ঝাপসা চোখে খাবারের খোঁজে আমেনা

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর বোয়ালি এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে।প্রথম আলো

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার বোয়ালি এলাকার আমেনা আক্তারের (৫৮) স্বামী মারা গেছেন অনেক দিন আগেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে চলছিলেন আমেনা। বছরখানেক ধরে চোখে ঝাপসা দেখেন বলে এখন আর কেউ তাঁকে কাজে নেন না। এরপর ভিক্ষা শুরু করেন। সারা দিন ঘুরে যা পান, তা দিয়েই মেয়ে, দুই নাতনিসহ চার সদস্যের সংসার চালান। করোনার কারণে ভিক্ষা করাও বন্ধ হয়ে যায়। তার ওপরে তিন সপ্তাহের বন্যায় ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় এখন খাবারই জুটছে না।

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার বোয়ালি গ্রামের ১০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ পেয়ে শীর্ণদেহী আমেনা আক্তার বলেন, ‘চ্যারম্যান–মেম্বররে অনেক নেওরা (অনুরোধ) কইরা একবার মাত্র সরকার থাক্কা সাত কেজি চাল পাইছিলাম। আর কিছুই পাইছি না। বন্যার লাইগ্গা কোনোখানে যাইতে ফারি না। আর অহন মানুষের বাড়িত গেলে ধুর ধুর কইরা তাড়াইয়া দেয়। তোমাগো রিলিপ দিয়া কয়ডা দিন খাইতে পারুম।’

বোয়ালি গ্রামের সামনের সড়কে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণের প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, তেল, আলু ও লবণ। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, সমাজকর্মী তরিকুল ইসলাম, প্রথম আলো নেত্রকোনা বন্ধুসভার উপদেষ্টা শিশির হোসাইন প্রমুখ।

পরপর তিন দফা বন্যার পানিতে নেত্রকোনার এই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তিন হাজারের মতো মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়। এখনো তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।

গতকাল ত্রাণ পেয়ে বোয়ালি গ্রামের জলি আক্তার (৪২) বলেন, ‘করোনার মধ্যে তিন হপ্তা ধইরা বন্যা। আমরার পোলার বাপ রিকশা চালাইতে পারে না। আমারেও কেউ কামে ডাহে না। ঘরে খাওন নাই। সাতজন মানুষ নিয়ে খুবই কষ্ট।’