পিবিআইয়ের একজন শম্পা ইয়াসমীন

শম্পা ইয়াসমীন। ছবি : দিনার মাহমুদ
শম্পা ইয়াসমীন। ছবি : দিনার মাহমুদ

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ অফিসের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গত দেড় বছরে আলোচিত বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা এবং অনেক মামলার পুনর্তদন্ত হয়েছে। পিবিআই নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন এই তদন্তগুলো সম্পন্ন করেছেন। দেশের ৪০টি জেলায় রয়েছে পিবিআই অফিস। এগুলোর মধ্যে একমাত্র নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে শম্পা ইয়াসমীন নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর থেকে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ তদন্তের কাজ কাজ শুরু করে। আর একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এখানে যোগ দেন তিনি।

শম্পা ইয়াসমীনের বাবা সাংবাদিক ও লেখক অনুপম হায়াৎ। ১৪ ফেব্রুয়ারি পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অফিসে বসে যখন কথা হচ্ছিল তখ শম্পা বললেন, ‘বাবা আমাদের উৎসাহ দিতেন বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য। তাঁর ইচ্ছে ছিল আমি যেন বড় হয়ে সরকারি চাকরি করি। আমার ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হওয়ার কিন্তু কিন্তু সেটি হয়নি। তবে এখন পুলিশে যোগ দিয়ে মানুষের সেবা করতে পারছি, এটাও বড় পাওয়া।’

২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৫ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে শম্পা ইয়াসমীন যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। প্রথম কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ। ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানে (র‍্যাব) দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০১২ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান শম্পা ইয়াসমীন। র‍্যাবে কাজ করার সময় ২০১০-১১ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্য হিসেবে কঙ্গোতে যান। সেখানে পদকও পান শম্পা। ২০১৩ সালে পুলিশ সদর দপ্তরে পিবিআই তদন্ত বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। তখন পিবিআইয়ের অপারেশন কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে ছিলেন। ২০ জেলার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা ছিল তাঁর কাজ। এরপর থেকে আছেন নারায়ণগঞ্জে।

রাজধানীর টিকাটুলী কামরুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৮ সালে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে। এই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন শম্পা। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি।

চাকরি হওয়ার আগে পুলিশ সম্পর্কে একরকম নেতিবাচক ধারণা ছিল শম্পার। ‘তবে পরিবার এবং নিজের ইচ্ছাতেই পুলিশে যোগ দিয়েছি। পুলিশভীতি মানুষের ভেতর থেকে দূর করার ইচ্ছেও ছিল অন্যতম কারণ।’ বললেন শম্পা।

আলাপচারিতায় শম্পা ইয়াসমীন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ অপরাধপ্রবণ এলাকা। এখানে আসার আগে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। তবে নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনের সময় কোনো চাপ অনুভব করিনি। এখানে মূলত না-রাজি ও পুনর্তদন্তের মামলাগুলো সাধারণ তদন্তের জন্য আসে। এসব মামলার বাদী ও সাক্ষীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্র সাক্ষ্য দিতে আসতে চান না। এতে মামলার আলামত নষ্ট হয়ে যায়। আমি চেষ্টা করেছি বাদী ও সাক্ষী উভয়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বোঝাতে। তারপর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করি।’

গত দেড় বছরে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অফিসে ৫৬৭টি কোর্ট পিটিশনের মধ্যে পুনর্তদন্তে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৬০টি মামলা। নারী নির্যাতন মামলা ৯০টির মধ্যে ৭৫টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

শম্পার স্বামী নবিউল্লাহ ফয়সাল একটি অডিট ফার্ম চালান। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে শাহরিয়ার নাবিল পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে, আর মেয়ে নাবিলা ইয়াসমীনের বয়স আড়াই বছর। ব্যস্ত পেশার পাশাপাশি সমানতালে ঘরসংসার সামলাচ্ছেন শম্পা ইয়াসমীন। ‘সুষ্ঠু তদন্তের অঙ্গীকার এই হোক আমাদের অহংকার’ এই স্লোগান বিশ্বাস করে তা বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন শম্পা ইয়াসমীন।