প্রতিটি ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা লাগবে?

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাংলাদেশের এমন কী কোনো দুরবস্থা হয়েছে? এ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহিলা দলের কর্মিসভায় তিনি এ প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমরা কি সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি? প্রতিটি ব্যাপারে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে? প্রতিটি ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা লাগবে? তাদের সমর্থন লাগবে? আমাদের আজকে কোনো কিছু কি করার ক্ষমতা নেই?’

আজ বিকেলে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে নগর মহিলা দল এই কর্মিসভার আয়োজন করে। নগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগমের সভাপতিত্বে কর্মিসভার উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। কর্মিসভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ফাওয়াদ হোসেন, নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম এবং মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেত্রীরা।
বেলা সাড়ে তিনটায় কর্মিসভা শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে নাসিমন ভবন চত্বরে প্যান্ডেল টাঙানো ছিল। কিন্তু বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বক্তৃতা করার সময় মঞ্চ ভেঙে যায়। এতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-নেত্রীরা ধপাস করে পড়ে যান। অনেকে এ সময় ব্যথা পান। মিনিট দুয়েক পরে আবার সভা শুরু হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে আরও এক ঘণ্টা সভা বন্ধ থাকে।
কর্মিসভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সমালোচনা করে বলেন, ‘সুশীল সমাজের চাপে, দেশের রাজনীতির চাপে একটা পর্যায়ে এসে প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন “আমি কিছু আনতে যাইনি। আমি বন্ধুত্বের কারণে ভারতে গিয়েছি।” আসলে তিনি বন্ধুত্বও ভারতের কাছ থেকে পাননি। তিনি ভারত থেকে আতিথেয়তা পেয়েছেন। আতিথেয়তার বিনিময়ে তিনি বাংলাদেশের সব মানুষের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন। কারণ, বন্ধু তো বন্ধুর স্বার্থ রক্ষা করে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ রক্ষা করেননি।’
সামরিক বিষয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের সামরিক বাহিনীর যে স্বকীয়তা ছিল, প্রধানমন্ত্রী সেটা দিয়ে এসেছেন। একটা স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনীর যে স্বকীয়তা থাকে, নিজ ধারণা থাকে, নিজ চিন্তা থাকে, নিজ দর্শন থাকে, আমাদের সেই প্রতিরক্ষা এখন ভারতের বলয়ে। আমাদের স্বকীয়তা আমরা আজকে হারিয়েছি। অথচ আজকে বাংলাদেশের কোনো পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে পারি না। সেখানে অতিরিক্ত ট্যাক্স বসানো হয়েছে, যে কারণে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ৫৪টি নদীর পানির কোনো সমাধান হয় না। তারপরও একজন প্রধানমন্ত্রী শুধু নিজের আতিথেয়তার কারণে সবকিছু দিয়ে আসতে পারেন? আর যে চুক্তি করেছেন, তা বাংলাদেশের জনজীবনে প্রতিদিন প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এবং বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন এবং নিরপেক্ষ সরকারি সংস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। সেখানে যদি কোনো বাধা আসে, আমরা প্রতিবাদ করব, প্রতিরোধ করব। বাংলাদেশের জনগণের ভোটে একটি নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে বাধ্য করব। এর বাইরে কিছু করা যাবে না। যতই স্বপ্ন দেখুন, গতবারের মতো ভোট চুরির মাধ্যমে জনগণকে বাইরে রেখে অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতে পারবেন না। আমরা রাস্তায় থাকব। প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করব।’

জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবিটি আজ বিকেল পাঁচটায় নগরের কাজীর দেউরি নাসিমন ভবন থেকে তোলা। ছবি- জুয়েল শীল
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবিটি আজ বিকেল পাঁচটায় নগরের কাজীর দেউরি নাসিমন ভবন থেকে তোলা। ছবি- জুয়েল শীল

কর্মিসভায় আফরোজা আব্বাস আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনাকে হটাতে হবে। আওয়ামী লীগের পালিত কাকুর-বিড়াল এখন ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে আমাদের। পালিত কুকুর-বিড়াল তাড়াতে হবে।’
মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা স্বাধীনতা শেষ করে দিচ্ছে। রাস্তায় আমাদের নামতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে শেখ হাসিনা পালানোর সময় পাবে না।’