তৃতীয় হয়ে আফসোসটা বাড়াল বেলজিয়াম

দুই দল আগেও একবার মুখোমুখি হয়েছে। সেবার নাকি ইংল্যান্ড ইচ্ছে করেই ম্যাচ হেরেছে। তবে আজ বেলজিয়াম দেখিয়ে দিল, চেষ্টা করলেও ইংল্যান্ড হয়তো পারত না। রোমাঞ্চ ছড়ায় না এমন এক স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আজ ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারাল বেলজিয়াম। তৃতীয় হয়ে বিশ্বকাপ থেকে অন্তত ২৪ মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানি নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হলো তাদের। চতুর্থ হয়ে ইংল্যান্ড পাবে ২২ মিলিয়ন ডলার।

শুধু বেলজিয়াম নয়, এই ম্যাচে জেতার ছিল রোমেলু লুকাকুরও। কিন্তু যাঁর সঙ্গে তাঁর গোল্ডেন বুটের লড়াই, সেই হ্যারি কেনও বোধ হয় ঠিক করেছেন, আর গোল-টোল দেবেন না। দুজনেরই আরও একটি গোলহীন ম্যাচে গোলের খাতায় নাম লেখালেন টমাস মুনিয়ের আর এডেন হ্যাজার্ড। ৪ মিনিটে মুনিয়েরের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বেলজিয়াম। ৮২ মিনিটে ২-০ করেন হ্যাজার্ড।

তৃতীয় হয়ে, আজ ইংল্যান্ডের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আফসোসটা আরও বাড়াল সোনালি প্রজন্মের এই দলটা। ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে গেরোটা এত চেষ্টার পরও খুলতে পারেনি। না হলে কালকের ফাইনালে তো তাদেরই দেখতে চেয়েছিল অনেকে। শেষ পর্যন্ত সান্ত্বনার এক পুরস্কার নিয়ে ঘরে ফিরতে হলো।

সান্ত্বনা নয়তো কী! নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের পর বাঁধভাঙা উদ্‌যাপন ছিল নিয়মিত দৃশ্য। কিন্তু সেন্ট পিটার্সবার্গে আজ ম্যাচ শেষের পর তার ছিটেফোঁটাও ছিল কই? মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত ঝাঁকিয়ে বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্তিনেজ এক সহকারীকে জড়িয়ে ধরেছেন, এই যা! খেলোয়াড়েরা নিরুত্তাপ হাত মেলালেন, পুরো মাঠ ঘুরে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

অবয়বে স্পষ্ট অনীহাটা বলছিল, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জেতার পর আবার উদ্‌যাপনের কী আছে! হারলেও বা হতাশায় ভেঙে পড়ার কী আছে? 

হতাশা যা, তা সেমিফাইনালেই পাওয়া শেষ। বিশ্বকাপ ফাইনাল-স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা খেলতে কতটা আগ্রহ থাকবে খেলোয়াড়দের, সে নিয়ে কথা তো আর কম হয়নি! প্রতি চার বছর পরপরই হয়। তবে বেলজিয়ামের জন্য ম্যাচটা ছিল ইতিহাস গড়ার। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়ার। পেয়েছে বেলজিয়াম। এর আগে বিশ্বকাপে একবারই সেমিফাইনালে খেলেছিল বেলজিয়াম, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেবার হয়েছিল চতুর্থ।

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে গোল উৎসবের অপেক্ষায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অবশ্য একটু হতাশই হতে হয়েছে হয়তো। ১৯৭৪ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম যে কোনো তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ দেখল তিনের কম গোল!
দুটি গোলই বেলজিয়াম পেয়েছে এই বিশ্বকাপে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলা পাল্টা আক্রমণে। ৪ মিনিটে মনিয়েরের পায়ে প্রথম গোলটি এসেছে নিজেদের গোলকিক থেকে চার পাসের পাল্টা আক্রমণে। তাতেও রেকর্ড! মনিয়ের এই বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের দশম ভিন্ন গোলদাতা—তাতে ১৯৮২-এর ফ্রান্স ও ২০০৬-এর ইতালির গড়া রেকর্ড ছুঁয়েছে বেলজিয়াম। ৮২ মিনিটে হ্যাজার্ডের গোলটিও মাঝমাঠে বল দখলে নিয়ে কেভিন ডি ব্রুইনার দারুণ পাসের পর।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা ইংল্যান্ড চেষ্টা কম করেনি। ৭০ মিনিটে এরিক ডায়ারের বুদ্ধিদীপ্ত চিপটা গোললাইন থেকে বেলজিয়ান ডিফেন্ডার টবি অলডারভেইরেল্ড ফিরিয়ে না দিলে তো গোল পেয়েই যেত! সে হিসাব অবশ্য বেলজিয়ামও করতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু ডি ব্রুইনার থ্রু ধরে গোলকিপারকে একা পেয়েও ব্যর্থ রোমেলু লুকাকু, যে গোলটা হলে তাঁর গোল্ডেন বুট জয়ের সম্ভাবনা আরেকটু উসকে যেত।

ম্যাচটা তো ছিল কেন আর লুকাকুর গোল্ডেন বুটের লড়াইও। ওই মিসের ৪ মিনিট পর লুকাকুকে উঠিয়ে নেন বেলজিয়াম কোচ, কেন পুরো ম্যাচে মাঠে থাকলেও ছিলেন অচেনা হয়ে। দুবার গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ। তাতে অবশ্য ক্ষতি হয়নি!