বাড়ি ফিরছে তোফা ও তহুরা

গোলাপি রঙের জামা পরেছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা হওয়া তোফা ও তহুরা। সঙ্গে ম্যাচিং করা সব জিনিস। একজন মায়ের কোলে, আরেকজন বাবার কোলে। কখনো কাঁদছে, কখনো হাসছে। সবাই আদর করছে তাদের। সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে তারা। তবে সেটা বোঝার বয়স তাদের হয়নি। তাই আপন মনে নিজেদের মতো করে আছে তারা।

তবে আজ রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সভাকক্ষে সৃষ্টি হয় এক মিশ্র অনুভূতির। একদিকে প্রায় দুই মাসের মাথায় হাসপাতাল থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা-মায়ের বাড়ি ফেরার আনন্দ, আরেক দিকে এই কদিনে দুজনের প্রতি জমে যাওয়া সবার স্নেহ-ভালোবাসা।

তোফা ও তহুরাকে বিদায় জানাতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের বাবা-মায়ের হাতে ছাড়পত্র তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তহুরাকে কোলে নিয়ে আদরও করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকেরা তোফা ও তহুরাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক দলকে শুভেচ্ছা জানান তিনি। বাবা-মায়ের কোলে করে বাড়ি ফিরছে তারা, বাবা-মায়ের কাছে এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছু নেই। চিকিৎসকদের এই দল যেভাবে কাজ করেছেন, তিনি তা অন্যদের অনুসরণ করতে বলেন। তোফা-তহুরার প্রতি সবাই যাতে সহযোগিতার হাত বাড়ান, সেই আহ্বান জানান তিনি। বলেন, এদের সাহায্য করলে ভবিষ্যতে হয়তো তারা নিজেরাই চিকিৎসক হবে।

পিঠের নিচ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে জন্মেছিল গাইবান্ধার তোফা-তহুরা। গত ১৬ জুলাই ‘পাইগোপেগাস’ শিশু তোফা-তহুরাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। ১ আগস্ট চিকিৎসকদের ২০ থেকে ২২ জনের একটি দল দীর্ঘ নয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে জোড়া লাগা তোফা ও তহুরাকে আলাদা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সভাকক্ষে আজ রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তোফা ও তহুরাকে বিদায় জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ছবি: সাইফুল ইসলাম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সভাকক্ষে আজ রোববার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তোফা ও তহুরাকে বিদায় জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তোফা ও তহুরার বাবা রাজু মিয়া গাইবান্ধায় কৃষিকাজ করেন। আজকের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য ঢাকায় চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। তোফা ও তহুরার আরও দুটি অস্ত্রোপচার বাকি আছে। এ ছাড়া মাসে মাসে ফলোআপ করতে ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকায় কাজ পেলে ভোগান্তি কমবে বিবেচনায় এ অনুরোধ জানানো হয়।

হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগ থেকে বাবা রাজু মিয়া ও মা শাহিদা বেগমের নামে একটি যৌথ হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে—ডাচ-বাংলা ব্যাংক, হিসাব নম্বর ১৩৯১৫১৭৩৭৪০, ইমামগঞ্জ শাখা।

আজকের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সেরা উপস্থিত ছিলেন।