অফিস-বাসা দুটোই সামলাবে রোবট

রিরা রোবট
রিরা রোবট

অফিসে বস এখনো পৌঁছাতে পারেননি। এদিকে কিছুক্ষণ পরেই জরুরি সভা শুরু হবে। সহকর্মীরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বস ছাড়া তো শুরুও করা যাচ্ছে না! অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী! এমন সময়ে হঠাৎ ঘরে এসে ঢুকল ছোট্ট একটি রোবট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সময়মতো সভাও শুরু হয়ে গেল। পাঠক, ভাববেন না, রোবট আজকাল অফিস নিয়ন্ত্রণ করার কাজটি শুরু করেছে। সভায় কিন্তু বসই উপস্থিত ছিলেন। ‘রিরা’ নামের ওই রোবটের মাধ্যমে অফিস-প্রধান সামলে নিয়েছেন তাঁর কাজকর্ম।
গত দেড় বছরের চেষ্টায় ‘প্ল্যানেটার লিমিটেড’-এর বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হয়েছে রিরা নামের এই রোবট। একে বলা হচ্ছে টেলিপ্রেজেন্স রোবট। মানে দূর থেকেই ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করবে এ রোবটটি। মুঠোফোনের ইন্টারনেট দিয়ে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায় খুব সহজেই! রিরার পর্দায় আপনাকে যেমন অন্যরা দেখতে পাবেন, তেমনি আপনিও পাবেন অন্যদের দেখা। অনেকটা মুঠোফোনে ভিডিও কলের মতো। তবে এই পদ্ধতির সঙ্গে রিরার পার্থক্য হলো, এটা হাতে নিয়ে ঘুরতে হবে না। যে কেউ দেশের বাইরে থেকেও এটিকে সব জায়গায় ঘোরাতে পারবেন! প্ল্যানেটর লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রিনি ঈশান বলেন, ‘যেখানে আলাদা জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগাতে হয়, সেখানে রিরা সব জায়গায় চলাচল করতে পারে।’
কর্মজীবী একজন মায়ের প্রায় আট-নয় ঘণ্টা কেটে যায় অফিসেই। এর মধ্যে বাসায় রেখে আসা বাচ্চাটার জন্য চিন্তা কি কম? ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করল কি না, ঘুমাল কি না—সবকিছুই খেয়াল রাখতে হয়। রিরাকে ব্যবহার করে বাচ্চার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, বাচ্চার দেখভালও করতে পারবেন। প্ল্যানেটরের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রাকিব রেজা জানালেন, কল-কারখানা, বড় বড় দোকান-শপিং মলেও ব্যবহার করা যাবে এই রোবটকে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রিনি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের রাকিব ২০১০ সাল থেকে কাজ করছেন রোবট নিয়ে। এর মধ্যেই তাঁরা গড়ে তোলেন প্ল্যানেটর লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। ২০১১ সালের আন্তবিশ্ববিদ্যালয় রোবটিক প্রতিযোগিতায় ২৪টি দলের মধ্যে রাকিব তৃতীয় ও রিনি চতুর্থ স্থান লাভ করেন। এরপর ২০১৩ সালে রিনি মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার রোবট তৈরির প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
রিরাকে তৈরি রোবটের কারিগর প্রকৌশলী দম্পতি রিনি ও রাকিবের তৃতীয় প্রয়াস। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু কায়সার রায়হান। এর আগেও দুইবার বাণিজ্যিকভাবে এটিকে তৈরি করেছিলেন তাঁরা। প্রথমবার বানিয়েছিলেন দেশীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। কিন্তু সেগুলোর মান ভালো না হওয়ায় তাঁরা রোবটের ওয়ারেন্টি দিতে পারছিলেন না। এবার দেশের বাইরে আমেরিকা, হংকং, চায়না

দুই নির্মাতা রাকিব ও রিনি  l ছবি: সংগৃহীত
দুই নির্মাতা রাকিব ও রিনি l ছবি: সংগৃহীত

ও মালয়েশিয়া থেকে যন্ত্রপাতি আনিয়ে তৈরি করা হয়েছে রোবটটি। রিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে রিরাকে বাজারে আনব। আর এটি দেশের মানুষের সাধ্যের মধ্যে যেন থাকে, সেই চেষ্টাই আমরা করছি।’ পশ্চিমা দেশগুলোতে এখন হরহামেশাই রিরার মতো রোবটের ব্যবহার হচ্ছে। সেগুলোর দাম ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারের মতো। সেখানে রিনি ও রাকিব জানান, রোবটটিকে এখন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় যে কেউ কিনতে পারবেন।
ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই রোবট নেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তাঁর বাসার জন্য রিরা কিনছেন বলে জানান রিনি ও রাকিব।