২০১৬ সালে আমার পড়া সেরা ৫ বই

বিল গেটস
বিল গেটস

বই পড়ে শেখার মধ্যে কখনোই এতটা আনন্দ পাইনি, যতটা এখন এসে পাচ্ছি। যখন আমি ছোট ছিলাম, নিজে নিজে শেখার জন্য আমাদের হাতে তেমন কোনো বিকল্প ছিল না। ছোটবেলায় আমার মা-বাবার এক সেট বিশ্বকোষ (এনসাইক্লোপিডিয়া) ছিল, যেগুলো সব আমি পড়ে ফেলেছিলাম। তখন এখনকার দিনের মতো কোনো অনলাইন কোর্স ছিল না, ‘ভিডিও লেকচার’ ছিল না কিংবা পডকাস্টও (ডিজিটাল অডিও) ছিল না। যা নিত্যনতুন চিন্তাধারা কিংবা চিন্তাবিদদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে।

তবু এখনো কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে ও শিখতে চাইলে বই আমার সবচেয়ে প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই প্রতি সপ্তাহে আমি গড়ে একটা করে বই পড়েছি। এমনকি এখনো যখন খুব ব্যস্ত থাকি, তখনো বই পড়ার জন্য খানিকটা সময় বের করে রাখি।

আপনি যদি আসন্ন ছুটির দিনগুলোতে বই পড়ে কাটাতে চান, সে জন্য এখানে কিছু বইয়ের কথা তুলে ধরলাম। বিগত বছর পড়া আমার সবচেয়ে প্রিয় বইয়ের তালিকায় এই বইগুলো আছে। টেনিস থেকে শুরু করে টেনিসের জুতো নিয়ে লেখা বই কিংবা জিনোমিক্স (ক্রোমোসোমের ব্যুৎপত্তিগত ধারণা) থেকে শুরু করে নেতৃত্ব গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বইয়ের মিশেল আছে আমার এই পছন্দের তালিকায়।

.
.

স্ট্রিং থিওরি
ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস

নাম দেখে যা-ই ভাবুন না কেন, বইটির সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানের ‘স্ট্রিং থিওরির’ কিন্তু কোনো মিল নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, যদি আপনি বইটি পড়ার সময় বিমানে কিংবা কোনো ট্রেন-ভ্রমণে থাকেন, তবে বইটির নামকরণ আপনার কাছে খুবই বুদ্ধিদীপ্ত মনে হবে। টেনিসের ওপর লেখকের লেখা সেরা পাঁচটি প্রবন্ধ নিয়ে এই বই। টেনিস—যে খেলা মাইক্রোসফটের শুরুর দিনগুলোতে আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন এসে খুবই আগ্রহ নিয়ে আবার শুরু করেছি। বইটি পড়ার জন্য আপনাকে যে টেনিস খেলা জানতে হবে বা দেখতে হবে, তা কিন্তু নয়। শুধু এটুকুই বলতে পারি, রজার ফেদেরার টেনিস কোর্টে যেমন দক্ষতার সঙ্গে তাঁর টেনিস র‍্যাকেট চালান, লেখক ঠিক সেভাবেই এই বইতে তাঁর কলম চালিয়েছেন। লেখকের আরও একটা অসাধারণ দিক হলো তাঁর ভাষাগত নৈপুণ্য। তিনি খুব সহজ ভাষায় বইটি পাঠকের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।

.
.

শু ডগ
ফিল নাইট

বইটি মূলত নাইকির (জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান) সহপ্রতিষ্ঠাতার লেখা একটি স্মৃতিকথা। এখানে তিনি ব্যবসায়িক সাফল্যের রাস্তাটা আসলে কেমন তা তুলে ধরেছেন। অনেক অগোছালো, নিরাপত্তাহীন এবং ভুলের পর ভুলে জর্জরিত। আমি ফিল নাইটের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করেছি। অসাধারণ একজন মানুষ; তবে তাঁকে চিনতে পারা এবং বুঝতে পারা খুব কঠিন। এখানে নাইট ব্যবসার ক্ষেত্রে সেই কঠিন কথাগুলোই বলেছেন, যেগুলো গুটিকয়েক সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সাহস করে বলতে পারবেন। আমি মনে করি না এখানে নাইট পাঠকদের কাছে খুবই শেখার মতো কঠিন সব বিষয় তুলে ধরেছেন। বরং আমি বিশ্বাস করি, তিনি নিজের জীবনের গল্পের মধ্য দিয়ে তার চেয়েও আরও ভালো কিছু বোঝাতে চেয়েছেন। নিঃসন্দেহে খুবই অসাধারণ একটি গল্প।

.
.

