পরিবেশ রক্ষায় রিসালাত

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় বক্তব্য রাখছেন রিসালাত। ছবি: সংগৃহীত
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় বক্তব্য রাখছেন রিসালাত। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভা। সারা বিশ্ব থেকে প্রায় তিন হাজার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবীসহ গণ্যমান্যজন এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের রিসালাত খান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিসি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন।

কীভাবে এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলল? ই-মেইলে আমাদের প্রশ্নের উত্তরে রিসালাত লিখলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তরুণদের নিয়ে সারা বিশ্বে গ্লোবাল শেপারস কমিউনিটি নামে একটা দল তৈরি করেছে। ৩৭৮টি শহরের প্রায় ৭ হাজার তরুণ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কাজ করছেন। ঢাকায় গ্লোবাল শেপারস কমিউনিটির সঙ্গে আমি আছি ২০১৬ সাল থেকে। প্রতিবছর সারা বিশ্বের শেপারদের মধ্য থেকে বার্ষিক দাভোস সম্মেলনের জন্য কয়েকজন তরুণকে বাছাই করা হয়। এ বছর ৫৮০ জন আবেদন করেছিলেন। ৪০টি দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫২ জন তরুণকে। তাঁদের মধ্যে আমি একজন।’

বাঁ থেকে রিসালাত, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেটের গভর্নর জে ইন্সলি ও  সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর
বাঁ থেকে রিসালাত, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেটের গভর্নর জে ইন্সলি ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর

সম্মেলনে একটি আলোচনা পর্বে অংশ নিয়েছিলেন রিসালাত। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এই আলোচনায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, ভারতের মহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রা, গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মর্গান এবং আক্সা ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী থমাস ব্যুবার্ল। এ ছাড়া বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেটের গভর্নর জে ইন্সলি। নিজের বক্তব্যে রিসালাত বাংলাদেশে জলবায়ুর বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তাঁর ভাষায়, ‘একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি আমার দেশের জলবায়ু পরিস্থিতির কথাই বলেছি। বলেছি যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ তলিয়ে যেতে পারে এ শতাব্দীতেই। এত মানুষ কোথায় যাবে? এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। এ ছাড়া আমি সুন্দরবন রক্ষার পক্ষে কথা বলেছি। এ প্যানেলটি ভারতীয় চ্যানেল এনডিটিভি তে সরাসরি প্রচারিত হয়েছে। তাই আমি রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতের ভূমিকার কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

ঢাকার ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল সম্পন্ন করে রিসালাত স্নাতক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এমহার্স্ট কলেজ থেকে। তাঁর বিষয় ছিল ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, পরিবেশের জন্য কিছু করার ঝোঁক তাঁর মধ্যে সব সময়ই ছিল। ছোটবেলা থেকে বই এর পোকা রিসালাত স্কুল থেকেই বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিতর্কের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন, কীভাবে নিজের যুক্তি সবার সামনে উপস্থাপন করতে হয়। ভবিষ্যতের লক্ষ্য কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁর উত্তর, ‘জলবায়ুবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্দোলনমূলক কাজের সঙ্গেই জড়িত থাকতে চাই, যেন পরবর্তী তিন বছরে আমরা বৈশ্বিক কার্বন উদ্‌গিরণ কমানো শুরু করতে পারি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকর হবে ২০২০ সাল থেকে, তার আগেই সারা পৃথিবীর সব দেশকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাড়াতে হবে। যেন আমরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিরাপদ মাত্রার মধ্যে ধরে রাখতে পারি।’