১৫০ পরীক্ষার্থী নিয়ে নৌকাডুবি, দুজনের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জেএসসি পরীক্ষার্থী বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জেএসসি পরীক্ষার্থী বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পাগলা নদীতে দেড় শতাধিক জেএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ওই নৌকার শিক্ষার্থীরা সবাই উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মৃত দুই পরীক্ষার্থী হলো নাদিরা আক্তার ও সোনিয়া আক্তার। নাদিরা বীরগাঁও ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের সৈয়দ হোসেনের মেয়ে এবং সোনিয়া একই ইউনিয়নের নজরদৌলত গ্রামের শিশু মিয়ার মেয়ে। লাশ দুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, মৃত দুই শিক্ষার্থীর পরিবার, জেএসসি শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে আটটার দিকে বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৮৪জন জেএসসি শিক্ষার্থী উপজেলার থানাকান্দি নদী ঘাটে পৌঁছায়। অধ্যক্ষ নাজির হোসেন প্রথমে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে একটি নৌকায় তুলেন। নৌকার উপরে ছেলে ও নিচে মেয়ে শিক্ষার্থীরা উঠে। বাকি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অধ্যক্ষ পেছনের নৌকায় করে কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কৃষ্ণনগর সেতুর নিচে এসে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বহনকারী নৌকাটি এদিকে ওদিক দুলতে শুরু করে। সেতুর নিচ থেকে সামান্য একটু অগ্রসর হয়েই নৌকাটি ডুবে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন, কৃষ্ণনগর নদীঘাটে থাকা আট-১০টি নৌকার মাঝি, নবীনগর থানার কনস্টেবল নাজমুল হাসানসহ অনেকেই এগিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী নাদিরা ও সোনিয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে কৃষ্ণনগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা মৃত ঘোষণা করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জেএসসি পরীক্ষার্থী বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জেএসসি পরীক্ষার্থী বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

গুরুতর আহত আকলিমা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জান্নাত আক্তারকে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আজহারুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই শিক্ষার্থীরা মারা যায়।

কৃষ্ণনগর আবদুল জববার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদাউসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা খুব আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। তাদের স্বাভাবিক হতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে। বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজের ১৪জন মেয়ে ও চারজন ছেলে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।

কান্নারত কণ্ঠে আলেয়া বেগম বলেন, ‘নৌকাডা শুরুতে টইল দিতাছিল। ব্রিজের নিচে একটা ধাক্কা লাগে। একটুর সামনেই গিয়াই নৌকা উল্টাইয়া গেছে। সৌভাগ্যক্রমে বাঁইচচা গেছি। ভিজা শরীর লইয়্যা পরীক্ষা দিছি।’

থানাকান্দি গ্রামের শ্রাবন্তি আক্তার বলেন, ‘প্রয়োজনের হেঁটে আসব। কিন্তু আর নৌকায় আসব না।’ আর নৌকায় আসবে না জানিয়ে কামরুন্নাহার নামে আরেকজন বলেন, ‘নৌকাটি ভালো ছিল না। নৌকায় কোনো শিক্ষকও ছিল না।’

ডুবে যাওয়া ওই নৌকার একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া করা ওই নৌকাটি তেমন ভালো ছিল না। ২৮৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য দুটি নৌকা যথেষ্ট নয়। ওই নৌকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী তুলেছেন অধ্যক্ষ স্যার। নৌকায় উঠতে রাজি না হলে এক শিক্ষার্থীকে তিনি থাপ্পড়ও মারেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য, থানাকান্দি থেকে কৃষ্ণনগর নদীঘাটে নৌকায় করে আসার জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থী বিদ্যালয়কে ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজির হোসেন ফোন ধরেননি।

কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় নিয়ম বহির্ভূত কাজ। কাজটি ঠিক হয়নি। প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সালেহীন তানভির গাজী, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র।