তরুণ উদ্যোক্তাদের মঞ্চ

ঈশান সাদাসিভানের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সঙ্গে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান
ঈশান সাদাসিভানের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সঙ্গে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান

কলকাতার তরুণ হার্শিত গোহিল। অন্ট্রাপ্রেনার্স অর্গানাইজেশন (ইও) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আয়োজনে উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাঁর ব্যবসায়িক ধারণা। তাঁর মতো আরেক তরুণ উদ্যোক্তা মনীষা হিঙ্গোরান। তাঁর লক্ষ্য ছিল, নিজের দক্ষতা আরও একটু ঝালিয়ে নেওয়া।

অন্ট্রাপ্রেনার্স অর্গানাইজেশন (ইও) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আয়োজনে ৩ দেশের ১৭ জন তরুণ উদ্যোক্তা গ্লোবাল স্টুডেন্ট অন্ট্রাপ্রেনার্স অ্যাওয়ার্ডস নামের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ভারত, ভুটান আর বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা কয়েকটা দিন ঢাকায় একসঙ্গে ছিলেন। একদিকে ছিল নিজেদের ভাবনা উপস্থাপনের সুযোগ, অন্যদিকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলাও একটা ‘সুযোগ’ নয় কি? নিশ্চয়। তাই তো এক বিকেলে তাঁরা দল বেঁধে চলে গিয়েছিলেন ঢাকা আর্ট সামিটে, প্রদর্শনী ঘুরে তাঁরা সমকালীন শিল্পকলা সম্পর্কে জেনেছেন। এই দলের একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) ছাত্র সাকিব মনজুর। বলছিলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় ভিন্নমাত্রা আনতেই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। জানতাম, অন্য দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগে নিজের অভিজ্ঞতাটা বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।’ বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আগামী এপ্রিল মাসে সাকিব কানাডার বিমানে চড়বেন। সেখানেই বসবে এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের আসর।

ভারতের উত্তর প্রদেশের তরুণ উদ্যোক্তা ঈশান সাদাসিভান দক্ষিণ আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি ‘প্রোসক’ নামের একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা। ঈশানের ভাষ্যে, ‘এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি শেখার জন্য।’ ভারতের কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে সামাজিক উদ্যোগ বিষয়ে পিএইচডি করছেন এই তরুণ। উদ্দেশ্যটা শুধু ‘শেখা’ হলেও দিন শেষে তিনি খালি হাতে ফেরেননি। মূল পর্বেও সফলতা ধরে রাখাই এখন তাঁর লক্ষ্য।

বাংলাদেশের তরুণ জাহাঙ্গীর আলম দক্ষিণ এশিয়ার এই সম্মানজনক উদ্যোক্তাবিষয়ক প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হয়েছেন। জাহাঙ্গীর কম খরচে সাধারণ মানুষকে সৌরবিদ্যুৎ সেবা প্রদানের জন্য ‘আলো’ নামের একটি প্রকল্প সাজিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার উদ্যোগকে কীভাবে আরও বড় করা যায়, সে জন্য ব্যবসা দুনিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ পেয়েছি। এই পরামর্শগুলো আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’ বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হওয়া এই তরুণ নিজের উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে চান।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি, বসুন্ধরার জিপি হাউজে আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছে। উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থানকে ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে। এ ধরনের প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দক্ষতাকে সারা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করার এক নিশ্চিত সুযোগ।’ নিজের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন লতিফুর রহমান। অনুষ্ঠানের মূল বক্তা হিসেবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘সব ধরনের বাধা অতিক্রম করেই উদ্যোক্তারা সামনে এগিয়ে যায়। উদ্যোক্তাদের সৃজনশীল ভাবনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন এসেছে। সত্তর ও আশির দশকে যে বাংলাদেশ আমরা দেখেছিলাম, তা এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। তরুণদের উদ্ভাবনী ভাবনা ও উদ্যোগে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ অন্ট্রাপ্রেনার্স অর্গানাইজেশনের সভাপতি খালেদ হোসেন বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে আমাদের এই প্রতিযোগিতা।’ প্রতিযোগিতার কো-চেয়ার জারিন মাহমুদ হোসেন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন প্রসঙ্গে জানান, ‘এ ধরনের প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে বেশ কার্যকর। বাংলাদেশের তরুণদের বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দক্ষতা বিকাশের সুযোগ তৈরির জন্য আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’

গ্লোবাল স্টুডেন্ট অন্ট্রাপ্রেনার্স অ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে অন্ট্রাপ্রেনার্স অর্গানাইজেশন (ইও) কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ বিকাশে উৎসাহ দেয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের অন্তত ছয় মাস ব্যবসা পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাচিত প্রতিযোগীরা আগামী এপ্রিল মাসে কানাডায় জড়ো হবেন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য। সমাপনী পর্বে বিজয়ী উদ্যোক্তা পুরস্কার হিসেবে পাবেন চার লাখ ডলার অর্থাৎ তিন কোটি টাকার বেশি। এই পুরস্কার নিশ্চয়ই তাঁদের উদ্যোগকে আরও সমৃদ্ধ করবে।