হ্যালো, ৯৯৯?

যদিও কয়েক দিনে ধর্ষণের খবর পরপর আসছে পত্রিকায়। ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় মোট পাঁচ শিক্ষার্থীর ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

শুধু চলতি বছরেই ধর্ষণের ঘটনা মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি করেছে, তা নয়। শিশুদের নিয়ে কাজ করা ২৬৯টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মোর্চা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের শিশু অধিকার পরিস্থিতি-২০১৭ প্রতিবেদন বলছে, গত বছর ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯৪, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাত্র ৩২টি শিশু ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে, যার বেশির ভাগই ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল বা তারও আগের ঘটনা ছিল।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর, পাঁচ বছর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী শিশু ও নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা শুধু নারী বা শিশু ইস্যু নয়। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আর এর সঙ্গে যৌনতার কোনো সম্পর্ক নেই, এটি হচ্ছে সংস্কৃতির চরম অবমাননার বিষয়। পিতৃতান্ত্রিকতা ও বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও শিশুদের আইনি সহায়তা পেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। তাই হয়তো ৯৯৯-এ ফোন করে যখন সাড়া মেলে, ধরা পড়ে ধর্ষণকারী, তখন অল্প হলেও আশা জাগে মনে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় একই বাড়ির চার নারী ধর্ষণের শিকার হন। তাঁরা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় দুজন ধর্ষণের শিকার হন। দুজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। বাড়িতে ডাকাতির পর ওই নারীদের ধর্ষণ করে ডাকাতেরা। ঘটনার পর পরিবারটি প্রথমে কর্ণফুলী থানায় মামলা করতে যায়। কিন্তু তাঁদের পটিয়া থানায় পাঠানো হয়। এলাকাটি পটিয়া থানার আওতাধীন নয় উল্লেখ করে ভুক্তভোগী নারীদের আবার কর্ণফুলী থানায় যেতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭ ডিসেম্বর কর্ণফুলী থানা মামলাটি নেয়। ওই চার নারীকে ধর্ষণের ঘটনার মামলা নিতে গড়িমসি করায় থানা-পুলিশের আংশিক ব্যর্থতা ছিল বলে ২৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) হারুন উর রশীদ হাযারী।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজে অস্থিরতা, অবক্ষয় বেড়ে গেছে। সর্বক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রতিটি অপরাধে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ কমে যেত। রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে না পারে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কথা সত্য যে, আমাদের আশা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে গরমিল আছে। ৯৯৯ পুলিশের নতুন একটি উদ্যোগ। এ নম্বরে কেউ অভিযোগ করার পর দেখতে হবে পুলিশ কতক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে যেতে পারল। আমি নিজে অনেক সময় গভীর রাতে বিভিন্ন থানায় ফোন করলে থানা থেকে বলে, “স্যার, গাড়ি তো অন্য জায়গায় চলে গেছে।” তাই জনবল, যানবাহনসহ বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্টের ঘাটতির বিষয়টিতে নজর না দিলে ভালো উদ্যোগ থেকেও সুফল পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’

মেয়েরা চাইলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। তবে পিছু টেনে ধরে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। মেয়েরা যদি জানত তারা একা নয়, তাদের পাশে আছে সহযোগী হাত, তবে হাঁটত আরও দৃপ্ত পায়ে। তাই একজন ধর্ষণকারী যখন পুলিশের নতুন উদ্যোগ ৯৯৯-এর ফোন থেকে ধরা পড়ে, তখন মনে হয় এই উদ্যোগ যেন থেমে না।