খাবার সরবরাহকারী থেকে সোনা পাচারকারী!

মীর হোসেন
মীর হোসেন

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে একটি প্রাইভেট কারে করে উত্তরার কাওলার দিকে যাচ্ছিলেন মীর হোসেন নামে এক যুবক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মো. ফারুক আহম্মেদ। টয়োটা প্রিমিও মডেলের এই গাড়িচালক ছিলেন মো. শাহীন। তবে বিমানবন্দর চত্বরে মক্কা রেস্তোরাঁর সামনে গাড়িটি থামায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। গাড়িটি তল্লাশি করে সোনার ৮০টি বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা সোনার মূল্য চার কোটি টাকা।

গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে মীর হোসেন বিমানবন্দর থেকে সোনার চালান বের করে আনার কাজ করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছিলেন বলে জানান ডিবি উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে মীর হোসেন রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ক্যাটারিংয়ের কাজ করেন। তবে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব থাকলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে সফলভাবে বেশ কয়েকটি চালান বিমানবন্দর থেকে বের করেছেন তিনি।

৯ কেজি ৩৩৩ গ্রাম সোনার চালানটি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দুবাই থেকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকায় আসে। বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে সোনার চালানটি বের করা হবে—এমন তথ্য পেয়ে ডিবির উত্তরা জোনাল টিমের সদস্যরা মক্কা রেস্তোরাঁর সামনে মীর হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে করেন। উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, গাড়ি আসনের নিচ থেকে কালো রঙের স্কচটেপে মোড়ানো চারটি স্কেলসদৃশ পকেট ও তিনটি মুঠোফোন সেট পাওয়া যায়। প্রতিটির প্যাকেটে ২০টি করে বার ছিল। তবে মুঠোফোন সেটগুলোতে কোনো নম্বর সংরক্ষিত ছিল না। এঁরা উইচ্যাট অ্যাপস ব্যবহার করে কথাবার্তা বলেছিলেন।

শেখ নাজমুল আলম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন দীর্ঘদিন বিদেশ থেকে চোরাইপথে বাংলাদেশে সোনার চালান নিয়ে আসতেন। কিন্তু আগে কখনো তাঁরা গ্রেপ্তার হননি। তাঁরা উড়োজাহাজের সিটের নিচে বা অন্য জায়গায় বিশেষ কায়দায় সোনার বার দেশে আনেন। বিমানবন্দর থেকে গাড়িটি নিয়ে তারা কাওলার দিকে যাচ্ছিলেন। তবে আসল গন্তব্য সম্পর্কে তাঁরা কোনো তথ্য দেননি। চোরাচালানের চক্রের বিভিন্ন ধাপে জড়িত বেশ কয়েকজনের নামও জেনেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু আটক সোনার বারের মধ্যে ৪০টি বারের মালিক গ্রেপ্তার হওয়া ফারুক আহমেদ নিজে।

মীর হোসেন নামে কোনো কর্মচারী নেই বলে জানিয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. লিয়াকত জাহান রিপন প্রথম আলোকে বলেন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজে খাবার সরবরাহ করে থাকে সালসা কাটারিং সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া দুবাই-ঢাকা রুটে তাঁদের কোনো ফ্লাইট পরিচালিত হয় না।

সালসা কাটারিং সার্ভিসের বিপণন ব্যবস্থাপক লায়েকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মীর হোসেন নামে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্মচারী নেই।

এদিকে বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, যে প্রাইভেট কার থেকে সোনার ৮০টি বার পাওয়া যায়, সেটি মো. রেজা নামে এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। রেজিস্ট্রেশনে দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকার একটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গাড়ির মালিক রেজার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।