মায়েদের ভরসা আছিয়া

আছিয়া বেগম l ছবি: প্রথম আলো
আছিয়া বেগম l ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ২০১৪ সালে স্বাভাবিক প্রসবের ওপর ছয় মাসের সিএসবিএর (কমিউনিটি স্কিল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট) প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষণ তাঁকে আরও সাহসী করে। মায়েদের ভরসার নিরাপদ জায়গা হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর কাজের সীমানা ছাড়িয়ে নিরাপদে সন্তান জন্ম দিতে নানা প্রান্ত থেকে আসতে থাকেন মায়েরা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ ও খলিলপুর ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন অনেক মা।

আছিয়া বেগম বলেন, ‘অনেকের বাবার ও আত্মীয়স্বজনের বাড়ি আমাদের এলাকায়। আমার নাম শুনে সন্তান জন্মের আগে তাঁরা এখানে চলে আসেন। ডেলিভারির সুবিধা নেন। অনেকে আছেন যাঁদের সব বাচ্চার প্রসব করিয়েছি আমি।’

এ ক্ষেত্রে সময়-অসময় নেই। অনেকের কাছেই তাঁর মুঠোফোন নম্বর আছে। রাত দুইটা-তিনটায় ফোন দিলেও ক্লিনিকে চলে আসতে বলেন। বেশির ভাগ প্রসবই হচ্ছে রাতের বেলা। কমিউনিটি ক্লিনিকে যেটুকু সুবিধা আছে তাই কাজে লাগিয়ে তিনি প্রসবের ব্যবস্থা করেন। আগে বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এখন সৌরবিদ্যুৎ এসেছে।

আছিয়া বেগম বলেন, ‘যখন-তখন রোগী আসায় আমি মোটেই বিরক্ত হই না। বরং স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের পর মানুষের আনন্দ দেখে খুশিই হই। মানুষের এত ভালো আচরণ; অনেকে মিষ্টি, অনেকে ফল নিয়ে আসে। অনেকে ২০ টাকা হাতে ধরিয়ে বলে, আপা কিছু খাবেন। মানুষের এই আবেগটুকু আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ইচ্ছা করে রাত-দিন মানুষের সেবা দিই। কারও কাছে আমার কোনো চাওয়াপাওয়া নেই। বরং অনেক রোগী আছে, যাদের বাড়ি ফেরার রিকশা ভাড়া আমাকেই দিতে হয়।’

তাঁর বাবার বাড়ি-স্বামীর বাড়ি দুটোই সাধুহাটিতে। ক্লিনিকের কাছেই। স্বামী মো. মোস্তফা আহমদ ১৩ বছর আগে মারা গেছেন। একমাত্র মেয়েটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। তঁার পৃথিবী এখন মানুষের সেবা ও মেয়েকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা।

তিনি বলেন, কোনো জটিলতা দেখা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করেন। সব ধরনের সহযোগিতা পান। এ ক্ষেত্রে সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হেমন্ত চন্দ্র দাস, ড. হাদী হোসেন, এমএনএইচআইয়ের কর্মকর্তা গোলাম মহীউদ্দিন খান সাদী, বর্তমান সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিনেন্দু ভৌমিক এঁদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা অকপটে বললেন। সবার সহযোগিতায়ই ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সাধুহাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৪৩৬টি শিশুর নিরাপদ  প্রসব হয়েছে। সব শিশু ও মা-ই সুস্থভাবে ঘরে ফিরেছেন। এসবই সব সময় অনুপ্রেরণা দেয় আছিয়া বেগমকে।