জামীর জগৎ

রাদিয়া জামী
রাদিয়া জামী

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর সঙ্গে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। শুরুতেই যদি বলে নিই তাঁর সিজিপিএ-৩.৯৪, আপনি হয়তো ধরেই নেবেন এই শিক্ষার্থী দিন-রাত শুধু পড়াশোনায় বুঁদ হয়ে থাকেন। ভুল। রাদিয়া জামী একটু অন্য রকম। ‘যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন’ প্রবাদের একটা জুতসই উদাহরণ হতে পারেন এই মেধাবী তরুণী। শুনুন জামীর মুখ থেকে, ‘পড়ার বাইরে আমি গান গাই, নাচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটদের নাচ শেখাই। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিই।’ পাঠক, রাদিয়া জামী সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ কি তৈরি হলো? তাহলে চলুন, এবার বিস্তারিত শোনা যাক।

ছোটবেলা থেকেই জামীর নাচের প্রতি ঝোঁক ছিল। ২০০৯-এ তিনি যখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তখন হাতে পান ইন্টারনেটসহ মোবাইল ফোন। সেটা ছিল তাঁর কাছে আলাদিনের চেরাগের মতো। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুরা ফোনে কথা বলত, কেউ গান শুনত। কেউবা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং করা শুরু করে দিয়েছিল সে সময়ই। আমি শুধু গান শুনতাম আর লিরিক মুখস্থ করতাম।’ শুনে শুনেই শিখেছেন তিনি। ইউটিউব হলো জামীর নাচ ও গানের গুরু। বলছিলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে সময় ইউটিউবে নাচের অনুষ্ঠান দেখতাম। আর সেগুলো দেখে নিজে নিজে তোলার চেষ্টা করতাম।’ গানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। পছন্দের শিল্পী মাইকেল জ্যাকসন। প্রিয় ব্যান্ডের তালিকায় আছে অব মনস্টার অ্যান্ড মেন, ইমাজিন ড্রাগনস ও কোল্ডপ্লেসহ আরও বেশ কিছু নাম। তাঁদের গানে অনুপ্রাণিত হয়েই গান শেখা। প্রিয় শিল্পী, প্রিয় ব্যান্ডের গান তিনি মঞ্চে ‘কভার’ করেন। জানালেন, মাইকেল জ্যাকসনের গান এবং নাচ দুটোই তিনি মঞ্চে উপস্থাপন করেন একসঙ্গে।

যাত্রাটা সহজ ছিল না। পড়ালেখার মতো নাচ ও গানের জন্যও তাঁকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। ‘নাচ শিখতে গেলে মিউজিক প্লেয়ারে গান ছেড়ে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হতো। আর প্রতিদিন নিশ্চয়ই এটা কেউ স্বাভাবিকভাবে নেবে না। ফলে বেশ ঝামেলা হতো।’ বলেন জামী। জানালেন, প্রতিদিন নিয়ম করে তিন ঘণ্টা নাচ করতেন একসময়। কটু কথা বা বাঁকা কথা তাঁকে থামাতে পারেনি। চালিয়ে গেছেন। আর থামার সুযোগ নেই। কারণ নিজেই এখন নাচ শেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটদের। ইচ্ছা আছে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাবেন। তবে কি গান-নাচ ছেড়ে দেবেন? ‘না। বাইরে গেলে তো আরও সুবিধা হবে। আরও অনেক কিছু শিখতে পারব।’ বলেন জামী। তিনি ভালো ছাত্রী, গান গাইতে পারেন, নাচতে পারেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয়মুখ।