মানসিক রোগের চিকিৎসায় কমবে মাদকাসক্তি

প্রথম আলোর সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজিত মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা-৮৪। ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম আলোর সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজিত মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা-৮৪। ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

ডব্লিউভিএ মিলনায়তনের মেঘনা হল। ঢুকতেই দেখা যায়, মাঝবয়সী এক নারী সারিবদ্ধ চেয়ারে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। মাথার নিচে ভ্যানিটি ব্যাগ। কথা বলে জানা গেল, তাঁর ছেলে মাদকাসক্ত। একমাত্র ছেলের এমন পরিণতি তিনি মেনে নিতে পারছেন না—অবস্থা পাগলপ্রায়। তাই অসুস্থ শরীরেও এখানে এসেছেন ছেলের জন্য পরামর্শ নিতে।

প্রথম আলোর সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজিত মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা-৮৪-এর চিত্র এটি। আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্ট।

অনুষ্ঠানের প্রথমাংশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারকে পরামর্শ সহায়তা দেন। আজ মোট ১৫টি পরিবারকে এ সেবা দেওয়া হয়েছে। এরপর শুরু হয় মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তাঁদের অভিভাবকেরা অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদকাসক্তি কোনো অপরাধ নয়, একটি রোগ; যা চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে অপরাধী নয়, রোগী ভাবতে হয়। বিষয়টি লুকিয়ে না রেখে তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে মনে রাখতে তবে, বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি। একই সঙ্গে মাদক ছাড়ার বিষয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তির দৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, মাদক নিরাময়ে সময়, স্থান ও ব্যক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য পূর্বে যে সময় মাদক নেওয়া হতো, সে সময় একা থাকা যাবে না। যাঁদের সঙ্গে এবং যে স্থানে বসে মাদক নেওয়া হতো, সেই বন্ধুদের সঙ্গ এবং মাদক নেওয়ার স্থানটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে হবে।
এরপরও মাদক নিতে ইচ্ছে করলে কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস নিতে হবে, পানি খেতে হবে এবং এ সময়টা অন্য কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
একই ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক আহমেদ হেলাল কিশোরদের মাদক থেকে দূরে রাখতে সন্তানদের শিশুকাল থেকে সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা তৈরি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্তি—ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে মনোরোগ চিকিৎসক ফারজানা রহমান বলেন, মানসিক রোগের চিকিৎসা করালে মাদকাসক্তির সমস্যা কমবে।
ট্রাস্টের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আজিজা আহমেদের উপস্থাপনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন একই ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক জিল্লুর রহমান খান ও আপনের নির্বাহী পরিচালক রোনাল্ড ড্রাহোজাল।
মাদক বিষয়ে পরবর্তী পরামর্শ সভাটি ৫ আগস্ট একই স্থানে বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে।