আগামীর কূটনীতিকদের মিলনমেলা

ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

আলোচনার বিষয়: বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট। কীভাবে সারা পৃথিবীতেই শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, কারা এর পেছনে দায়ী, কোন দেশ কতটা মানবিকতা দেখাচ্ছে—এ নিয়ে চলছিল তুমুল বিতর্ক। আর বিতর্কের মধ্য দিয়েই সংকটের সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্বকারী কূটনীতিকেরা।
সত্যিকার জাতিসংঘ নয়, বলছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনের কথা। আয়োজন করেছিল ইউনাইটেড নেশনস ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউনিস্যাব) রাজশাহী বিভাগীয় শাখা। চতুর্থবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সম্মেলনকক্ষে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে শরণার্থীদের সম্মান, শিক্ষা ও নিরাপত্তা, শ্রমিকদের অধিকার, সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা, প্লাস্টিকের প্রভাব থেকে সমুদ্রকে রক্ষা করা, বিশ্বব্যাপী অনগদ লেনদেনের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক ও মানবিক লক্ষ্যগুলোর সুষম বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
৬ থেকে ৯ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনে প্রায় ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে আসা ৩০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এটি মূলত জাতিসংঘের অধিবেশনের একটি প্রতীকী উপস্থাপনা। যেখানে শিক্ষার্থীরা হাজির হন একেকজন কূটনীতিকের ভূমিকায়। জাতিসংঘের আদলে আয়োজিত এই সম্মেলনে তাঁরা নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন।
সম্মেলনে ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস কমিটির হয়ে ডেনমার্কের প্রতিনিধিত্ব করেন তাসমিনা আকতার। তিনি বলেন, ‘নতুন অনেক কিছু শিখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নতুন বন্ধুও পেয়েছি। এখানে বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার সময় মনে হচ্ছিল যেন সত্যিই জাতিসংঘের অধিবেশনে বসে আছি।’ সম্মেলনে ডেপুটি ডিরেক্টরের ভূমিকায় ছিলেন জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সংকটের চমকপ্রদ সমাধান খোঁজা শিখলাম। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এ ধরনের চর্চা আমাদের মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন নেপালের উইমেন ফর হিউম্যান রাইটসের সহকারী সমন্বয়ক দিধীতি নিরাওলা। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সম্মেলনগুলো জাতিসংঘে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো হাজারো কূটনীতিবিদ তৈরি করতে অবদান রাখছে। এর মাধ্যমে তরুণেরা জাতিসংঘে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে শিখবে।’
শুধু বৈশ্বিক সংকট, সমস্যা আর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই সম্মেলন। দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শেষে অংশগ্রহণকারীদের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখানো হয়। চলে ফটোসেশন। এরপর সবাই মিলে ফানুস উড়িয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম। উৎসবের তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চতুর্থ দিন শেষে সাধারণ পরিষদে রেজল্যুশন পাস করা হয়। এরপর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার প্রদানের পর সবাই অংশ নেন সমাপনী নৈশভোজে। ছায়া জাতিসংঘের এই উদীয়মান কূটনীতিকেরা একদিন জাতিসংঘের মূল অধিবেশনে যোগ দেবেন, এই আশাবাদ নিয়ে শেষ হয় এবারের সম্মেলন।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান সূর্য”। কিন্তু সে সূর্য উদয় হতে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করছে আপনাদের ওপর।’