আমরা যারা ঈদের দিনেও অফিস করি

সাংবাদিকতা, চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, িবমান চালনাসহ নানা পেশায় কর্মরত নারীদের ঈদের দিনেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়
সাংবাদিকতা, চিকিৎসা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, িবমান চালনাসহ নানা পেশায় কর্মরত নারীদের ঈদের দিনেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়

বাংলাদেশের বাস্তবতায় ঘরের মেয়েবউরাই তো ঈদের দিন সকাল থেকে রান্নাঘরে সেমাই, জর্দা, চটপটির পাশাপাশি পোলাও, কোরমা, রেজালা রান্নায় ব্যস্ত থাকেন, তাঁরাই তো ঘর গোছান, তাঁরাই অতিথি আপ্যায়ন করেন। সেখানে মেয়েবউরাই যদি এসব ফেলে অফিসে ছোটেন, তাহলে তো ঘরসংসার উচ্ছন্নেই যাওয়ার কথা!

সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল একদিন খুব আন্তরিকভাবেই জানতে চেয়েছিলেন, আমাদের সমাজবাস্তবতায় পুরুষেরা ঈদের দিন বাড়ির বাইরে থাকলেও তেমন অসুবিধা হয় না, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে কীভাবে তা সম্ভব? নারীর স্বামী, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি, আত্মীয়স্বজন কীভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করেন?

বলা বাহুল্য, প্রথমেই যে সবাই খুব স্বাভাবিকভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করেছিলেন, তা নয়; বরং আমার চাকরি জীবনের শুরুর দিকে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও খুব অবাক হতেন, যখন দেখতেন সন্তানদের ঈদের কাপড় পরিয়ে বাবার কাছে রেখে মা চলে যাচ্ছেন অফিসে। অনেককেই তখন বলতে শুনেছি, ‘এ কেমন অদ্ভুত চাকরি? ঈদেও যার অবকাশ নেই!’

তবে, আমার ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। কারণ, পরিবার এ ক্ষেত্রে আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছে। ঢাকাতেই আমার মায়ের বাসা। ঈদের দিন বাচ্চাদের মায়ের কাছে রেখে অফিসে যেতে পারতাম। আমার শাশুড়ি যত দিন বেঁচে ছিলেন, তিনিও ঈদে-পার্বণে আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। স্বামীও বিষয়টা সহজভাবেই নিয়েছেন। তিনি বরং ওই সময় পরিকল্পনা করেন, ঈদ শেষে পাওয়া ছুটিটা আমরা কীভাবে একসঙ্গে মজা করে কাটাতে পারি তা নিয়ে। আর সন্তানেরা? তারা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বুঝে গেছে, বায়না ধরে লাভ নেই, মাকে তার কর্তব্য পালন করতে যেতেই হবে। ফলে মা-হীন উৎসব উদ্‌যাপনে তারা একরকম অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

এবার বলি অফিসে ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে। অফিস তো এক অর্থে আমাদের পরিবারেরই অংশ। ওই দিন আমরা সহকর্মীরা মিলে খুব হইচই করি। সবাই ঈদের নতুন জামাকাপড় পরে অফিসে আসে। চেষ্টা করে হাতের কাজটা শেষ করে একটু দ্রুত ঘরে ফেরার। জুনিয়ররা সিনিয়রদের সালাম করে ঈদের সেলামি নেওয়ার বায়না ধরে। অফিসে ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়। সব মিলিয়ে অফিসেও থাকে উৎসবের হালকা আমেজ।

শুধু তো সাংবাদিকেরাই নন, আরও কিছু পেশা আছে, যাঁদের ঈদের দিনেও থাকতে হয় কর্মক্ষেত্রে। বিশেষ করে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ট্রাফিক পুলিশ, দমকল বাহিনীর কর্মী বা অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী সংস্থায় কর্মরত অনেকেই ঈদের দিন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটাতে পারেন না। জরুরি সেবার কাজে এটাই রীতি।

ঈদের মতো একটা উৎসবে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থাকতে না পারার জন্য একটু খারাপ লাগা তো থাকেই, পাশাপাশি এসব পেশায় কাজ করা মানুষদের মনে হয়তো সূক্ষ্ম একটা আনন্দ বা তৃপ্তিও থাকে, যখন তাঁরা ভাবেন, আমাদের সামান্য ত্যাগে অনেক মানুষ হয়তো উপকৃত হচ্ছেন-কেউ সেবা পেয়ে, কেউবা প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে।

লেখক: সাংবাদিক