কুড়িগ্রামে প্রথম আলো চর বিদ্যালয়ের উদ্বোধন: সবাই মিলে দেশের উন্নতি করতে হবে

কুড়িগ্রাম গতকাল প্রথম আলো চর বিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রাম গতকাল প্রথম আলো চর বিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ছবি: প্রথম আলো

‘এই দেশ আমাদের সবার। আসুন, সবাই মিলে কাজ করি। আর তা হলেই দেশের উন্নতি হবে।’
গতকাল শনিবার কুড়িগ্রামে ‘প্রথম আলো চর বিদ্যালয়’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আসবাব, লেখার সামগ্রী ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রথম আলো চর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই একদিন দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুড়িগ্রাম ২৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রাজ্জাক তরফদার, সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মালেক ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন। আরও বক্তব্য দেন চরের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন, ফজলার রহমান, ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন, বেসরকারি সংস্থা সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ, গ্রিন ওয়ার্ল্ডের হেদায়েতুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্য দেন কুড়িগ্রামে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সফি খান।
মতিউর রহমান চরবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে এসে আপনাদের অবস্থা দেখে ভালো লাগছে। ঢাকায় থেকে অনেক কিছু অনুভব করা যায় না। এই চরে যাঁরা প্রথম এসেছেন, চরকে বাসযোগ্য করে তুলেছেন, আপনারা নিজেরাও বুঝতে পারেননি, দেশের জন্য কত ভালো কাজ করেছেন।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান আরও বেশিসংখ্যক শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লেখাপড়া করলে পৃথিবীর সব লোকের সঙ্গে মেশা যায়। এ ছাড়া আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এই বিদ্যালয়টি একদিন উচ্চবিদ্যালয়ে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রথম আলোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ২৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রাজ্জাক তরফদার বলেন, দুর্গম চরে বিদ্যালয় স্থাপন করে চরবাসীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার উদাহরণ এই বিদ্যালয়।
ঘোগাদহ ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, চরের শিক্ষার্থীরা পঞ্চম শ্রেণীর পর আর শিক্ষার সুযোগ পায় না। তাই উচ্চবিদ্যালয় নেই এমন দু-তিনটি চর নিয়ে একটি উচ্চবিদ্যালয় করার অনুরোধ জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, ‘সরকারি পরিপত্রের কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় এ ধরনের বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করা যায় না। তবে সরকার চরের বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিদ্যালয়টির উন্নয়নে কাজ করতে চেষ্টা করব।’
অতিথিরা কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে সকাল নয়টায় প্রথম আলো চরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। হেঁটে দীর্ঘ বালুচর পেরিয়ে ও নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে তাঁরা চরে পৌঁছান। চরবাসী ফুলের মালা দিয়ে অতিথিদের বরণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার সদস্যরা। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। পরে পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুহাম্মদ আজিজ খান ও মতিউর রহমান।
২০০৩ সালে ব্রহ্মপুত্র নদে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। নদের মধ্যবর্তী একটি চরে আশ্রয় নেয় বেশ কিছু লোক। প্রথম দিকে চরটির কোনো নাম ছিল না। তার পর থেকেই প্রথম আলো এবং প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা সুখে-দুঃখে চরবাসীর পাশে দাঁড়ান নিয়মিতভাবে। ২০০৪ সালের ১৫ নভেম্বর চরের বাসিন্দারা চরের নাম দেন ‘প্রথম আলো চর’। এরপর চরটি ঘোগাদহ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। চরে কোনো বিদ্যালয় ছিল না। গত বছর প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় চরে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ট্রাস্টের সহায়তায় বিদ্যালয়ে আসবাব, শিক্ষকদের বেতন, শিক্ষার্থীদের পোশাক, খেলাধুলার সামগ্রী ও নাশতা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৫।