সিডনির বর্ষসেরা নারী সাবরিন

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী তানিয়া ডেভিস এবং ব্যাংকসটাউনের এমপি তানিয়া মিহাইলুকের সঙ্গে পুরস্কার হাতে সাবরিন ফারুকি (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী তানিয়া ডেভিস এবং ব্যাংকসটাউনের এমপি তানিয়া মিহাইলুকের সঙ্গে পুরস্কার হাতে সাবরিন ফারুকি (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের কষ্টকে অনুভব করেন তিনি। ভাবতেন চারপাশটা যদি আরেকটু সুন্দর করা যেত! ভালোবাসেন ছবি আঁকতেও। থাকেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সেখানে থেকেই চেষ্টা করেন মানুষের জন্য কিছু করতে। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন প্রবাসেই। তিনি বাংলাদেশি নারী সাবরিন ফারুকি। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের সেরা নারীর সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এনএসডব্লিউ বর্ষসেরা নারী পুরস্কার ২০১৮ অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে ‘বর্ষসেরা নারী’ পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয়। সিডনির ব্যাংকসটাউন সংসদীয় এলাকার বহুজাতিক সম্প্রদায় ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নির্বাচকমণ্ডলী সাবরিনকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছে।

সাবরিনের এ অর্জন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সাবরিন বললেন, ‘বাংলাদেশ হোক বা অস্ট্রেলিয়া নারী হিসেবে সমাজে অবদান রাখাটা খুব বেশি সহজ না। তারপরও প্রত্যেকেরই কাজ করা উচিত। অন্তত একটি সুন্দর আগামীর জন্য।’

সাবরিন ফারুকির জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। মা মোমতাজ বেগম ও বাবা সরদার এম এ কুদ্দুসের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাবরিন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে। এরপর উচ্চশিক্ষা নিতে ২০০৪ সালে সিডনি পাড়ি জমান সাবরিন। সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে দ্বিতীয়বারের মতো স্নাতকোত্তর পাস করেন। ২০১০ সালে ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন সাবরিন।

‘শিক্ষা হোক মানসম্মত’ এটা বিশ্বাস করেন সাবরিন ফারুকি। আর তাই সাবরিনার পিএইচডির অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে। এই গবেষণার জন্য সেরা গবেষণা শিক্ষার্থীর পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর লেখা একাধিক গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং কিছু সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের কথা বলা হয়েছে। 

সাবরিন বললেন, ‘বাংলাদেশে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে সুবিধাবঞ্চিত অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে জীবনে পিছিয়ে পড়ে। এটি আমাকে কষ্ট দিত। এই বৈষম্য দূর করতে কাজ করছি।’ পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সিডনিতে আসা প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের ইংরেজি শেখাচ্ছেন তিনি। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ যেমন আছে, তেমনি আছে অন্য দেশেরও।

 সাবরিন সিডনি ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে প্রায় চার বছর কাজ করেছেন। স্বামী খুরশিদ রেজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এখন সিডনির একটি প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। এই দম্পতির এক ছেলে আরীবের বয়স সাত বছর।

সাবরিন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সরকারের ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশনের উপদেষ্টা। চাকরি ও পরিবারের দেখাশোনা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণ সংস্থা ও বাঙালি কমিউনিটি সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তাঁর পরিবার গড়ে উঠেছিল পরবাসেই। তবুও ভুলে যাননি জন্মভূমির জন্য কিছু করার স্বপ্নের কথা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য অলাভজনক সংগঠন ‘সিতারাস স্টোরি’-র সঙ্গে কাজ করছেন সাবরিন ফারুকি। মেয়েশিশুদের সুস্থ মানসিকতায় বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে কাজ করছে তারা।

২০১৫ সালে যোগ দেন রাজনৈতিক দল অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টিতে। দলের হয়ে নিজ পেশার বাইরে অস্ট্রেলিয়ায় আসা শরনার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবরিন ফারুকি। শরনার্থীদের কর্মসংস্থান তৈরি করার কাজও করছেন। সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্যও কিছু সংগঠনে কাজ করেন সাবরিন ফারুকি। ‘বাংলা হাব’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সিডনিতে আয়োজন করেছেন বাংলা শিল্পকলা প্রদর্শনীর। উদ্দেশ্য, অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী শিল্পীদের কাজ দেশটিতে তুলে ধরা।

সাবরিন ফারুকি তাঁর পরিচিতি পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার রাজনীতিকদের কাছে। প্রিয়ভাজন হয়েছেন ব্যাংকসটাউনের এমপি তানিয়া মিহাইলুকের। সাবরিনের অর্জন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে সিডনির প্রবাসী বাঙালি নারীদের।