তাঁর জীবনের নতুন 'শুরু'

>
অন্য এক মুমিনুলেরই দেখা মিলল চট্টগ্রাম টেস্টে। ছবি: প্রথম আলো
অন্য এক মুমিনুলেরই দেখা মিলল চট্টগ্রাম টেস্টে। ছবি: প্রথম আলো
 অন্য মুমিনুলের দেখা মিলেছে চট্টগ্রাম টেস্টে।
 ক্রিকেট কিংবা জীবনবোধ—দুই জায়গায় অনেক পরিবর্তন এসেছে তাঁর মধ্যে। 
তাঁর সঙ্গে গত তিন বছরে যা হয়েছে, সেটিকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন মুমিনুল।

শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুণারত্নের সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়নি। সংবাদ সম্মেলন কক্ষের সামনে অপেক্ষায় মাহমুদউল্লাহ আর মুমিনুল হক। মুমিনুলের দিকে এগিয়ে এলেন ধারাভাষ্যকার রোশান আবেসিংহে। ‘অভিনন্দন মুমিনুল! তুমি কি জানো আজ তোমার কী কী রেকর্ড হয়েছে?’

মুমিনুল ডানে-বাঁয়ে মাথা নাড়িয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকান রোশানের দিকে। শ্রীলঙ্কান ধারাভাষ্যকার বলে যান, ‘বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তুমি দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছ। বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও এখন তোমার।’

পাঁচ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে মুমিনুলের কাছ থেকে হৃদয়ছোঁয়া ব্যাটিং কতবারই দেখা গেছে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে দুই ইনিংসে ২২ গজে যে সৌরভ ছড়িয়েছেন, সেটি কি আগে দেখা গেছে? বলবেন, আরে ভাই আগে দেখা যায়নি বলেই তো রেকর্ডটা করতে পেরেছেন!

কদিন আগে বিসিএলে যখন রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছিলেন, রসিকতা করে বলা হলো, টেস্টের প্রস্তুতি তো ভালোই হচ্ছে! মুমিনুলের অবশ্য তাতে জোর আপত্তি, ‘টেস্ট আর ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এক নয়। টেস্টের চাপটা অনেক বেশি।’

সে চাপ তো আছেই। মাঠের বাইরেও অনেক চাপ ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। গত কদিনে সেসব নিয়ে অনেক আলোচনা-বিশ্লেষণই হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের পর তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, কাউকে দেখিয়ে দেওয়ার জেদেই কি ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছে দুর্দান্ত ইনিংস? কাউকে দেখিয়ে দিতেই কি ‘উত্তাল’ মুমিনুলের দেখা এ সাগরিকায়?
মুমিনুল বিনয়ের সঙ্গে সেসব এড়িয়ে যান। এড়িয়ে যেতে চাইলেই কি চন্ডিকা হাথুরুসিংহ-প্রসঙ্গটা আড়াল করা যায়? আড়াল করা যায় গত তিনটি বছর তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে?
প্রথমে শর্ট বল, পরে অফ স্পিন—কত দুর্বলতা আবিষ্কার হলো মুমিনুলের! ‘টেস্টের ব্যাটসম্যান’ শ্রেণীকরণ করে টেস্ট ক্যারিয়ারটাই হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে তীব্র মানসিক চাপ তৈরি করা। সেই চাপে পিষ্ট হয়ে দীর্ঘদিন সেঞ্চুরি করতে ভুলে যাওয়া—মুমিনুল সব জবাব দিয়েছেন ব্যাটে। একবার নয়, দুবার। এক টেস্টের দুই ইনিংসে।
১৭৬ রানের পর ম্যাচ বাঁচানো ১০৫ করে। তীব্র চাপের মধ্যে হৃদয়কাড়া ব্যাটিং করে।তবুও মুমিনুল বলতে চান না, তিনি জবাব দিতেই দুর্দান্ত খেলেছেন। তবে মনে করেন, এ চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়েই পেছনে ফেলেছেন দুঃসময়।
এ চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়েই শুরু করেছেন নবযাত্রা, ‘আমার কাছে মনে হয় জীবনের জন্য এটা (দুঃসময়) খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনারা কীভাবে ভাবেন জানি না। আমার কাছে মনে হয় এটা আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসব হওয়ার কারণে আমার মানসিকতার একটা বদল এসেছে, পরিশ্রমটা আরও বাড়ছে। ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।’
জহুর আহমদ চৌধুরী তাঁর ভীষণ পয়মন্ত। ৬ সেঞ্চুরির পাঁচটিই এ মাঠে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি জহুর আহমদে। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এ মাঠে। বাংলাদেশের হয়ে আজ যে দুটি রেকর্ড গড়লেন সেটিও চট্টগ্রামে। যে মাঠটা তাঁকে এত ‘ভালোবাসে’, সেখানেই যেন নতুন ভোরের শুরু। ভাগ্যের ফেরে মুমিনুলের সেই শুরুটা হলো হাথুরুসিংহের বিপক্ষেই!