ধান বেচে ছাগল কিনব

সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭ জন কৃষককে গতকাল আমন ধানের চারা দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭ জন কৃষককে গতকাল আমন ধানের চারা দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলো

‘দুইবার ঢলের পানিতে ধান নষ্ট অইছে। বৈশাখে গেছে বোরো, এখন গেল আমন। বন্যার পর আরেকবার আমন ধান লাগানোর আশা ছাড়ি দিছিলাম। এখন চারা পাইয়া কিছু জমিতে ধান লাগাইমু।’ আমন ধানের চারা পেয়ে এসব কথা বললেন সুনামগঞ্জের শক্তিয়ারখলা গ্রামের কৃষক আরজু মিয়া। বিভিন্ন স্থানে ধানের চারা পেয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কেউ বললেন ধান বেচে ঘর ভালো করবেন, কেউ জানালেন, এই চারা পেয়ে তাঁর সারা বছরের খাবারের জোগার হলো। ছাগল বিক্রি করে ধানের আবাদ করেছিলেন এক কৃষক। বন্যা গ্রাস করেছে সেই ফসল। চারা পেয়ে তিনি বললেন, ‘ধান বেচে ছাগল কিনব।’

আদমদীঘির ছাতনী গ্রামের মোমেনা বেগম বলেন, ‘ত্রাণের কিছু চাল পেয়েছি, শাড়ি পেয়ে পরনের কাপড়ের সমাধান হলো।’

গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে আমন ধানের চারা, সবজির বীজ, সার, শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

 সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭ জন কৃষককে গতকাল আমন ধানের চারা দেওয়া হয়েছে। এই চারা দিয়ে প্রত্যেক কৃষক ৪৫ শতক জমিতে আমন ধানের আবাদ করতে পারবেন।

দুপুরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার কৃষকদের মধ্যে চারা বিতরণ করা হয়। বিকেলে দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও গ্রামে দেওয়া হয় দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষকদের।

বিশ্বম্ভরপুরে কৃষকদের হাতে চারা তুলে দেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, স্থানীয় বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এরশাদ মিয়া, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ। এ সময় সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মো. রাজু আহমেদ, সহসভাপতি মো. হায়দার আলী, প্রদীপ পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ধানের চারা পেয়ে বিশ্বম্ভরপুরের শক্তিয়ারখলা গ্রামের কৃষক আরজু মিয়া (৬৫) বলেন, ‘দুবার ঢলের পানিতে ধান নষ্ট অইছে। বৈশাখে গেছে বোরো, এখন গেল আমন। হাতে কোনো টাকাপয়সা নাই। বন্যার পর আরেকবার আমন ধান লাগানোর আশা ছাড়ি দিছিলাম। এখন চারা পাইয়া কিছু জমিতে ধান লাগাইমু। এই ধানের চারায় আমরার খুব উপকার অইব।’

 শরীয়তপুর

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে সার ও সবজিবীজ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে কৃষকদের এই ত্রাণ-সহায়তা দেওয়া হয়।

জাজিরার বড়কান্দি, সেনেরচর, মুলনা, জাজিরা ও বিলাসপুর ইউনিয়নের ৬০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি সার এবং লাউ ও লালশাকের বীজ দেওয়া হয়। বীজ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার রফিকুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, কামরুজ্জামান, বন্ধুসভার সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ পাল প্রমুখ।

 গাইবান্ধা

গতকাল গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪২ জন কৃষককে ধানের চারা দেওয়া হয়। প্রত্যেক কৃষক এক বিঘা জমিতে এই চারা রোপণ করতে পারবেন। বিকেল সাড়ে চারটায় কামারজানি মার্চেন্টস উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে চারা বিতরণ করেন কামারজানি মার্চেন্টস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম ও বন্ধুসভার সদস্যরা।

ধানের চারা পেয়ে কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের কৃষক আমির উদ্দিন বললেন, ‘এ্যাকনা ছাগোল বেচি ৮ হাজার ট্যাকা খরোচ করি দুই বিগেত আমোন নাগাচিনো। তাক বানোত নষ্টো হচে। বেচন কেনার ট্যাকা নাই। ধান নাগব্যার পাই নাই। চারা পায়া হামার অনেক উপোক্যার হলো। ধান বেচি ছাগোল কিনমো।’

 দিনাজপুর

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের রাণীদীঘি গ্রামে, বোচাগঞ্জ উপজেলার মাহেরপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া ও বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রামের কৃষকদের মাধ্যে গতকাল কাটারিভোগ (ব্রি-৩৪) ধানের চারা বিতরণ করা হয়।

এক বিঘা জমির ধানের চারা পেয়ে বোচাগঞ্জ উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, দুই মেয়েসহ তাঁর চার সদস্যের সংসার। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান আবাদ করেছিলেন। বন্যায় তাঁর পুরো ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এই চারা না পেলে তিনি এ বছর আর জমি আবাদ করতে পারতেন না। তিনি বলেন, ‘এই জমির ধানের চারা পায়া হামার সারা বছরের খাবার জোগাড় হয়া গেল।’ পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে তিনি সংসারের অন্যান্য খরচ চালান।

 আদমদীঘি (বগুড়া)

শনিবার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বন্যাকবলিত সান্তাহার ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সান্তাহার ইউনিয়নের ছাতনী, ঢেকড়া, পাইকপাড়া, কেনলাপাড়া, পানলা, প্রান্নাথপুর ও দমদমা গ্রামের ১৫৫ জন বন্যার্ত মানুষকে শাড়ি ও লুঙ্গি দেওয়া হয়। ত্রাণ বিতরণে সহয়তা করেন ছাতনী গ্রামের সমাজসেবক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ইউপি সদস্য শামসুল হক, ইউনুস আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বিতরণ অনুষ্ঠানে সান্তাহার বন্ধুসভার সভাপতি রবিউল ইসলাম, নারীবিষয়ক সম্পাদিকা শিউলি আক্তার, সদস্য সাইদুর রহমান, প্রথম আলোর আদমদীঘি প্রতিনিধি খায়রুল ইসলামসহ বন্ধুসভার অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

(প্রথম আলোনিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চিলক কার্যালয়প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদন)

 বন্যা ত্রাণ তহবিল

৭ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত যাঁরা সহায়তা করেছেন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫০ হাজার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫০ হাজার, মো. আনোয়ার হোসেন ৩০ হাজার, রিজিয়া খাতুন ২৮ হাজার, আব্দুল মজিদ ফাউন্ডেশন ১০ হাজার, চট্টেশ্বরী রোড, চট্টগ্রাম থেকে মাহমুদা বেগম ১০ হাজার এবং সরাসরি ব্যাংকে জমা ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা।

l৭ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট জমা

 ২ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা

এ পর্যন্ত মোট জমা

৬৭,৬৪,১৬৯ টাকা

l ২২ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট বিতরণ ৭০,১৬,৭৩৩ টাকার ত্রাণ।

 তহবিলে অর্থ সহায়তার জন্য

প্রথম আলো ট্রাস্ট: ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর ২০৭-২০০-১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড

কারওয়ান বাজার শাখা।