তারুণ্যের মিলনমেলা

উৎসবের মুহূর্ত সেলফিতে ধরে রাখছিলেন এই তরুণের দল। ছবি: জুয়েল শীল
উৎসবের মুহূর্ত সেলফিতে ধরে রাখছিলেন এই তরুণের দল। ছবি: জুয়েল শীল

বিজয়ের এত বছর পরও প্রতিদিন পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদকের খবর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে এই অপশক্তিকে দূর করবে তারুণ্যের শক্তি। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোরিওগ্রাফিতে এভাবেই উঠে এল নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান। কনফিডেন্স সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্য উত্সব ২০১৭-এর পুরো আয়োজনেই ছিল এমন সব চমকপ্রদ পরিবেশনা। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জেলা শিল্পকলা প্রাঙ্গণে বসে এই আনন্দ আয়োজনের আসর। ষষ্ঠবারের মতো এই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিল প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।

দুই দিনব্যাপী উৎসব আয়োজনের মধ্যে ছিল আন্তস্কুল-কলেজ বিতর্ক, আন্তস্কুল আইডিয়া জেনারেশন ও আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। ‘বাংলায় দেখি স্বপ্ন’ বিষয়ের ওপর তারুণ্য উৎসবের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন চট্টগ্রামের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নাচ, গান, অভিনয়সহ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে শিল্পকলার মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন তাঁরা। তাঁদের বিভিন্ন পরিবেশনায় উঠে আসে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়সহ দেশের বিভিন্ন অর্জন, যা মুগ্ধ করেছে হাজারো দর্শককে। এ উৎসবে স্কুল পর্যায়ে বিতর্ক বিভাগে শ্রেষ্ঠ হয়েছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে চট্টগ্রাম কলেজ। এ দুটি প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয় পর্যায়ে সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া আন্তস্কুল আইডিয়া জেনারেশন প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ প্রথম, সিলভার বেলস বালিকা উচ্চবিদ্যালয় দ্বিতীয় ও চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আইডিয়া জেনারেশন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা ‘চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন চিন্তা’ বিষয়ের ওপর নানা ধরনের ভাবনা উপস্থাপন করে। এসব ভাবনার মধ্যে ছিল বাসার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্পাঞ্চলে কার্বন ডাই-অক্সাইড রোধ, বায়ুদূষণ রোধ, নগর পরিকল্পনাসহ নানা কিছু। আর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ হয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া এই প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি দ্বিতীয় এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ তৃতীয় স্থান অর্জন করে।

অনুষ্ঠানে এক শিক্ষার্থীর পরিবেশনা
অনুষ্ঠানে এক শিক্ষার্থীর পরিবেশনা

‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সংস্কৃতিচর্চা উঠে গেছে বললেই চলে। এর মধ্যে বাংলার মানুষ ও সংস্কৃতিকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য প্রথম আলোর এ ধরনের আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। এই আয়োজনে যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তারা আর কিছু না হোক, অন্তত উদার মনের অধিকারী হবে। তাই এ ধরনের আয়োজন আমাদের আশাবাদী করে তোলে।’ বললেন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে থাকা নাট্যব্যক্তিত্ব শুভ্রা বিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাগুলো অনেক দিন মনে রাখার মতো বলে জানান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তপু মণ্ডল। তবে এ আয়োজন নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেল এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থী সামিরা পানাহীকে। তিনি বলেন, ‘এ আয়োজনে আমরা পুরস্কার পাইনি ঠিকই কিন্তু অংশ নিয়ে অর্জন করেছি নানা অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো লেগেছে খুব।’ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জালাল উদ্দীনের মতে, চট্টগ্রামে এ ধরনের আয়োজন আরও হওয়া উচিত। তিনি বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটুকু সংস্কৃতির চর্চা হয়, তা ফুটে ওঠে এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে।

১৯ ডিসেম্বর উৎসবের সমাপনী দিনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যানিমেল ও সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কনফিডেন্স সিমেন্টের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমেদ এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন সিকদার।