বিদায়ের স্মৃতি ভুলে বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা গ্রিনিজের

ডান দিকে নাঈমুর রহমান, বাঁ দিকে জাভেদ ওমরকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল সোনারগাঁয়ের বলরুমের দিকে এলেন গর্ডন গ্রিনিজ। খানিকটা এগোতেই খালেদ মাসুদ এসে জড়িয়ে দলেন সাবেক গুরুকে। বলরুমে ঢুকতেই একে একে মিনহাজুল আবেদীন, হাবিবুল বাশার, আতহার আলী খান—সাবেক শিষ্যরা এসে জড়িয়ে ধরলেন গ্রিনিজকে। হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে ফিরে ফিরে আসতে থাকল ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি সব স্মৃতি।

গর্ডন গ্রিনিজকে লাল-সবুজ জার্সি উপহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান। ছবি: শামসুল হক
গর্ডন গ্রিনিজকে লাল-সবুজ জার্সি উপহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান। ছবি: শামসুল হক

১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করায় শুধু গোটা দেশকে আনন্দের বন্যায় ভাসানো হয়নি, সেটি ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিরাট বাঁকবদল। আইসিসি ট্রফি জিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে শুরু হলো নবযাত্রা। আর সেই নবযাত্রায় অসামান্য অবদান ছিল এক ক্যারিবীয়র—গর্ডন গ্রিনিজ। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাঁর নাম লেখা থাকবে সোনার অক্ষরে। পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতেই যেন পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় আসা তাঁর। সেটিরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্বটা মঞ্চায়ন হলো আজ সন্ধ্যায়।

আমন্ত্রিত অতিথির অনেকে যানজটে আটকে পড়ায় কারও কারও আসতে একটু দেরিও হলো। আইসিসি ট্রফিজয়ী আকরাম খান তাঁর মধ্যে একজন। তাতে কী, সোনারগাঁও হোটেলের সন্ধ্যার পরিবেশটা ততক্ষণে নস্টালজিক হয়ে উঠেছে। গ্রিনিজ বারবার বলছিলেন, ‘কত পুরোনো মুখ আজ দেখছি’। সেই পুরোনো মুখগুলো বলতে তখনকার খেলোয়াড়, সংগঠকেরাই নন, ১৯৯৭-৯৯ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কাছাকাছি থাকা সাংবাদিকেরাও।

গ্রিনিজকে সম্মাননার স্মারক দিচ্ছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। ছবি: প্রথম আলো
গ্রিনিজকে সম্মাননার স্মারক দিচ্ছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। ছবি: প্রথম আলো

গ্রিনিজের এবার ঢাকায় আসার মূল উদ্দেশ্য এটাই, তাঁর সময়ের বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পুনর্মিলনী। সঙ্গে একটু মহতী উদ্যোগ—বার্বাডোজে নিজের নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি গ্রন্থাগারের জন্য তহবিল সংগ্রহ। এই দুই উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই আজ বিসিবি বেশ ঘটা করে এক সংবর্ধনা দিল গ্রিনিজকে। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর তাঁর হাতে তুলে দিলেন ‘গর্ডন গ্রিনিজ’ নাম লেখা বাংলাদেশ দলের লাল-সবুজ জার্সি। বিসিবি পরিচালক এনায়েত হোসেন বোর্ডের পক্ষ থেকে তুলে দিলেন উপহার। আর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের হাত থেকে গ্রিনিজ গ্রহণ করলেন একটি ক্রেস্ট ও তাঁর দুই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ লাখ টাকার চেক।

‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ও এই দেশ সব সময়ই আমার মনের মধ্যে বেঁচে আছে’—বক্তব্যের শুরুতে গ্রিনিজের এই কথা ছুঁয়ে গেল সবার হৃদয়। গ্রিনিজ তাঁর সং‌ক্ষিপ্ত বক্তব্যে রোমন্থন করলেন অতীত স্মৃতি, সামনে বসা সবাই যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরে গেল ১৮-২০ বছর আগের দিনগুলোয়। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও গ্রিনিজকে ধন্যবাদ জানালেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁর রেখে যাওয়া অবদানের জন্য।

শুধু তাঁর সময়ের ক্রিকেটাররাই নন, অনুষ্ঠানে এলেন বর্তমান সময়ের খেলোয়াড়েরাও। মুশফিকুর রহিম ভীষণ আগ্রহ নিয়ে ছবি তুললেন গ্রিনিজের সঙ্গে। একের পর এক ছবি-সেলফির পর্ব পেরিয়ে ক্যারিবীয় কিংবদন্তি মুখোমুখি হলেন সাংবাদিকদের। জানালেন, বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সেই সবুজ পাসপোর্টটা তাঁর কাছে আজও আছে। সেটি তিনি দ্রুত নবায়ন করতে চান। আগামী ২৬ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবে বাংলাদেশ। এই সফরে বাংলাদেশ কতটা ফেবারিট, এ প্রশ্নে গ্রিনিজের রসিকতাপূর্ণ উত্তর, ‘যেকোনো দলই এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারে। তাদের ভালো-খারাপ দুটিই মুহূর্ত আছে। ভালো কম, খারাপই বেশি। আশা করি ভালো একটি সিরিজ হবে।’

১৯৯৭-৯৯ সালে তাঁর অধীনে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের সঙ্গে গ্রিনিজের একটা ছবি না থাকলে হয়! ছবি: প্রথম আলো
১৯৯৭-৯৯ সালে তাঁর অধীনে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের সঙ্গে গ্রিনিজের একটা ছবি না থাকলে হয়! ছবি: প্রথম আলো

অনেক আনন্দদায়ী স্মৃতি থাকলেও বাংলাদেশ থেকে বিদায়পর্বটা গ্রিনিজের ভালো হয়নি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর আগের রাতে হাতে পান চাকরিচ্যুতির চিঠি! সেই বিদায়ের হতাশা আজও যায়নি গ্রিনিজের, ‘বিদায়ের মুহূর্তটা ভালো হয়নি। হতাশাজনক ছিল। আরও কিছুদিন থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি। এটা হতেই পারে।’

এমন সোনালি সন্ধ্যায় সেসব তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে রাখার কী দরকার। গ্রিনিজও মনে রাখছেন না। মুখে বিস্মৃত হাসিতে সবার সঙ্গে স্মৃতিচারণা, ছবি, সেলফি, নৈশভোজ, আড্ডা—এই সন্ধ্যায় যে সম্মানটা দেওয়া হলো তাঁকে, গ্রিনিজ নিশ্চিত এটিও ভুলবেন না কখনো!