'প্রয়োজনে রাস্তায় মরব'

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে আছেন নাসরীন বেগম। তিনি ঝিনাইদহ জেলার বড়বাড়ি বগুড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। জানালেন, কয়েক দিন ধরে তিনি না খেয়ে রয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানেই তাঁকে স্যালাইন দেওয়া হয়। নাসরীন বলেন, ‘জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আমি না খেয়েই থাকব। প্রয়োজনে রাস্তায় মারা যাব।’ 

জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন পালন করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। এই অনশনে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন নাসরীন বেগমও।
এদিকে জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
জাতীয়করণের দাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় তাঁরা ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন করছেন। সমিতির দাবি, অনশনের কারণে ১০৬ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে সাতজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। ছবি- আহমেদ দীপ্ত
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। ছবি- আহমেদ দীপ্ত

মাদ্রাসার শিক্ষকেরা বলছেন, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা ৩৪ বছর ধরে বেতন-ভাতা বঞ্চিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশ নেন তাঁরা। অথচ তেমন কোনো বেতন-ভাতা পান না।

সকালে অনশনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এই শীতে খোলা আকাশের নিচে প্রেসক্লাবের মূল ফটকের পশ্চিম পাশে ফুটপাত ও সামনের সড়কের একাংশে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা শুয়ে আছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বেশি কষ্ট হচ্ছে নারী শিক্ষকদের এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা সন্তানদের। জরুরি অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাবি আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আমরা কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই অনশন চালিয়ে যাব।’

জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মসূচি
এদিকে জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের ডাকে ১০ জানুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি চলছে।

বাগেরহাটের রামপালের পোড়খালি পি ইউ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার বেতন বাড়ে, তবু আমাদের বেতন বাড়ে না। শিক্ষকেরা অবসরের পর পেনশনের টাকা পান না। কোনো বৈশাখী ভাতা নেই, উৎসব ভাতা নেই। বাসাভাড়া হিসেবে মাত্র এক হাজার টাকা পাই। বদলি বা পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। দিন-রাত প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছি। ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন।’

বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয়করণের দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস তাঁরা পাননি। কাল শনিবারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে রোববার থেকে তাঁরা আমরণ অনশনে যাবেন।