সুদীপ্তর দীপ্তি

সুদীপ্ত সরকার
সুদীপ্ত সরকার

সুদীপ্ত সরকারের ডাকনামটা খুব সুন্দর। সূর্য! সুদীপ্ত, সূর্য...তাঁর নামজুড়েই আলো ছড়ানোর বার্তা। পড়ালেখা, আবৃত্তি, গান আরও নানা আয়োজনে এরই মধ্যে তাঁর ভেতরের আলো ছড়ানোর ইচ্ছেটা টের পাওয়া যায়। চলুন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের এই ছাত্রের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই।

সুদীপ্ত সরকারের বাবা মানবেন্দ্র সরকার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান, মা শিখা শাহা আছেন গাইনি বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে। সুদীপ্ত বলছিলেন, ‘মা-বাবাকে দেখেই আমার হোয়াইট কোটের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল। সেবার মানসিকতা, ত্যাগ, কষ্টের মধ্যে যে মানুষের জন্য কিছু করার একটা আনন্দ আছে, সেটা আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি।’ তাই তো বন্ধুদের অনেকে যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোথাও ভর্তির জন্য ছুটছিলেন, সুদীপ্তর লক্ষ্য ছিল একটাই—মেডিকেল কলেজ। এখন পড়ালেখার বাইরে আবৃত্তি, গান, কোরিওগ্রাফি, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড—সব ক্ষেত্রেই তিনি সমানভাবে উজ্জ্বল। মেডিকেল কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা, নৃত্যনাট্য এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। ছোটবেলা থেকে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীলতা ও নেতৃত্ব চর্চার মাধ্যমে কীভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়, সেটা সুদীপ্ত জানেন।

ছোটবেলায় বাড়িতে শিক্ষক রেখে গান শিখেছেন। বরিশাল জিলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তবে স্কুলের সীমানা পেরিয়ে বাইরের জগতে ছড়িয়ে পড়তে সুদীপ্তর সময় লাগেনি। বলছিলেন, ‘স্কুলের বাইরের কার্যক্রমগুলোতে আমার অংশগ্রহণ শুরু হয় ডাচ্‌-বাংলা-প্রথম আলো গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে। ২০০৫ সাল, আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সে বছরই প্রথম গণিত উৎসবে অংশ নিই। প্রথমবারেই বরিশাল বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এটাই বোধ হয় আমার জীবনের একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট। ভালো কিছু করার আগ্রহ জেগেছিল এই অর্জনের পর থেকে।’

বটে। যেকোনো ভালো কাজের স্বীকৃতিই তো আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। গণিত উৎসব থেকে প্রেরণা নিয়ে সুদীপ্ত অংশ নিয়েছিলেন এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগে। সুদীপ্ত দীপ্তি ছড়িয়েছেন সেখানেও। নিজের অঞ্চলে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পুরস্কার নিতে নিতে সুদীপ্তর একসময় এসব উৎসবের আয়োজক হওয়ার ইচ্ছে হলো। ২০১০ সালে মাধ্যমিকে ভালো ফলের পর যোগ দেন প্রথম আলো বন্ধুসভায়। ২০১২ সালে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া সুদীপ্ত অংশগ্রহণকারী থেকে আয়োজকের ভূমিকায় উপস্থিত হন। সেই বছরই ভর্তি হন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে।

সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুদীপ্তর পদচারণ মূলত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে। আর সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্র প্রথম আলো বন্ধুসভা। বন্ধুসভার বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন সুদীর্ঘ সময়। বর্তমান কমিটির পাঠচক্র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠক হিসেবে তাঁর পথচলা পূর্ণতা পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএমএসএ) বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। বর্তমানে আইএফএমএসএ বাংলাদেশের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুদীপ্ত। বন্ধুসভা এবং আইএফএমএসএ সুদীপ্তকে আত্মবিশ্বাসী হতে সহযোগিতা করেছে।

ক্যাম্পাসের যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি উৎসব কিংবা সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে আছেন সুদীপ্ত সরকার। একজন ভালো চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি সুদীপ্ত সব সময়ই এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় আলো ছড়িয়ে দিতে যান সারা দেশে।