তিসার আলো

আপন মনে গাইছে তিসা দেওয়ান। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
আপন মনে গাইছে তিসা দেওয়ান। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

তাহসানের গানের ভক্ত তিসা দেওয়ান নিজেও গান করে। নিজে গাইল তাহসানের ‘আলো আলো’ গানটি। গত বছরের ৩১ আগস্ট সেটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয় তিসা। ফেসবুকে দিতেই ছড়িয়ে পড়ে গানটি। ভাইরাল হয়ে ১৫ দিনে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বার দেখা হয় গানটি। এর মধ্যে শিল্পী তাহসানও দেখেছেন গানটি। ফেসবুকে নিজের পেজে শেয়ার করেন তিসার সেই গানের ভিডিও। আর রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে গেল রাঙামাটির মেয়ে তিসা দেওয়ান। সবাই প্রশংসা করলেন তার সুরেলা কণ্ঠের।

এখানেই ঘটনার শেষ নয়। গত ২২ নভেম্বর হঠাৎ তিসাদের বাড়িতে উপস্থিত হন শিল্পী তাহসান। কারণ, একটি মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রে শুটিং হবে। যেটিতে তাহসানের সঙ্গে তিসাকেও অংশ নিতে হবে।

মায়ের সঙ্গে তিসা
মায়ের সঙ্গে তিসা

২৩ নভেম্বর রাঙামাটির মারী স্টেডিয়াম, কাপ্তাই লেকসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় শিল্পী তাহসান ও তিসাকে নিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং করা হয়। ৯ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনটি ২৮ জানুয়ারি ফেসবুকে ছাড়া হয়। সেই বিজ্ঞাপনের ভিডিওটি সাড়ে আট লাখ বার দেখা হয়েছে। এরপর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শিল্পী তাহসানের সঙ্গে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ গানটি করে তিসা। সেই গান ১৯ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে এক অনুষ্ঠানেও পরিবেশন করেন দুজন।

রাঙামাটি শহরের সাধারণ এক পরিবারেই জন্ম তিসা দেওয়ানের। স্কুল পেরিয়ে এখন উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছে। তার গানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশেই। পার্বত্য তিন জেলাসহ ঢাকা-চট্টগ্রামের নানা অনুষ্ঠানে তিসার ডাক পড়ে।

কদিন আগে আমরা যাই তিসাদের বাড়ি। রাঙামাটি শহরের মূল কেন্দ্র থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভালেদী পাড়ার কাপ্তাই লেক ঘেঁষে তিসাদের বাড়ি। তিন বোনের মধ্যে তিসা সবার ছোট। দুই বড় বোন বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে মা-বাবার সঙ্গে শুধু তিসাই থাকে। রাঙামাটি সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ছে তিসা।

কথায় কথায় তিসা দেওয়ান বলে, ‘ছোটবেলা থেকে আমার গান শেখার ইচ্ছা ছিল। যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, তখন মা-বাবার অনুমতি নিয়ে হীরা চাকমা স্যারের কাছ থেকে গান শেখা শুরু করি। এরপর নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যাই। সেদিন তেমন কিছু না ভেবে হঠাৎ করেই তাহসান ভাইয়ের “আলো আলো” গানটি ফেসবুকে আপলোড করি। সেই গানে এত মানুষ দেখবে ভাবতে পারিনি। পরের সব ঘটনা তো আমার জন্য আরও বিস্ময়কর।’

২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের কলেজগেট এলাকার সংগীতশিক্ষক হীরা চাকমার কাছে গান শেখা শুরু করে তিসা। ২০১৫ সালে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমিতে চার বছরের সংগীত কোর্সে ভর্তি হয়। এখনো সেখানে গান শিখছে। টিউশনি ও গান গেয়ে যে আয় করেছে, সেই টাকা দিয়ে তিসা কিনেছে গিটার। নিজের গিটার বাজিয়ে এখন গানের চর্চা করে যাচ্ছে।

তিসা দেওয়ান
তিসা দেওয়ান

তিসা গানের জন্য অনেক পরিশ্রম করে। জানালেন তিসা দেওয়ানের মা নিরুপা দেওয়ান। তিনি বললেন, ‘ওর বাবা অসুস্থ। তাই একই সঙ্গে পড়াশোনা, টিউশনি আর গানের চর্চা করে যেতে হয় ওকে। গানের ক্লাস কোনো দিন বাদ দেয়নি তিসা।’ শিল্পকলা একাডেমির গানের শিক্ষক মিলন ধরও এমনটা মনে করেন। বললেন, ‘তিসা দেওয়ান গানের প্রতি খুবই মনোযোগী। খুব সহজে গানের সুর ও তাল বুঝতে পারে। তিসা অনেক বড় শিল্পী হতে পারবে বলেই মনে করি। ’

তিসা দেওয়ানও চায় বড় শিল্পী হতে। গান নিয়েই তার সাধনা।