মা আর ছা ইলিশের ঢল, ডিমের গতি কী?

প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হওয়ার এক রাত পার হতে না হতেই পটুয়াখালীর বাজারে উঠেছে প্রচুর মা ইলিশ। বড় মা ইলিশের পাশাপাশি ছোট আকারের ইলিশও রয়েছে। এতে দাম অনেকটা কমে গেছে। ক্রেতারাও দেদার কিনছে।

এই অল্প সময়ে এত ইলিশ হাট-বাজারে কীভাবে এল, তা ভেবে ক্রেতারা অবাক। যে পরিমাণ মা ইলিশ দেখা যাচ্ছে, এতে প্রজনন নিশ্চিত করা নিয়ে আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

‘প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে নির্বিঘ্ন প্রজনন নিশ্চিত করতে ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার বন্ধ করতে সরকারিভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ সময় সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধসহ পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ অথবা বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়।

গতকাল রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল এই নিষেধাজ্ঞা। আজ সকালে পটুয়াখালীর শহরের নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের পেটে এখনো পরিপক্ব ডিম রয়েছে। আছে ছোট ইলিশও।

ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায়। অথচ এই ইলিশ আগে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়। এক কেজির একটু কম ইলিশ আগে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। কিন্তু বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। তবে প্রতিটি ইলিশ মাছের পেটে ডিম রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

কেন এত মা ইলিশ বাজারে, তা জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা সোহরাব মিয়া (৫৫) বলেন, একটু আগেভাগেই ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এখনো ইলিশের প্রজননের সময় পার হয়নি বলে দাবি তাঁর।

পটুয়াখালী শহরের নিউমার্কেটের বাজারে ইলিশ। ছবি: প্রথম আলো
পটুয়াখালী শহরের নিউমার্কেটের বাজারে ইলিশ। ছবি: প্রথম আলো

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারে ইলিশ নিয়ে আসা এক মৎস্যশিকারি জানান, ‘আগে নদীতে জাল ফালাইলে দুই-একটা ইলিশ ধরা পরত। কিন্তু এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা (চলাকালে) নির্দিষ্ট এলাকার নদীতে জাল ফালাইতে পারলেই ডিমওয়ালা ইলিশের লগে ছোট ইলিশ প্রচুর ধরা পরছে। কী করুম, কোনো কাম নাই। হের পর আমরা গরিব, তাই পেটের দায়ে মাছ ধরছি।’

বাজারের মাছের এক আড়তদার জানান, গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ আছে। অনেক বাড়িতে তাই ফ্রিজ আছে। মৎস্যশিকারিরা নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চুরি করে ইলিশ মাছ ধরে। কিন্তু প্রকাশ্যে বিক্রি করতে পারেনি। এই সুযোগে গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী মৎস্যশিকারিদের কাছ থেকে খুব কম দামে ইলিশ কিনে ফ্রিজ করে রেখে দিয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে, তাই তাঁদের মজুত ইলিশ বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ইলিশ শিকার করায় দায়ে ২৯ জনকে আটক করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ৬১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অভিযানে ১ দশমিক ৩৪৯ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। ৭ লাখ ৭৫৭ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর দাম ১ কোটি ২৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক পীযূষ কান্তি হরি বলেন, আশ্বিনের পূর্ণিমার ‘জো’–এর সময় প্রজননে অংশ নিতে বিনা বাধায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ চলে যায় উজানে। তাই নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতে না হতেই হঠাৎ করে বাজারে যে পরিমাণ মা ইলিশ দেখা যাচ্ছে, তাতে মৎস্যশিকারিদের আরও সচেতন হতে হবে। মৎস্য বিভাগের নজরদারিও আরও বাড়ানো প্রয়োজন।