চরের নাম প্রথম আলো চর

প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় পড়ছে ২৮০ জন শিক্ষার্থী। ছবি: সফি খান
প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় পড়ছে ২৮০ জন শিক্ষার্থী। ছবি: সফি খান

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নে একটি চরের নাম প্রথম আলো। এর পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দুধকুমোর নদ। গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্রের নদ-নদীর কোলঘেঁষে ২০০৪ সালে চরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ চরটি কুড়িগ্রাম শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে।
২০০৩ সাল। বন্যার্ত মানুষকে ত্রাণ দিয়ে ফিরছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। হঠাৎ চোখে পড়ে কাশবনের ভেতর পানির মধ্যে কয়েকটি খড়ের চালা। বন্যায় বরুয়া, রলাকাটা, কালীর আলগা, ঝুনকার চরের ভাঙনে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল ১৬টি পরিবার। অসহায় এই মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কথা বললেও তাঁরা রাজি হননি। শেষে তাঁদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। খোঁজখবরও নেওয়া হয় রোজ। পানি নেমে যাওয়ার পর বন্ধুসভা ও স্থানীয় এনজিও জীবিকার সহায়তায় উঁচু টিনের ঘর করে দেওয়া হয় তাঁদের। দেওয়া হয় টিউবওয়েল, টয়লেট ও খাদ্যসহায়তা। তাঁদের উদ্যোগেই এই মানুষগুলোর জন্য বিতরণ করা হয় গাছের চারা। শীতে গরম কাপড়, মঙ্গায় খাদ্য, রোজার ঈদে সেমাই দেওয়া ছাড়াও ঈদুল আজহায় হয়েছে গরু কোরবানির ব্যবস্থা। ধীরে ধীরে সর্বহারা এই মানুষেরা খুঁজে পান তাঁদের একটুখানি আশ্রয়। যেকোনো সমস্যায় চরবাসীর ঠিকানা হয়ে ওঠে প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম অফিস।
২০০৪ সালের ঈদ। বন্ধুসভার সদস্য মোখলেছুর রহমানসহ চরে যাই। উদ্দেশ্য গরু কোরবানি দেওয়া। শিক্ষক মোক্তার আহাম্মেদের বাড়ির সামনে চরবাসী হাজির। হঠাৎ সেখানে উপস্থিত একজন বাকি লোকজনের উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘আমরা এই চরে বসবাস করি কিন্তু এর কোনো নাম নেই। মানুষ জিজ্ঞেস করে বাড়ি কোথায়? উত্তর দিই, নদীর ওপার। আমাদের চরের একটা নাম থাকা উচিত। আমি যদি একটা নাম দিই মানবেন?’ সঙ্গে সঙ্গে সবাই বলে মানব। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার ছেলেমেয়েরা আমাদের বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়ান। আমরা খুশি হয়ে আজ থেকে চরের নাম দিলাম প্রথম আলোর চর।’ মহা আনন্দে সবাই চিত্কার করে বলতে থাকে ‘প্রথম আলোর চর, প্রথম আলোর চর’।
এখন সরকারি ও ইউনিয়ন পরিষদে নথিভুক্ত এ নাম। চিঠিপত্র, জন্মনিবন্ধনসহ সব ক্ষেত্রে প্রথম আলো চর নামটি অন্তর্ভুক্ত।
চরবাসীর দাবি ছিল একটাই—আমরা রিলিফ চাই না, কাজ চাই। একটি স্কুল চাই। ২০০৮ সালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এখানে একিট ‘আলোর পাঠশালা’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অবকাঠামো, আসবাব, শিক্ষকের বেতনসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করে আসছে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও সামিট গ্রুপ।
কাশফুলে ছাওয়া চরটির মাঝে টিনের ঘর। চালে বাংলাদেশের পতাকা আঁকা। এটাই প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই দেখছে নিজেদের চরকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। যে চরে বাস করে সাড়ে ৩০০ পরিবার।