আম্মুর কথাই ঠিক।

ফজরের আজান শেষ হতেই কাকির বাসায় যাই। কাকি পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত। পোশাক তৈরির ফাঁকে ফাঁকে কাকি রান্নাও করছেন, এ জন্য আরও দেরি হচ্ছে। এক ফাঁকে আমি অসম্পূর্ণ জামা উল্টে পাল্টে দেখি। ওয়াও! অসম্ভব সুন্দর। কাকি সত্যি খুব ভালো তৈরি করে। মনে মনে তৈরি হওয়া রাগ চলে যায়। ঈদের রান্না, আবার পোশাক তৈরি, কাকির কম কষ্ট হচ্ছে না। কি জানি কখন ঘুম থেকে জাগছে। ভাবছি কাকির কাজে সাহায্য করব, কিন্তু আমিতো রান্না পারি না। আমি কি পারি? ভাত রান্না পারি, ডিম ভাজতে পারি। এখনতো এসব রান্না হয় না, তাহলে? হ্যাঁ আামি পেঁয়াজ কাটতে পারি। সাধারণত ঈদের সকালে সেমাই, নুডলস, ফিরনি রান্না করা হয়। নুডলসে পেঁয়াজ দরকার।

ছোট বলেই হয়তো কাকি আমার থেকে সাহায্য নিতে চাচ্ছেননা। অনেক বলার পর কাকি আমাকে চুলার আগুন দেখতে বললেন যেন নিভে না যায়।

এতক্ষণে সুমাইয়া, জুয়েনা, ময়না বাসায় চলে এসেছে। আমাদের সাতটায় ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। এখন সকাল আটটা।

আগুন দেখতে দেখতেই মনে হলো কাকির ঘর এলোমেলো। ভাবছি আমিই কেন গুছিয়ে দিচ্ছিনা। তার কাজ এগোবে।

এখন নয়টা ত্রিশ। অবশেষে জামা তৈরি শেষ। বাসায় এসে দেখি ফুপাতো বোন সুরাইয়া এসেছে, সঙ্গে অনু আপু। খুব উল্লাস নিয়ে তাদের পোশাক দেখাই। ওহ! আজ আমাকে ঠিক রাজকন্যার মতো লাগবে। ওদের হিংসে হবে আমাকে দেখে। সবার সেরা আমার জামা।

সুরাইয়াকে ডাকছিলাম আমাকে সাজিয়ে দিতে। ড্রয়িংরুমের দিকে যেতেই শুনতে পাই সুরাইয়া বলে, ”ও আপু কিছু বলিস না কেন? দিবি আমকে এমন একটা জামা? ” দুর্বল ভাবে অনু আপু জবাব দিচ্ছেন, ”আমার কি এত টাকা আছে বল? কিভাবে দেব? ”। আমি রুমে না গিয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শুনি সব কথাই শুনি। ওর জন্য আমার খারাপ লাগে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার জামা ওকে দিয়ে দেব।

প্রথমে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে বিশ্বাস করতে পারছে না তাকে আমার জামা দিয়ে দিয়েছি। তারপরেই চোখ বেঁয়ে একটু জল।