দ্য জিন
সিদ্ধার্থ মুখার্জি

ডাক্তারদের সাধারণত ‘ট্রিপল থ্রেট’ বলে গণ্য করা হয়। কেননা তারা একই সঙ্গে রোগীর সেবা করেন, মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়ান এবং গবেষণার কাজ করেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মুখার্জি এর সবগুলোই করেন। তাঁকে বলা হয় ‘কোয়াড্রোপোল থ্রেট’। কারণ, তিনি একজন পুলিৎজার পুরস্কারজয়ীও বটে! মুখার্জি তাঁর লেখা সর্বশেষ এই বইটিতে জিনোম সায়েন্স (জিনগত বিজ্ঞান) নিয়ে মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে আধুনিক জিনোম প্রযুক্তি আমাদের যে নতুন ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে, তা নিয়ে বেশ কিছু মানবিক প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। লেখক ভালো করেই জানেন, এই নব্য প্রযুক্তি কতটা ভয়াবহভাবে আমাদের প্রভাবিত করবে। আর সে কারণেই তিনি বইটির মাধ্যমে পাঠকের সামনে খুব সহজভাবে এই বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন।

.
.

দ্য মিথ অব দ্য স্ট্রং লিডার
আর্চি ব্রাউন

এই বছরের কুটিল নির্বাচনী লড়াই আমাকে ২০১৪ সালের এই বই পড়তে অনুপ্রাণিত করেছে। বইটির লেখক এমন একজন মানুষ, যিনি একাধারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার ও পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভালো-মন্দ ও কুৎসিত দিকগুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ব্রাউন তাঁর বইতে সেই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দেখিয়েছেন, যাঁরা ইতিহাস এবং মানবতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। কিন্তু আমরা তাঁদের সেই অর্থে ‘স্ট্রং লিডার’ বলে মনে করি না। তাঁরা একে অপরকে সহযোগিতা করেন, প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেন, আলোচনা করেন। এটা উপলব্ধি করতে পারেন যে একজন ব্যক্তির কাছে সবকিছুর উত্তর থাকতে পারে না—এ কারণেই তাঁরা সফল। ব্রাউন মনে হয় নিজেও চিন্তা করতে পারেননি তাঁর বইয়ের কথাগুলো ২০১৬-তে এসে কতটা বাস্তব হয়ে উঠবে।

.
.

দ্য গ্রিড
গ্রেচেন বাকে

‘ইলেকট্রিক্যাল গ্রিড’ নিয়ে লেখা একটি বই, যা বাস্তবের পৃথিবীটাকে দারুণভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে। বইটি আমার কাছে মনোমুগ্ধকর মনে হওয়ার অন্যতম কারণটা বলি। হাইস্কুলে পড়ার সময় আমার প্রথম কাজ ছিল নর্থওয়েস্ট অঞ্চলের পাওয়ার গ্রিড কন্ট্রোলের জন্য সফটওয়্যারের কাজ করা। ‘পাওয়ার গ্রিড’ থেকে আপনার বাসায় কীভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছায়, সেটা যদি আপনি কখনোই না ভেবে থাকেন, তা বোঝার জন্য বইটি অসাধারণ। আমার ধারণা, ইলেকট্রিক্যাল গ্রিড যে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রকৌশল, তা এই বই পড়লে আপনি উপলব্ধি করতে বাধ্য হবেন। একই সঙ্গে ‘ক্লিন এনার্জি ফিউচার’ এর ক্ষেত্রে গ্রিডের আধুনিকীকরণ কেন এতটা জটিল ও সংকটপূর্ণ, সেই বিষয়গুলোও বইটিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: তৌ​িশকুর রহমান, সূত্র: গেটসনোটস ডট কম