ইসিতে আস্থা রাখবে সব দল, আশা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশা করেন, রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তার ওপর সব রাজনৈতিক দল আস্থা রাখবে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবে। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রায় ৩৫  মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তিন বছরে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা হবে। দুই মেয়াদে সরকারের নবম বছরে পদার্পণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি—সে বিচারের ভার তাদের ওপরই রইল। তবে দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য সরকার চেষ্টার ত্রুটি করেনি।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন বিষয়ে অভিমত দিচ্ছে, আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত ছিল। সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। বিএনপির আন্দোলনে জ্বালাও–পোড়াওয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশবাসী তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যাখ্যান করেছেন। জনগণ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না। তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়। তারা ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও আটটি লঞ্চে আগুন দেয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, তবে ধর্মান্ধ নয়। হাজার বছর ধরে এ দেশের মাটিতে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করছেন। যারা এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। তিনি ইমাম, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, স্থানীয় মুরুব্বি, আনসার-ভিডিপির সদস্য এবং অভিভাবককে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সন্তানের প্রতি নজর রাখুন। তাদের এমনভাবে পরিচালিত করুন, যাতে তারা ভুল পথে পা না বাড়ায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে। আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বেশি; যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২ তম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও ওপর। বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সরকারের নেওয়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত ও কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি; বয়স্কভাতা, বিধবা ও দুস্থ নারী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চালু; হিজড়া এবং বেদে সম্প্রদায়ের ভাতা; চা–শ্রমিকদের জন্য অনুদান; একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি; আশ্রয়ণ প্রকল্প; ১০ টাকা মূল্যে চাল সরবরাহ; শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি; বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বিমানের জন্য ছয়টি সুপরিসর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করেছি। ২০১৮ সাল নাগাদ আরও ৪টি উড়োজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। পদ্মাসেতুর অপর প্রান্তে মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শিগগিরই শুরু হবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে। আসুন, দলমত-নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ উপহার দিই।’