আমরা হর্ন বাজাই না

সচেতনতার বার্তা নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়েছেন ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’ সংগঠনের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
সচেতনতার বার্তা নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়েছেন ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’ সংগঠনের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

প্যা-প্যা-টি-টিই...। এই শব্দ যেন শহুরে মানুষের কানে সব সময় লেগেই থাকে। থাকবেই না কেন, পথে নামলেই তো যানবাহনের হর্ন বা ভেঁপুর আওয়াজে কান ঝালাপালা! বেশির ভাগ সময়ই যা বাজানো হয় অপ্রয়োজনে। এই যেমন যানজটে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির চালকও অনবরত চেপে যান হর্নের বোতাম।
এমন অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে সচেতন করতে এগিয়ে এসেছেন অনেক মানুষ। তাঁরা নানাভাবে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাঁদের কেউ প্রচার করেছেন স্টিকার, কেউ-বা নেমেছেন হর্নমুক্ত বাংলাদেশের বার্তা নিয়ে।
আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু
গাড়িতে হর্ন রাখা হয়েছে প্রয়োজনেই। তবে সেটা অপ্রয়োজনে যেন না বাজানো হয়, সে বার্তাই পৌঁছে দিতে চাই, আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু। তাঁদের মূলমন্ত্র ‘হর্নমুক্ত বাংলাদেশ, আরও সুস্থ বাংলাদেশ’। এটি ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক উদ্যোগ। এর পেছনের কারিগর এ বি এম নাজমুল হুদা। এমন ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ সম্পর্কে এই চলচ্চিত্রকর্মী বলেন, ‘মানুষ সাধারণত উপদেশ পছন্দ করে না। তাই আমরা কাউকে জোর করে হর্ন বাজানো বন্ধ করার কথা বলি না, শুধু বিনীতভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে চাই, ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’। হর্নের ক্ষতিকর স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে চাই। মানুষ যখন নিজে বুঝবে এটা ক্ষতিকর, তখন সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে।’
হর্নের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর প্রবণতা কমানোর জন্য তিন মাস ধরে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। সম্প্রতি ‘হর্নমুক্ত ঢাকা’ নামে একটি অভিনব কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। ফেসবুকে আহ্বানের পাশাপাশি ৩ অক্টোবর দুপুরে সদস্যরা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায়। এই আন্দোলনে একাত্ম হয়েছিলেন অভিনেতা শাহেদ আলী, সংগীতশিল্পী শেখ সাহেদসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষেরা।
নাজমুল হুদা বলেন, ‘একটি দিন হর্নমুক্ত থাকার এই চেষ্টাটা প্রতীকী। এর মাধ্যমে মানুষকে আমরা বার্তা দিতে চেয়েছি, চাইলে অন্য দিনগুলোতেও হর্নমুক্ত থাকা যায়। আর একটি দিন হর্নমুক্ত থাকার মধ্যে যে স্বস্তি, মানুষ নিজেই সেটা অনুধাবন করুক।’
শুধু কর্মসূচি নয়, তাঁরা সচেতন করতে নানা ধরনের উদ্যোগও নিয়েছেন। তৈরি করেছেন বাড়ির মূল ফটকে ঝুলিয়ে রাখার সচেতনতামূলক নোটিশ। চালক বাড়ির ফটকে এসেই অনবরত হর্ন দিতে থাকেন, যেন দ্রুত খুলে দেওয়া হয়। তাঁরা বলছেন, ‘খুব অসুস্থ কিংবা জরুরি না হলে, গাড়ির কেন হর্ন বাজাবেন?’ সমাধানও বাতলে দিয়েছেন তাঁরা—প্রয়োজনে একটু সময় অপেক্ষা করতে, সময় গড়ালে নিজে নেমে গেট খুলতে কিংবা প্রহরীকে মুঠোফোনে ডাকতে। এই নোটিশের অন্য এক উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানালেন এ বি এম নাজমুল হুদা, ‘এটা কতটা কাজে দেবে জানি না, তবে ওই বাসার শিশুরা নোটিশ দেখে কিন্তু ভাববে, সচেতন হবে। আমরা শিশুদের মাথাতেও এটা ঢুকিয়ে দিতে চাই।’

স্টিকারে প্রতিবাদ
‘আপনার দেওয়া হর্নে, ব্যথা পাই দুই কর্ণে’, ‘ভালো ড্রাইভার হর্ন দেয় না’, ‘বাপ! হর্নে দিস না চাপ’ এমন নানা স্লোগানে ছাপা হয়েছে স্টিকার। সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কার্টুন। অযথা হর্ন না বাজানোর জন্য স্টিকারগুলো তৈরি করেছেন কার্টুনিস্ট মেহেদী হক। ছাপানো স্টিকার এখন বিলি করা হচ্ছে মানুষের হাতে। মেহেদী হক বলেন, ‘অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানো যে ঠিক নয়, সেটাও আমরা জানি না। এ কাজটি আইন করে বন্ধ করা যাবে না, বন্ধ করতে হবে সচেতনতার মাধ্যমেই। কার্টুনিস্ট হিসেবে কার্টুন এঁকেই এ কাজটি করার চেষ্টা করছি।’
প্রথম ধাপে তিনি ২৫ হাজার স্টিকার ছেপেছেন। সারা দেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানালেন মেহেদী হক। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেই এই স্টিকার লাগানোর কাজ করেন, জানালা বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা যুক্ত হয়েছে এ কাজে, আছে প্রথম আলোর কিশোর ম্যাগাজিন কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবক দল। ঢাকার বাইরে শুধু কুরিয়ার খরচ পাঠিয়ে এসব স্টিকার সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ।