দাপুটে মোনালিসা

মোনালিসা বেগম
মোনালিসা বেগম

ঢাকা জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করার সময় কেরানীগঞ্জের এক পরিবারের দুই শিশুসহ চারজনকে একসঙ্গে খুন করা হয়। ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এ ঘটনা ঘটে। সেই মামলা তদন্তের দল গঠন থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত পর্যালোচনা করতে হয়েছে। একপর্যায়ে নিজেই দলবল নিয়ে গেছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালির চরে আসামি ধরতে।

মোনালিসা বলেন, ‘ওই এলাকায় কেবল পানি আর ধু ধু চর। মাথা জাগিয়ে রাখা একটা ছোট্ট চরে একটা বাড়ি। আমরা তিন দিন ধরে কেবল নৌকা নিয়ে এক চর থেকে আরেক চরে ঘুরছি। যেখানেই যাই, শুনি আসামিটা এইমাত্র পালিয়েছে। আসলে সেখানে নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়ার কোনো পথ নেই। আর আসামি নৌকার শব্দ পেয়েই পালিয়ে যায়। তিন দিনে তিন-চার ঘণ্টা করে ঘুমাতে হয়েছে। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হলো। ঢাকায় ফেরার চার ঘণ্টার মধ্যে আবার খবর এল এই আসামি পালিয়ে পাবনার বেড়ায় গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আবারও ছুটতে হলো। এবার আসামি ধরা পড়ল।’

ওই মামলাটার সব আসামিই ধরা পড়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বিচারও হয়েছে। পাঁচ আসামিরই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর ওই আসামিদের সূত্র ধরে আরও দুটি ডাকাতি মামলা উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। ওই চক্রটা ছিল পেশাদার ডাকাত। পরিবারসহ যে লোককে খুন করা হয়, তিনিও ছিলেন ওই ডাকাত চক্রেরই সদস্য। নিজেদের ভাগাভাগির ঝামেলায় ওই হত্যার ঘটনা ঘটে।

অপরাধ আর অপরাধীদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে সংসারে সময় দেওয়া হয় অনেক কম। পাঁচ আর আট বছর বয়সী দুই সন্তানের মা মোনালিসা বেগম। মায়ের ওই রুটিনে ছেলেমেয়ে এবং তাদের বাবাও অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। সবাই মেনে নিয়েছে ভালোভাবে। কেবল ছেলে মাঝে মাঝে অনুযোগ করে। তবে সব মিলে নিজের পুলিশজীবন বেশ উপভোগ করেন। বললেন, এখানে মানুষকে সহায়তা করার অনেক সুযোগ আছে। বিশেষ করে মেয়েদের। মেয়েদের নির্যাতনের ঘটনাগুলো একজন মেয়ে হিসেবে যতখানি অনুভব করা যায়, অন্যদের জন্য সেটা কঠিন।

৫ নভেম্বর যখন মোনালিসা বেগমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তার কিছুক্ষণ আগেই খবর পেয়েছেন, আগের কর্মস্থলের (রমনা বিভাগের) এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামিরা খালাস পেয়ে গেছে। বলছিলেন, ‘পাঁচ বছর আগের ঘটনা। শুকনো-লম্বা মেয়েটার চেহারা এখনো চোখে ভাসে। মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। আসলে সবার হাতে তো সবকিছু থাকে না।’

কিশোরগঞ্জের মেয়ে মোনালিসা বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় মা বলতেন সন্ধ্যার আজানের আগেই বাড়ি আসবি। সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই একটা বিশাল অ্যাডভেঞ্চারের মতো ছিল। এখন তো রাতবিরেতে ঘুরে বেড়াতে হয় কর্মের খাতিরেই। এখন মাকে সেটা বলি মাঝে মাঝে।’