বাধা হতে পারেনি দারিদ্র্য

ফরহাদ মাহমুদ
ফরহাদ মাহমুদ
পিংকী রবিদাস
পিংকী রবিদাস

সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভালো খাবার ও ভালো কাপড় জোটেনি। কেউ দিনমজুরি করে, কেউ প্রাইভেট পড়িয়ে, কেউ বা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আজ শুনব দারিদ্র্যের বাধা ডিঙিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনা এ রকম ছয়জন মেধাবীর গল্প।

প্রসঙ্গত, জিপিএ-৫ পাওয়া এমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫০ জনকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেবে।

নাটোর সদর উপজেলার রামাইঘাছি গ্রামের ফরহাদ মাহমুদ সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তিন বছর আগে বাবা আবদুল গফুর মারা গেছেন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। অপর পাঁচ ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বিধবা মাকে নিয়ে ফরহাদ একটি ছোট ঘরে বাস করে। ভাইয়েরা নিজেদের সংসারের খরচ চালাতেই হিমশিম খান। তাই তাঁদের পক্ষে ভাই ও মাকে সহায়তা করা সম্ভব হয় না। এ কারণে সংসারের খরচ জোগাতে লেখাপড়ার ফাঁকে দিনমজুরির কাজ করেছে ফরহাদ। নাটোরের শের-ই-বাংলা মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ফরহাদ বলে, ‘প্রতিদিন স্কুলের সময়ের আগে ও পরে চুক্তিভিত্তিক অন্যের জমিতে কাজ করেছি।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, লেখাপড়া চালিয়ে গেলে ফরহাদ অনেক ভালো করবে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কামুদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী পিংকী রবিদাস উপজেলার আলীনগর চা-বাগানে ছোট্ট একটি ঘরে মা, ভাই ও ভাবির সঙ্গে থাকে। বাবা হরিচরণ রবিদাস সাত বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে চা-শ্রমিক বড় ভাই-ভাবির আয়েই চলত পরিবার। কিন্তু এ দিয়ে পিংকির লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। এ অবস্থায় সে চা-বাগানের কয়েকটি বাসায় গিয়ে টিউশনি শুরু করে। পিংকি চিকিৎসক হতে চায়।লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া গ্রামের প্রিয়াংকা নাসরিনের বাবা আবদুল করিম ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত বছর কাজ করার সময় তিনি অগ্নিদগ্ধ হন। এর পর থেকে আর কাজ করতে পারেন না। অভাবের সংসারে সকালে কিছু না খেয়েই বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে নাসরিনকে। প্রাইভেট পড়ার কোনো সুযোগই ছিল না। তবে এতে সে মোটেও দমে যায়নি। হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রিয়াংকা জানায়, সে চিকিৎসক হতে চায়।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম জি মোস্তফা বলেন,লেখাপড়ার সুযোগ 

তৌহিদুল ইসলাম
তৌহিদুল ইসলাম
সুজিক চাকমা
সুজিক চাকমা
প্রদীপ কুমার শর্মা
প্রদীপ কুমার শর্মা

পেলে প্রিয়াংকা অবশ্যই তার স্বপ্ন পূরণ করতেপারবে।

প্রিয়াংকা নাসরিন
প্রিয়াংকা নাসরিন

এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা ছিল না যশোরের কেশবপুর উপজেলার দোরমুঠিয়া গ্রামের আজগার আলীর ছেলে তৌহিদুল ইসলামের। মানুষের বাড়িতে কাজ করে টাকা জোগাড় করে ফরম পূরণ করেছে সে। শুধু ফরম পূরণই নয়, লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে অল্প বয়স থেকেই তাকে দিনমজুরি করতে হয়েছে। এতকিছুর পরও লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল দোরমুঠিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিকের ছাত্র তৌহিদুলের। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীল রতন সরকার জানান, ইচ্ছা থাকলে যে দারিদ্র্য কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারে না, সেটা দেখিয়েছে তৌহিদুল।

বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। পাহাড়ি ঝোপ-ঝাড়ের পথ। এ রকম পথ মাড়িয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে সুজিক চাকমাকে। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি এলাকার চায়ের দোকানদার পুনংচান চাকমার ছেলে সুজিক কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে গত বছর সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। এবার জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমরা খুশি।’

দুবেলা ঠিকমতো খাবার জোটনি নীলফামারী সদর উপজেলার দক্ষিণ হিন্দুপাড়ার প্রকাশ চন্দ্র শর্মার ছেলে প্রদীপ কুমার শর্মার। তবে দমে যায়নি সে। সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে সে নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রদীপ বলে, ‘আমি প্রকৌশলী হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

[প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন নাটোর, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), লালমনিরহাট, কেশবপুর (যশোর), কাপ্তাই (রাঙামাটি) ও নীলফামারী প্রতিনিধি]