বিতর্ক যাদের ডিএনএতে

এমন অনেক পুরস্কার আছে ঢাকা কলেজের এই তিন বিতার্কিকের ঝুলিতে। ছবি: সংগৃহীত
এমন অনেক পুরস্কার আছে ঢাকা কলেজের এই তিন বিতার্কিকের ঝুলিতে। ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কের জগতে কোনো টুর্নামেন্টে ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি বা ডিসিডিএস বরাবরই ফেবারিট থাকে। এখন চলছে তাদের স্বর্ণযুগ। গত দুই বছরে তাদের দল ‘ডিসিডিএস-ডিএনএ’ই যে জিতেছে মোট ১৪টি ট্রফি। এর মধ্যে সাতটিতে চ্যাম্পিয়ন আর সাতটিতে রানার আপ। স্বর্ণযুগ নয়তো কী?

শাদমান সাকিব, মো. আসিফুর রহমান ও আহনাফ তানজিদ। ডিসিডিএস-ডিএনএর তিন কান্ডারি। তিনজনই ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাদের হাত ধরে ডিসিডিএসের ট্রফি কেসটা দিনকে দিন লম্বা থেকে আরও লম্বা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিতর্ক করে ট্রফি ছিনিয়ে এনেছে তারা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজ, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দলটি জিতেছে এই ট্রফিগুলো।

কলেজে একসঙ্গে বিতর্ক করলেও তিনজন ছিল আলাদা আলাদা স্কুলে। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে পড়ত শাদমান সাকিব, মো. আসিফুর রহমান পড়ত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজে আর আহনাফ তানজিদ ছিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। তিনজনই বিতর্ক করত স্কুলজীবন থেকে। মজার ব্যাপার হলো, তিনজনের মুখোমুখি বিতর্ক করা সুযোগ না হলেও ক্লাবের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সূত্র ধরে একে অপরের ‘ঘোর শত্রু’ ছিল তারা! কে ভেবেছিল, একদিন এই তিনজনকে এক দলের হয়ে বিতর্ক করতে হবে!

প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে সরাসরি সহযোদ্ধা, দলের ‘কেমিস্ট্রি’টা ঠিক হলো কীভাবে? ‘দলের মধ্যে আমরা খুব ঝগড়া করতাম প্রথম প্রথম। ঝগড়া বলতে লজিক বোঝার ধরনটা খুব আলাদা ছিল। ক্লাব সেশনে বিতর্ক করার সময় মনে হয়েছিল এই দল দিয়ে হবে না। সেই তুলনায় একদমই সময় লাগেনি।’ বলল তানজিদ। আসিফও জানাল এই দলটাকে দাঁড় করাতে তাদের খুব একটা অসুবিধা হয়নি। ‘প্রথম টুর্নামেন্টে রানার আপ হয়েছিলাম। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট ছিল ওটা। তখনো আমাদের দলটা থিতু হয়নি। সবার প্রধান লক্ষ্য ছিল নিজেকে সেরা প্রমাণ করা। প্রথম বিতর্কে ডিসিআরসিকে হারিয়ে দিলাম। এরপর সবার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। নিজেরা নিজেরা কো-অপারেট করলাম। তখন আমরা খুবই জুনিয়র। কেউ পাত্তা দিত না। কিন্তু জিততে জিততে ঠিকই ফাইনালে উঠে গেলাম। কেউ বিশ্বাসই করতে পারেনি ব্যাপারটা।’

সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বলে আপাতত বিতর্ক থেকে একটু দূরে আছে এই বিতার্কিকেরা। এইচএসসির পরপরই শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। কার লক্ষ্য কোথায়? জিজ্ঞেস করতেই আসিফ জানাল, সে ভর্তি হতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শাদমানেরও ইচ্ছা তা-ই। তানজিদ একটু মজা করে বলল, ‘আপাতত আমার লক্ষ্য হলো “একটা লক্ষ্য” ঠিক করা।’

তিনজনেরই ইচ্ছা আছে বিতর্ক করার। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, খুব সম্ভবত একসঙ্গে কলেজজীবনের শেষ বিতর্কটা করা হয়ে গেছে। সময় হয়েছে ক্লাবের দায়িত্ব ছোটদের হাতে তুলে দেওয়ার। ছোটরা কি পারবে বড়দের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে? প্রশ্ন শুনে আসিফ উৎসাহী হয়ে জানাল, ছোটদের নিয়ে মোটেই ভাবছে না তারা। ‘আমরা বিতর্ক ছাড়ার আগেই ওরা দুটা ট্রফি জিতেছে। একটায় চ্যাম্পিয়ন আরেকটায় রানারআপ।’ আসিফের কথা শুনে বোঝা গেল বিতর্ক জগতে ডিসিডিএসের দাপট তাহলে আরও বেশ কিছুদিন চলবে।