বিলেতের বেকির বাংলা চ্যানেল জয়

২৮ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরের বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শেষ করার পর বেকি হর্সব্রো। সাঁতরাচ্ছেন বেকি (ইনসেটে)।  ছবি: সংগৃহীত
২৮ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরের বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শেষ করার পর বেকি হর্সব্রো। সাঁতরাচ্ছেন বেকি (ইনসেটে)। ছবি: সংগৃহীত
>
  • পেশায় সাংবাদিক হলেও শখের সাঁতারু বেকি।
  • প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বাংলা চ্যানেল জয় করেছেন।
  • পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সচেতনতা তৈরির জন্য এ কাজ করেছেন।

বাংলাদেশে পানিতে ডুবে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু মারা যায়। খবরটি দেখে আঁতকে উঠেছিলেন বেকি। খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। পেশায় সাংবাদিক হলেও শখের সাঁতারু বেকি। সচেতনতা তৈরিতে তাই সাঁতারই বেছে নিতে চাইলেন। শুরু হলো ওয়েবে খোঁজখবর। সেখানেই বাংলা চ্যানেলের খোঁজ পান। নিজ উদ্যোগে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) হয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের শিশুদের সাঁতার শেখানো।

২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরায় কথা হয় বেকি হর্সব্রোর সঙ্গে। দিনে ৫০ সংখ্যাটা যে কত ভয়ংকর, তা বোঝাতে ব্রিটেনের উদাহরণ টানলেন বেকি। তিনি বললেন, ‘ব্রিটেনে পানিতে ডুবে বছরে ১৫টি শিশুর মৃত্যু হয়। আর এখানে দিনে ৫০ জন! আজ কোনো এক দুর্ঘটনায় যদি সমানসংখ্যক শিশুর মৃত্যু হয়, তাহলে সবাই নড়েচড়ে বসবেন। তবে পানিতে ডুবে মৃত্যু হলে কেন উদাসীন থাকছেন?’

এত শিশুমৃত্যু ঠেকাতে কী করা যেতে পারে? ছোট থেকেই সাঁতার শেখানো সেরা সমাধান বলে মানেন বেকি। বছরখানেক হলো পেশাদার সাঁতার প্রশিক্ষকের সনদ পেয়েছেন। গাজীপুরে শ্রীপুর ভিলেজ নামে একটি সংস্থায় শিশুদের সাঁতার শিখিয়েছেন কয়েক দিন।

১৯৫৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া প্রথম এশীয় ঢাকার ব্রজেন দাস। এর ছয় দশক পর বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন প্রথম কোনো ব্রিটিশ। তবে বেকি মনে করেন, ব্রজেন দাসের তুলনায় তাঁর চ্যালেঞ্জটা অনেক কম। পাড়ি দেওয়া দৈর্ঘ্য কম, জলের বিপদ কম। তবু তিনি আনন্দিত।

ব্রিটিশ সাংবাদিক বেকি হর্সব্রো। ছবি: খালেদ সরকার
ব্রিটিশ সাংবাদিক বেকি হর্সব্রো। ছবি: খালেদ সরকার

২৮ জানুয়ারি সকালে টেকনাফ থেকে ৯টা ২০ মিনিটে সাঁতার শুরু করেন এই ব্রিটিশ সাংবাদিক। একটানা ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সাঁতরে সেন্ট মার্টিনে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। বেকির ধারণা, আরও ঘণ্টাখানেক কম সময়ে পাড়ি দেওয়া যেত। তবে সেদিন বেশ বাতাস ছিল, সমুদ্রে ঢেউ ছিল। একই জায়গায় এক ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হয়েছে। এমন সাঁতারের নিয়ম হলো কোনো অবলম্বন থাকবে না। তবে যেকোনো বিপদে সাহায্যের জন্য পাশে নৌযান থাকবে। প্রতি ৪৫ মিনিট পরপর সেখান থেকে পানির বোতল ছুড়ে দেওয়া হয়। এতে সময় এবং পাড়ি দেওয়া দূরত্ব সম্পর্কেও একটা ধারণা পান সাঁতারু। ‘স্যুইম বাংলা চ্যানেল ২০১৮’ নামে এই অভিযানের আয়োজন করেছিল এভারেস্ট অ্যাকাডেমি।

বেকি বলেন, আমাদের একটা নেটওয়ার্ক আছে। সেখানে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় সাঁতারুদের মধ্যে বাংলা চ্যানেল জনপ্রিয় করে তুলতে চাই।

দুই বেড়ালের সঙ্গে লন্ডনে তাঁর বাস। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। কাজ করছেন মার্কিন সংবাদ সংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের লন্ডন কার্যালয়ে এশিয়া প্রডিউসার হিসেবে।

মূলধারার সাংবাদিকতার সঙ্গে খেলাধুলা সাংবাদিকতায় তাঁর ২৭ বছর হয়ে গেল। এপির আগে কাজ করেছেন বিবিসি, চ্যানেল ফোর নিউজ, স্কাই স্পোর্টস নিউজের হয়ে। বেকি বলেন, সাঁতার আমার জন্য একটা অবলম্বন। সারা দিনের কাজের ক্লান্তি সাঁতারের মাধ্যমে দূর করি।

আগামী সেপ্টেম্বরে আবার বাংলাদেশে আসতে চান বেকি। আবার পাড়ি দিতে চান বাংলা চ্যানেল। তবে একা নন। তিনি চান, সেবার সঙ্গে থাকবেন এক বাঙালি নারী। যিনি বাংলাদেশের নারীদের জন্য রোল মডেল হবেন। জানেন সহজ হবে না, তবু তিনি আশাবাদী।